আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দিনভর টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে ছিল সবাই। পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন কখন ফিরছেন- এ প্রশ্নই ছিল তাদের। সকালে জানা যায়; দুপুরে, আবার দুপুরে জানা যায় বিকেলে, বিকেল গড়িয়ে হয় সন্ধ্যা। তবে অভিনন্দন দেশে ফিরলেন রাতে।
গত বুধবার সকালে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের ৭ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করার পর ভূপাতিত হওয়া বিমান থেকে প্যারাসুট দিয়ে নেমে পাকিস্তান সেনাদের হাতে আটক অভিনন্দনকে শুক্রবার রাতে ওয়াঘা-আতরি সীমান্ত দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।
কেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের ফিরতে দেরি হলো একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে তা নিযে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
কখন ফিরবেন অভিনন্দন? দিনভর এই একটা প্রশ্ন ঘিরেই যাবতীয় ধোঁয়াশা আর উৎকণ্ঠা। সরকারি সূত্রের খবর, পাকিস্তানই অভিনন্দনকে হস্তান্তরের সময় দু’বার বদল করে।
প্রথমে জানানো হয়, কাগজপত্র তৈরি হয়নি। রাওয়ালপিন্ডি থেকে বিমানে লাহৌর, তার পর গাড়িতে ওয়াঘার কাছে পাক সেনার একটি ব্যারাকে তাকে এনে রাখা হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, বরাবরের মতোই পাকিস্তান শেষ মুহূর্তে টালবাহানা করছিল। তবে কোনও দর কষাকষির চেষ্টা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে বায়ুসেনার কর্তারা মুখ খুলতে চাননি।
ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার ঠিক আগে অভিনন্দনের একটি ভিডিও-বিবৃতি প্রকাশ করে পাকিস্তান। মিনিট দেড়েকের ওই ভিডিও দেখে নয়াদিল্লির কূটনীতিকরা বলছেন, অভিনন্দনকে চাপ দিয়ে ওই বিবৃতি রেকর্ড করানো হয়েছে। কারণ ভিডিওটিতে অন্তত ১৮টি ‘এডিটিং’ রয়েছে। সেখানে অভিনন্দনকে দিয়ে বলানো হয়েছে, তিনি যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে ‘টার্গেট’ খুঁজছিলেন। পাকিস্তানি বায়ুসেনা তার বিমানকে নামায়। তার হাতে পিস্তল ছিল।
উরি-র সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে তৈরি ছবির সেনা অফিসারের ধাঁচে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইদানিং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রশ্ন করছেন, ‘হাউ ইজ় দ্য জোশ?’ ওই বিবৃতিতে অভিনন্দনকে বলতে শোনা গেছে, তাকে যে সব পাকিস্তানিরা ধরে ফেলেন, তাদের জোশ তুঙ্গে ছিল। কিন্তু পাক জওয়ানরা তাকে বাঁচান। পাকিস্তানি সেনারও ঢালাও প্রশংসা করেছেন অভিনন্দন। একই সঙ্গে ‘বাড়াবাড়ি’র জন্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কড়া সমালোচনা করেছেন। দিল্লির মতে, জোর করে বলানো না-হলে অভিনন্দনের পক্ষে এই সব মন্তব্য অস্বাভাবিক।
অনেকের সন্দেহ, এই বিবৃতি রেকর্ড করানোর জন্যই হয়তো অভিনন্দনকে ফেরাতে এত দেরি করল পাকিস্তান। কারণ, তাকে নিয়ে পাক নৌসেনা-পুলিশের কনভয় ওয়াঘায় পৌঁছেছিল বিকেল সওয়া ৪টায়। তারও আগে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনের অফিসারেরা। পাক সেনা সূত্রের যদিও দাবি, ডাক্তারি পরীক্ষা-সহ পদ্ধতিগত বিভিন্ন ধাপ পেরোতেই এতটা সময় লেগেছে।
পাইলটকে অভ্যর্থনা জানাতে দিল্লি থেকে ওয়াঘায় পাঠানো হয়েছিল বায়ুসেনার দুই এয়ার ভাইস মার্শাল, আর জি কে কাপুর এবং এস প্রভাকরণকে। কাপুর পরে বলেন, ‘সমস্ত প্রক্রিয়া মেনে অভিনন্দনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’