সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯, ০৭:২৫:২৩

ভারতে রোজার মাসে ভোট? মুসলিমদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস

ভারতে রোজার মাসে ভোট? মুসলিমদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র দেখছে তৃণমূল কংগ্রেস

নিউজ ডেস্ক : ভারতে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে কয়েকটি রাজ্যে মুসলিমরা যাতে ভোট না-দিতে পারেন, সে কারণেই রোজার মাসে ভোট ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস।

‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ্য করে দলের মুখপাত্র ও কলকাতা শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, মুসলিম-অধ্যুষিত বিহার, উত্তরপ্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা হয়েছে - যাতে ওই সব রাজ্যের মুসলিমদের ভোট থেকে দূরে রাখা যায়।

তবে বিজেপি বলছে, সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য নিয়েই এই সব ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে- এবং দেশের মুসলিম নেতারাও অনেকেই তৃণমূলের অভিযোগকে আমল দিচ্ছেন না। ভারতের আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে এবার ভোট হবে নজিরবিহীন সাত দফায় - অর্থাৎ সারা দেশে যে সাতদিন ধরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার প্রতি দিনই রাজ্যের একাধিক আসনে ভোটগ্রহণ চলবে।

এর মধ্যে শেষ তিন দফার ভোটগ্রহণ হবে রমজান মাসের ভেতর - মে মাসের ৬, ১২ আর ১৯ তারিখে। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি, ২৪টিতে ভোট হবে এই তিনদিনে - আর তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে মুসলিমদের ভোটের বুথ থেকে দূরে রাখতেই এভাবে নির্বাচনী তফসিল স্থির করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিহার ও উত্তরপ্রদেশের দৃষ্টান্ত দিয়ে তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলছেন, "এর প্রতিবাদ বাংলার মানুষ ব্যালট দিয়েই করবেন। বিজেপিও বুঝতে পারবে কত ধানে কত চাল!"

"আজকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সাত দফায় নির্বাচন করানোর অর্থ হচ্ছে: রমজানের মধ্যে ভোট করাও - যাতে সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা ভোট দিতে না-পারে। কিন্তু সে গুড়ে বালি, সবাই মিলে ভোট দেবে!" - বলেন মেয়র হাকিম।

তৃণমূল কংগ্রেস আরও মনে করছে, ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস আছে গুজরাটের মতো যে সব রাজ্যে - সেখানে যদি মাত্র একদিনে ভোট করানো যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে সাতদিন ধরে ভোট করানোর বা ভোট প্রক্রিয়াকে রমজান মাস পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার কোনও যুক্তিই থাকতে পারে না।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রথম সারির নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি অবশ্য  বলছিলেন, রমজানের দোহাই দিয়ে তৃণমূল আসলে একটা সাম্প্রদায়িক তাস খেলতে চাইছে। তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ আসলে অন্য। ওরা যে রোজার কথা বলছেন - আসলে যারা রোজা রাখেন তারা কিন্তু সে সময় রোজা রেখেই দৈনন্দিন জীবনের বাদবাকি সব কাজ করে থাকেন। কাজেই ভোট দিতে তাদের সমস্যা কেন হবে?"

লকেট চ্যাটার্জী বলেন, "আর দ্বিতীয় কথা হল, পশ্চিমবঙ্গে যে সাত দফায় ভোট করাতে হচ্ছে সেটাই বলে দিচ্ছে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেছে। রাজ্যে যত বেশি দফায় ভোট হবে, আসলে তত বেশি নিরাপত্তাবাহিনী বিভিন্ন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যাবে - আর মানুষ ভরসা করে ভোট দিতে বেরোবেন।"

বিজেপি নেত্রী বলেন, মানুষ বেশি করে ভোট দেবে বুঝেই তৃণমূল আসলে ভয় পেয়েছে - আর তাই রোজার কথা বলে তারা সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করতে চাইছে।"

কিন্তু সত্যিই কি রমজান বা ওই জাতীয় কোনও ধর্মীয় উপলক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে? পশ্চিমবঙ্গের সাবেক প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা মীরা পান্ডে কিন্তু তা মনে করেন না। 

বরং তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সাম্প্রতিক অতীতেও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রোজার মাসে ভোট করানোর দৃষ্টান্ত আছে। তিনি বলছিলেন, রোজার মাসে ভোট হলে 'সেরকম কোনও মুশকিল হওয়ার' কথা নয়।

তিনি বলেন, "আপনাদের হয়তো মনে আছে ২০১৩ সালে এই রাজ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল রমজান মাসের সময়। কিন্তু তখন তো তেমন কিছু সমস্যা হয়নি? যারা রোজা রাখছেন তাদের হয়তো ব্যক্তিগতভাবে একটু সমস্যা হতে পারে, কিন্তু সেটা এমন কোনও অসুবিধা নয় যা কিছুতেই দূর করা যাবে না।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক আমলা হিসেবে মিস পান্ডের অভিজ্ঞতা বলছে, রোজার জন্য মুসলিমদের ভোট দিতে মারাত্মক কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয় - এবং কমিশনের পক্ষেও সব ধর্মীয় উপলক্ষকে এড়িয়ে তফসিল স্থির করা সম্ভব নয়।

হায়দ্রাবাদের এমপি ও এমআইএম দলের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও এদিন তৃণমূলের সমালোচনা করে বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রমজানের প্রসঙ্গ টানা একেবারেই সমীচীন হয়নি। তার ধারণা রোজার মাসে মুসলিমদের অন্যান্য জাগতিক কাজকর্ম তুলনায় কম থাকায় তাদের ভোটদানের হার বাড়বে বৈ কমবে না!

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে