বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯, ০৭:৫১:৪৪

মহাকাশের মহাশক্তি ভারত; ঘোষণা মোদির, আক্রমণে বিরোধিরা

মহাকাশের মহাশক্তি ভারত; ঘোষণা মোদির, আক্রমণে বিরোধিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রতিরক্ষা তথা মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত কর্মসূচিতে নতুন মর্যাদায় উত্তরণ ঘটল ভারতের। এবং ভোটের মুখে ততোধিক কৌতূহলের জন্ম দিয়ে সে কথা ঘোষণা করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বা অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলের সফল পরীক্ষা করেছে ভারত বুধবার। এ-স্যাট নামের ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মহাকাশে ভাসমান একটি কৃত্রিম উপগ্রহকে ভারত এ দিন ধ্বংস করেছে। দেশের এই সাফল্যের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করার জন্যই প্রধানমন্ত্রী মোদি এ দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। 

সংক্ষিপ্ত ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘ভারত আজ অন্তরীক্ষ মহাশক্তি হিসেবে নিজের নাম নথিবদ্ধ করিয়ে নিয়েছে। এত দিন আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনের এই সক্ষমতা ছিল। এ বার ভারত হয়ে উঠল চতুর্থ দেশ, যারা এই সক্ষমতায় পৌঁছাল। প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য এর চেয়ে গর্বের মুহূর্ত আর কিছু হতে পারে না।’

দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (ডিআরডিও) এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হেনেছে যে উপগ্রহে, সেটিও ভারতীয় উপগ্রহ। লোয়ার অর্বিটে ভ্রাম্যমান উপগ্রহটির কার্যকাল আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।

বুধবার সকালে এ-স্যাটের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সেই মেয়াদ ফুরনো উপগ্রহকে ধ্বংস করা এবং প্রতিরক্ষা তথা মহাকাশ কর্মসূচিতে নতুন মাইল ফলকে পৌঁছনোর কাজ একসঙ্গে সেরে ফেলল ভারত। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মিশন শক্তি’। 

অভিযানের সাফল্যের জন্য ডিআরডিও-কে এবং প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেছেন, ‘সর্বাগ্রে আমি ডিআরডিও-র বিজ্ঞানী, গবেষক এবং সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মীদের অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই অসাধারণ সাফল্য তারাই এনেছেন। আজ আবার তারা দেশের মান বাড়িয়েছেন। আমাদের বিজ্ঞানীদের জন্য আমরা গর্বিত।’

ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণের মুহূর্ত থেকে শুরু করে মহাকাশে ভাসমান উপগ্রহটি ধ্বংস হওয়া— গোটা প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে তিন মিনিট। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘মিশন শক্তি অত্যন্ত কঠিন অভিযান ছিল, যাতে খুবই উচ্চমানের প্রকৌশলগত সক্ষমতা জরুরি ছিল। বিজ্ঞানীরা সব নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সিদ্ধ করেছেন।’

দেশ জুড়ে দাবানলের মতো ছড়ায় তার টুইটটির খবর। ১১টা ৪৫-এর মধ্যেই টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখতে শুরু করে প্রায় গোটা দেশ। তবে মোদি ১২টার মধ্যে ভাষণ শুরু করেননি। সাড়ে ১২টার সামান্য আগে তিনি ভাষণ শুরু করেন। সংক্ষিপ্ত ভাষণে ভারতের এই ‘অভূতপূর্ব’ সাফল্যের কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে জানান।

মোদি ঠিক কী বলতে পারেন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে— অপেক্ষা পর্বে তা নিয়ে নানা রকম জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বিশেষজ্ঞ মহল দাবি করছিল, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে বা সন্ত্রাস বিরোধী কোনও পদক্ষেপ নিয়ে মোদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে পারেন। কারণ এ দিন সকালে ক্যাবিনেট বৈঠকে বসেছিলেন মোদি।

সে বৈঠকে হাজির ছিলেন নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির সদস্যরাও। সেই কারণেই ওই জল্পনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যে, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বা সন্ত্রাস বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে না হলেও, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই নরেন্দ্র মোদি ভাষণ দিলেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণে আন্তর্জাতিক মহলের জন্যও বার্তা ছিল এ দিন। তিনি বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক মহলকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমাদের এই সক্ষমতা অন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নয়, এটা পুরোপুরি দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ।’

মোদি আরও বলেন, ‘আমরা মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে। এই পরীক্ষা কোনও আন্তর্জাতিক আইন বা চুক্তিকে লঙ্ঘন করছে না।’

মোদির ভাষণ শেষ হতেই আন্তর্জাতিক মহলকে বার্তা দিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ যে শুধুমাত্র ভারতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যই করা হল, সে কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে বিবৃতিতে।

রাজনৈতিক শিবিরের প্রতিক্রিয়ায় অবশ্য শ্লেষ রয়েছে। ভারতের এই সাফল্যকে একবাক্যে অভিনন্দন জানিয়েছে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। কিন্তু এই সাফল্যের ঘোষণা যে ভাবে করা হল, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেছেন অনেকেই। কেউ সরাসরি, কেউ একটু আবডাল রেখে।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘খুব ভাল কাজ ডিআরডিও, আপনাদের কাজে অত্যন্ত গর্বিত।’ কিন্তু তাতেই রাহুল থামেননি। তার সংযোজন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জানাতে চাইব বিশ্ব থিয়েটার দিবসের।’

ডিআরডিও-র সাফল্যের ঘোষণাটা করলেন প্রধানমন্ত্রী। সাফল্যের জন্য ডিআরডিও-কে অভিনন্দন জানালেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রীকেও রাহুল শুভেচ্ছা জানালেন, কিন্তু এই সাফল্যের জন্য নয়, বিশ্ব থিয়েটার দিবসের জন্য। এর মধ্যে যে শ্লেষ রয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি দেশের রাজনৈতিক শিবিরের।

তবে তৃণমূল চেয়ারপার্সন তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণ আরও খোলাখুলি। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীদের নিয়ে আমরা সব সময়ই গর্বিত।’’ কিন্তু তার সঙ্গে মমতা লিখেছেন যে, ‘মোদি যথারীতি সব কিছুর কৃতিত্ব নিজে নিতে চান।’

মমতার দাবি, নরেন্দ্র মোদি আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণকে ‘সীমাহীন নাটক এবং প্রচারমুখীনতা’ বলে আক্রমণ করেছেন মমতা। নির্বাচনের সময় এই ভাষণ দিয়ে মোদি ‘বেপরোয়া ভাবে রাজনৈতিক ফসল তুলতে চাইছেন’ বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। 

লম্বা টুইটে মমতার মত— এই মুহূর্তে এই পরীক্ষাটি করতেই হবে এবং যে সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে, সেই সরকারেই এই ঘোষণাটা করতে হবে, এমনটা মোটেই জরুরি ছিল না। আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হচ্ছে বলেও মমতা টুইটারে জানিয়েছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে