শনিবার, ০৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:২৪:৪০

লোকসভা নির্বাচনে কোন দলকে ভোট দিচ্ছেন ভারতীয় মুসলমানরা?

লোকসভা নির্বাচনে কোন দলকে ভোট দিচ্ছেন ভারতীয় মুসলমানরা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লোকসভা নির্বাচন গিয়ে সরগরম হয়ে ওঠেছে গোটা ভারত। রাজনৈতিক নেতারা প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তোপ দাগাচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও ভারতের প্রধান সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশেষ কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

মুসলমানদের ধর্মীয় সংগঠনগুলোও তাদের অনুসারীদের এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। বিগত বিভিন্ন নির্বাচনে কংগ্রেস মুসলমানদের একতরফা সমর্থন পেলেও সেই পরিস্থিতি এখন নেই বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। তবে আগের মত মুসলমানদের সব ভোট কংগ্রেস না পাওয়ায় ভোটগুলো যে ক্ষমতাসীন বিজেপির বাক্সে পড়বে, বিষয়টি এমন নয়।

ভারতের রাজনীতিক বিশ্লষকরা বলছেন, ভারতের মুসলমানরা এখন যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, অতীতে এমন অবস্থা কখনো সৃষ্টি হয়নি। মুসলমানরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাসহ সব সেক্টরেই বিরূপ পরিস্থিতির স্বীকার হচ্ছে। রাজনীতিতেও তারা বেশ পিছিয়ে রয়েছে।

ইতিহাসবিদ ও আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক রাজমোহন গান্ধী বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, মুসলমানদের বড় একটি অংশ মনে করে, ভারতে তাদের চুপ থাকতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ট নাগরিক হিসেবে মুসলমানদের এ নীরবতা নিয়ে ভাবতে হবে। এটি আমাদের জন্য দুঃখের বিষয়।’

ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মূলত মুসলমানদেরই টার্গেট করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করলেও মুসলমানরা এ বিষয়ে নীরব রয়েছে। ভারতের মুসলমানরা অবশ্যই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, কিন্তু নীরবেই সব সয়ে যাচ্চেন তারা।

অধিকাংশ মুসলিমের ধারণা, ভারতে এখন প্রতিবাদ জানিয়ে কোনও লাভ নেই। তবে মুসলমানদের এ নীরবতা ভারতের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হতে পারে। ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তাই এককভাবে মুসলিমদের ভোট কোনো দলই পাবে না।

মুসলিমদের প্রভাবশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও দিল্লি শাহী মসজিদের ইমাম কেউই এখন পর্যন্ত আসন্ন নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি।

ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মাহমুদ মাদানীর বক্তব্য ভারতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু নয়, দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ট। নির্বাচনে মুসলমানরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রায় দেবেন বলে মনে করেন মাওলানা মাদানী।

তার মতে, ভারতীয় সংবিধানের প্রধান মূলনীতি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রক্ষাই হবে এবারের চ্যালেঞ্জ। কয়েক দিন আগে ভারতের ৮০টিরও বেশি নেতৃস্থানীয় সাবেক শীর্ষ কর্মর্কতারা দেশের নাগরিকদের ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এই কর্মকর্তারা বলেন, ‘রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িক আচরণে ভারত প্রতিষ্ঠার মূল ভিতই নড়েবড়ে হয়ে যাচ্ছে।’ তাজমহলকে মন্দির করার দাবি, ফয়জাবাদের নাম পরিবর্তন করে অযৌধ্যা রাখা, বাবরি মসজিদকে মন্দিরে পরিণত করাসহ এমন বিষয়ে মুসলমানরা এখন তেমন সরব হচ্ছে না। 

মুসলমানদের এমন নীরবতা সুখকর হবে না। কারণ এ নীরবতায় লুকায়িত রয়েছে গভীর বেদনা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুসলমানদের এমন নীরবতা ভবিষ্যতের জন্য সুখকর নয়। তাদের মতে, মুসলমানদের এমন দুর্বল অবস্থা শুধু তাদেরই নয়, ভবিষ্যতে তা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়বে।

এ কঠিন অবস্থার মোকাবেলা না করে পিছু হটে যাওয়া এবং প্রতিবাদ না করে নীরবে সয়ে যাওয়া ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। কোন মতাদর্শ, রাজনীতি ও সরকার যা দেশের সব নাগরিকদের সমানভাবে দেখে না, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কারণ বিভাজন ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি সামগ্রিকভাবে পুরো রাষ্ট্রের জন্যই ক্ষতিকর। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন থেকে বিজেপি দেশে শক্তিশালী হয়েছে তখন থেকেই মুসলিমরা দেখেন, কোন দলের প্রার্থী বিজেপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী। তাকেই তারা ভোট দেন।

বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের তৃণমূল কংগ্রেস এমপি মমতাজ সঙ্ঘমিতা বিবিসিকে বলেন, ইস্যুভিত্তিক বিবেচনা করলে আমরা আশা করব মুসলিমদের ভোট বিজেপির বিপক্ষেই যাবে। এটা আমাদের ধারণা ও আশা, সেখানে ধর্মীয় নেতারা কী বলল বা না-বলল তাতে খুব একটা কিছু আসে যায় না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে