আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে মঙ্গলবার রাজধানী খারতুমের কোবার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। বশিরের পারিবারিক দুটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
কারাসূত্র জানায়, কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে বশিরকে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করলে কড়া প্রহরায় আটক রাখা হয়েছিল তাকে। তখন তাকে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেটি ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাসভবনের একটি কম্পাউন্ড।
কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর বশিরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। গত ৬ এপ্রিল থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে প্রতিবাদকারীদের অবস্থান বিক্ষোভ চলছিল। তবে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে যে বিক্ষোভকারীরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান করছে, তারা আল জাজিরাকে জানিয়েছে ক্ষমতায় থাকাকালীন অপরাধের জন্য বশিরকে আদালতে তোলার আগ পর্যন্ত তারা অবস্থান ত্যাগ করবে না। এছাড়া বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্তও তাদের বিক্ষোভ চলবে।
সরকার অস্বীকার করলেও কারাগার সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, কোবার জেলে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ওমর আল বশিরকে রাখা হয়েছে।
খার্তুম থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সামরিক শাসক পরিষদের কর্মকর্তাদের বক্তব্যে ভিন্নতা রয়েছে। তাদের কেউ বলছেন, গৃহবন্দী দশা থেকে বশিরকে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। আদালতে তোলার আগ পর্যন্ত তাকে সেখানেই রাখা হবে।
বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আওয়াদ বিন আউফ। তিনি বলেন, বশিরকে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়েছে। ৩০ বছর ধরে দেশ শাসন করে আসা ওমর আল বশিরের পতন হয় গত সপ্তাহে।
চার মাস ধরে চলা জনবিক্ষোভের প্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আওয়াদ ইবনে আউফের নেতৃত্বে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক পরিষদের প্রধান হিসেবে একদিন দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগ করেন আউফ।
এখন এই পরিষদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান। দুই বছরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করে বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কোবর জেলখানার আশাপাশে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। খার্তুমের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই জেলখানাটির চারপাশে এখন নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সেনা সদস্যরা গাড়ির ওপরে মেশিন গান তাক করে টহল দিচ্ছে।
গত সপ্তাহে ক্ষমতা থেকে উৎখানের পর ওমর আল বশিরকে তার বাসভবনে কড়া পাহাড়ায় রাখা হয়েছিল। সে সময় তার বাড়ির চারদিকে সেনাবাহিনীর যে কড়া পাহাড়া ছিলো এখন তা দেখা যাচ্ছে কোবার জেলের কাছে। তাই সরকার স্পষ্ট করে না বললেও ধারণা করা হচ্ছে কোবর জেলেই নেয়া হয়েছে দীর্ঘ দিনের শাসককে।
২০০৩ সালে দারফুর সঙ্ঘাতে প্রাণহানীর ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ওমর আল বশিরসহ ওই সময়ের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সেনাকর্মকর্তাকে।