সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯, ০১:২৮:৩২

চার্লি চেকপয়েন্টে মুখোমুখি দুই দেশের কামান, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগল বলে

চার্লি চেকপয়েন্টে মুখোমুখি দুই দেশের কামান, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগল বলে

সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : দেশ জুড়ে আজ যুদ্ধের আবহ। পুলওয়ামায় পাক জঙ্গিরা হামলা চালাতেই ভারতের পালটা মার এয়ার স্ট্রাইকে। দুই দেশের লড়াইকে ঘিরে বিশ্বকূটনীতির মঞ্চেও চলছে লড়াই। রয়েছে বিশ্বের ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই। যুদ্ধ হোক বা না হোক, একটা গরম পরিস্থিতি চলছে। সেদিনের সেই ১৮ ঘণ্টাও ছিল এমনই! প্রবল সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছিল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

ঘটনাস্থল চার্লি চেকপয়েন্ট। বার্লিন ওয়ালই ছিল দুই জার্মানির যোগাযোগের অন্যতম পথ ছিলো এটি। এখানেই লেগে যেতে পারত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৬১, ২২ অক্টোবর বার্লিন ওয়াল নির্মান হয়েছে সবে মাস দুয়েক হয়েছে। সেই সময়েই ঘটেছিল এই ঘটনা। পূর্ব জার্মানি থেকে পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়া ছিল একপ্রকার নিষিদ্ধ। একই অবস্থা ছিল পশ্চিম থেকে পূর্বে আসার ক্ষেত্রেও। এমন এক সময়েই উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে।

বার্লিনকে ঘিরে যে চার-শক্তির সংকট (সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স, আমেরিকা ও ব্রিটেন) সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধানকল্পে পূর্ব জার্মানির সঙ্গে পৃথক শান্তি চুক্তি সই করতে হবে। এই ছিল সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভের দাবি। জানা যায়, সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিম থেকে কম্যুনিস্ট পূর্বকে রক্ষার জন্য এই চুক্তির দাবি জানিয়েছিল নিকিতা ক্রুশ্চেভের সোভিয়েত সরকার। এদিকে সমস্যা ছিল অন্যদিকে। এই চুক্তি সই করলেই আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পশ্চিম জার্মানিতে প্রবেশ বন্ধ হয়ে যেত। তাই তারা এই চুক্তি করতে চাইছিল না। অন্যদিকে চুক্তি সইয়ের জন্য ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ক্রুশ্চেভ। বিশ্বের ইতিহাসে এটি বার্লিন সংকট নামে পরিচিত। এমন সমস্যার মাঝেই একপ্রকার জোর করে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়ার চেষ্টা করে আমেরিকা। একপ্রকার ঠাণ্ডা লড়াইকেই হঠাৎ গরম করে দেয় মার্কিনদের দেওয়ালের ওপারে যাওয়ার চেষ্টা।

পশ্চিম জার্মানিতে আমেরিকার চিফ অব মিশন এলান লাইটনার থিয়েটার দেখার কারণ দেখিয়ে পূ্র্ব জার্মানির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

যদিও বিদেশি দূত বা কর্মকর্তাদের জন্য নিয়ম শিথিল ছিল, তবুও লাইটনারকে আটকে দেওয়া হয় চার্লি চেক পয়েন্টে। লাইটনার ফিরে যান। মার্কিন সরকার বিষয়টা ভালোভাবে নেয়নি। মার্কিন সরকার তাঁদের আরও এক ডিপ্লোম্যাট অ্যালবার্ট হেমসিংকে চার্লি পয়েন্টে পাঠিয়ে দেয়। তাকেও বাধা দেওয়া হয়। তবে হেমসিং ফিরে না এসে মার্কিন পুলিশের বিশাল বহর নিয়ে পূর্ব জার্মানিতে যান আবার একইভাবে ফিরে আসে। সোভিয়েত বর্ডার মিলিটারি স্বভাবতই ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছিল। আর সোভিয়েত বর্ডার কমান্ডার সোলোভিয়েভ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন ফের এমন করলে অন্য ব্যবস্থা নিয়ে বাধ্য হবেন তাঁরা। এইসব হুঁশিয়ারিকে উড়িয়ে দিয়ে ২৭ অক্টোবর একপ্রকার ইচ্ছা করে হেমসিং ফের এসকর্টেড হয়ে ঢুকতে যান পূর্ব জার্মানিতে।

আগুনে ঘি’ পড়ল। কোনও কথাবার্তায় না গিয়ে সোভিয়েত মিলিটারি ৩৩ টি ট্যাংক পাঠিয়ে দেয় চার্লি চেক পয়েন্টে। এর মধ্যে দশটি টি-৫৫ ট্যাংক এসে দাঁড়ায় চার্লি পয়েন্টের একদম সামনে। আমেরিকাও চেকপয়েন্ট থেকে মাত্র পঞ্চাশ মিটার দূরে দশটি ট্যাংক এনে হাজির করে। ফায়ার হলেই ব্যাক ফায়ার হবে। কেউ কামান দাগলেই লাগবেই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’।

টান টান উত্তেজনা। একটা বুলেট ফায়ার হলেও সেদিন কারও ক্ষমতা ছিল না যুদ্ধ থামাবার। তবে সবার উপরে যে মন্ত্রীরা রয়েছেন। সেখান থেকে সবুজ সিগন্যাল না এলে কেউই কিছু করতে পারবে না। মার্কিন এবং সোভিয়েত মিলিটারি অফিসাররা যোগাযোগ করে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে নিকিতা ক্রুশ্চেভের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়।

বিশ্বের জন্য সৌভাগ্য। দুই দেশের সরকার স্ট্যান্ড অফ থেকে সরে আসতে সম্মত হয়। প্রথমে সোভিয়েতের একটি ট্যাঙ্ক সরে আসে দেখাদেখি সরে আসে একটি আমেরিকান ট্যাঙ্কও। এভাবে একে একে দুই দেশের সব ট্যাঙ্ক সৈন্য সমেত পিছিয়ে আসে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ সম্ভাবনা শেষ হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, “It’s not a very nice solution, but a wall is a hell of a lot better than a war.”, অর্থাৎ দেওয়াল থাকলে থাক , কিন্তু যুদ্ধ মোটেই সঠিক উপায় নেয়। ৩০ বছর ছিল এই বার্লিন ওয়াল। বাকি ইতিহাস ‘বার্লিন ওয়ালের পতন’।
সূত্র: কলকাতা২৪×৭

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে