তবু রাষ্ট্রপতি হতে পারছেন না সু চি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বহু প্রতিক্ষিত নির্বাচন শেষ হলো। ফলও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। মায়ানমারে নতুন ইতিহাস গড়েছেন নাগরিকরা। বিরোধী নেত্রী আং সান সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টি (এনএলডি) দেশের সংসদের ৬৬৪টি আসনের মধ্যে ৩৯০টিতে জিতেছে। শুধু বিপুল আসনে জয়-ই নয়, দেশের সাতটি জাতি-গোষ্ঠী-অধ্যুসিত রাজ্যেরও নব্বই শতাংশ আসন এনএলডি-র ঝুলিতে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। বিপুল জয় পেলেও সু টি রাষ্ট্রপতি হতে পারছেন না সাংবিধানিক কিছু কারণে।
ভোটে বিপুল জয় পেলেও সু চি দেশের প্রসাসনিক শীর্ষ পদে বসতে পারবেন না। কারণ, জান্তা সরকারের আমলে দেশের যে নতুন সংবিধান রচনা হয়েছে। এই সংবিদানই তার জন্য বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ এই সংবিধানের পাতায় লেখা আছে, এমন কেউ দেশের রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না যার কোনও নিকট-আত্মীয় বিদেশি নাগরিক। সু চি-র দুই ছেলেই ব্রিটিশ পাসপোর্ট-ধারী। তা ছাড়া, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে বড় বাধা দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এনএলডি সরকারের কার্যত কোনও ভূমিকাই থাকবে না। কারণ, সংসদের মোট আসনের ২৫ শতাংশ সেনা বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত এবং প্রতিরক্ষা, সীমান্ত সুরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়োগ থাকবে ওই ২৫ শতাংশ সংরক্ষিত সেনা প্রতিনিধিদের হাতেই। তাই, সংবিধান সংশোধন না করা পর্যন্ত যথেষ্ট গরিষ্ঠতা থাকলেও সু চি-র পক্ষে দেশে যথার্থ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক চাপে মায়ানমারের ফৌজি-প্রভাবিত সরকার ২০১১ সাল থেকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে সংস্কার করা শুরু করে। এই সংস্কারের-ই অঙ্গ হিসেবে প্রথমেই গৃহবন্দি বিরোধী নেত্রী সু চি-কে মুক্তি দেয় সরকার। শ্রম আইন সংশোধন করা হয়। নতুন শ্রম আইনে শ্রমিকদের ইউনিয়ন এবং ধর্মঘট করার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে মানবাধিকার কমিশনও। শিথিল করা হয় সংবাদ নিয়ন্ত্রণও। এই সবের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ কায়েম করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে এই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিরোধী দল সু চি-র এনএলডি-ও দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে ২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই উপ-নির্বাচনে সু চি বিপুল ভোটে জয়ী হন। বিশাল সাফল্য পায় তার দল এনএলডি-ও। মোট ৪৪টি আসনের মধ্যে ৪১টি-ই এনএলডি-র দখলে আসে। এই সব ঘটনার দিকে চোখ রাখলে মনে হতে পারে ফৌজি-প্রভাবিত সরকার মায়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বাস্তবে কিন্তু মায়ানমারের পরিস্থিতি গণতন্ত্রের পক্ষে খুব একটা স্বস্তিকর নয়। সু চি-কে মুক্তি দিলেও অন্যান্য রাজবন্দিদের মুক্তি দেয়নি সরকার। দেশের নানা প্রান্তে সশস্ত্র জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে সেনা বাহিনীর সংঘর্ষও অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে, শুধু ভারত বা চীনের মত বড় প্রতিবেশী-ই নয়, মায়ানমারের সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্বই।
নভেম্বর মাসে সেই কাঙ্খিত নির্বাচন হল। বিপুল ভাবে জয়ী হলেন সু চি এবং তার দল এনএলডি। কিন্তু, সেনা প্রভাবিত সরকারের সংশোধিত সংবিধান সু চি-র রাষ্ট্রপতি হওয়ায় বাধ সেধেছে। মায়ানমার বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সাময়িক ভাবে দলের অন্য কোনও নেতাকে রাষ্ট্রপতি করুন সু চি। তারপর সেই রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সংবিধানকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হোক। তা হলেই সু চি-র রাষ্ট্রপতি হওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু, বিষয়টা কি এতটাই সহজ? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মায়ানমারের আকাশে।
১০ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই