চাঞ্চল্যকর হেমা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শনিবার সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের কান্দিবালির একটি নর্দমা থেকে খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হেমা উপাধ্যায় ও তার আইনজীবী হরিশ ভামভানির বাক্সবন্দি লাশ উদ্ধার হয়।
মুম্বাইয়ে সেই জোড়া খুনের ঘটনার জল গড়াল বারাণসীতে। সোমবার সেখান থেকে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে মুম্বাই পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তবে, তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
এসটিএফ-এর একটি সূত্র জানাচ্ছে, ধৃতদের মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক গেজেটের টাওয়ারের সূত্র ধরে মুম্বাই থেকে এসটিএফ ধাওয়া করে বারাণসী। এ দিন সকালে বারাণসী পৌঁছয় তারা। তার আগে উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কিছু এটিএম কার্ড-সহ তাদের সচিত্র পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে এসটিএফ-এর দাবি। ওই দু’জন মুম্বাইয়ে ফেব্রিকেশন শিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। তবে, হেমা-হরিশ খুনে কী ভাবে তারা যুক্ত সে বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে এসটিএফ। জানা গিয়েছে, খুনের পরই মুম্বাই থেকে গা ঢাকা দিয়েছিল তারা। মুম্বাই এসটিএফ-এর এক কর্তা জানিয়েছেন, আপাতত ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে এ দিন সকালে জানা গিয়েছিল, মুম্বাইয়ের ওই জোড়া খুনে এক শিল্পীকে খুঁজছে পুলিশ। মেটাল ফেব্রিকেশন নিয়ে কাজ করা ওই শিল্পী রহস্যজনক এই হত্যাকাণ্ডে দিশা দেখাতে পারেন বলে পুলিশের তরফে আশা প্রকাশ করা হয়। তাদের দাবি ছিল, শুক্রবার সন্ধ্যায় হেমাকে তার আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে বল়েন ওই শিল্পী। ঘটনাচক্রে তার পরের দিন সন্ধ্যাতেই মুম্বাই শহরতলির কান্দিভলি এলাকায় উদ্ধার হয় হেমা এবং তার আইনজীবী হরিশ ভামভানির অর্ধনগ্ন বাক্সবন্দি দেহ।
এদিকে এক ট্রাকচালক পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনিরা একটি ট্রাকে করে লাশ দুটি গুদামঘরের বাইরে নিয়ে নর্দমায় ফেলে দিয়ে যায়। পরিত্যক্ত মালামালের দু'টি কার্টন ভাগাড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলে ট্রাকটি ভাড়া নেয় তারা।
ওই ট্রাকচালক পুলিশকে বলেছেন, পরদিন সকালে পত্রিকায় সংবাদ দেখে আসল ঘটনা জানতে পারি। এরপর সঙ্গে সঙ্গে আমার মালিককে ফোনে ঘটনাটি জানাই। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই হত্যার ঘটনায় ট্রাকচালক প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী।
প্রাথমিক ভাবে সন্দেহের তালিকায় হেমার স্বামী-সহ অনেকেই রয়েছেন। রয়েছেন এক ওয়্যারহাউসের মালিকও। তার গুদামেই হেমা এবং মেটাল ফেব্রিকেশন নিয়ে কাজ করা ওই শিল্পী নিজেদের শিল্প-কাজ রাখতেন। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হেমার সঙ্গে ওই ওয়্যারহাউসের মালিকের টাকাপয়সা নিয়ে একটা গণ্ডগোল চলছিল। তবে সে কারণেই এই খুন কিনা তা নিয়ে ওই সূত্রের মত, এত তাড়াতাড়ি সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। এরই মধ্যে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হল।
কান্দিভলি এলাকা থেকে দু’টি দেহ মিললেও তা শনাক্ত করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। তার পরই হেমার স্বামী চিন্তন উপাধ্যায়কে দিল্লি থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ-সহ বেশ কয়েকটি মামলা চলছিল। তাদের ১২ বছরের দাম্পত্য ২০১০-এ এসে মামলার চেহারা নেয়।
তার পরেও চিন্তনের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা করেন হেমা। প্রতিটি মামলাতেই হেমার আইনজীবী ছিলেন হরিশ। প্রাথমিক ভাবে সন্দেহের তির চিন্তনের দিকে থাকলেও সোমবার অন্য এই শিল্পী এবং ওয়্যারহাউস মালিকের প্রসঙ্গ সামনে আসার পর খুনের এই মামলা অন্য খাতে গড়াতে শুরু করল বলে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার রাতে বাড়ি না ফেরায় হেমার পরিচারক হেমন্ত মণ্ডল ওই রাতেই সান্তা ক্রুজ থানায় তার মালকিন সম্পর্কে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। অন্য দিকে হরিশের পরিবারের তরফেও মাতুঙ্গা থানায় শনিবার দুপুরে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল।
এর পর ওই দিন সন্ধ্যায় হাত-পা বাঁধা, অর্ধনগ্ন দেহ দু’টি মেলে। পরে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে হেমাকে। মুম্বাই পুলিশের অপরাধদমন শাখা এই ঘটনার তদন্ত করছে।
১৫ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস
�