বুধবার, ১৫ মে, ২০১৯, ০১:২০:১১

মোদীর প্রযুক্তি-জ্ঞানে ‘বিস্মিত’ মার্কিন বিজ্ঞানীও

মোদীর প্রযুক্তি-জ্ঞানে ‘বিস্মিত’ মার্কিন বিজ্ঞানীও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আশির দশকের গুজরাত। মোদীর দাবি, সেই সময়ে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে সটান তা দিল্লিতে ‘ট্রান্সমিট’ করে চমকে দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীকে।। ১৯৯২-এ সিলিকন ভ্যালির এই কম্পিউটার বিজ্ঞানীই চমকে দেন বিশ্বকে। ইমেলের সঙ্গে গাধাবোটের মতো তিনি জুড়ে দিয়েছিলেন একটা অডিয়ো ফাইল, আর একটা রঙিন ছবি। ইন্টারনেটের ইতিহাস বলছে, সে দু’টিই দুনিয়ায় প্রথম ইমেল অ্যাটাচমেন্ট। তা হলে ১৯৮৭-৮৮ সালে নরেন্দ্র মোদী কী ভাবে সেই অসাধ্যসাধন করেছিলেন? উত্তরে মিছরির ছুরি চালালেন বোরেনস্টাইন— ‘‘কার্যত অসম্ভব। যদি এমনটা ঘটে থাকে, তা হলে আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত প্রযুক্তি-জ্ঞানের প্রশংসা করতেই হয়।’’

আশির দশকের গুজরাত। মোদীর দাবি, সেই সময়ে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে সটান তা দিল্লিতে ‘ট্রান্সমিট’ করে চমকে দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। কাল থেকে এ নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। দেদার মিম ছড়িয়ে নেটিজ়েনের একটা বড় অংশ বলছেন— এটাও ‘জুমলা’। কারণ, দেশ-বিদেশে ডিজিটাল ক্যামেরার বিক্রি তখনও শুরু হয়নি। আর ইমেল? ১৯৮৬ সালে ভারতে এডুকেশনাল রিসার্চ নেটওয়ার্কে মেল চালাচালি শুরু হলেও, আমজনতার হাতে নেট এল ১৯৯৫-এ ভিএসএনএলের হাত ধরে। তা হলে?

পুরনো দিনে ফিরে গেলেন বোরেনস্টাইন। জানালেন, মোদী যে সময়ের কথা বলছেন, তখনও তিনি নিজে নেট হাতড়ে চলছিলেন— কী ভাবে তাতে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ জোড়া যায়। অঙ্কে স্নাতক বোরেনস্টাইন ১৯৮৫-তে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পিএইচ ডি করেন। এবং সেই সময়েই ইমেলে ছবি ইত্যাদি অ্যাটাচ করার জন্য তৈরি করেন অ্যান্ড্রু প্রোজেক্ট। এতে দ্বিতীয় কোনও কম্পিউটারে মেল মারফত ছবি পাঠানো যেত। কিন্তু সে বড় ঝামেলার কাজ। এনকোডেড মেসেজ ডিকোড করা চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না— জানালেন বোরেনস্টাইন।

তবু অ্যান্ড্রুর অভিনব ক্ষমতা দেখে চমকে গিয়েছিলেন অ্যাপ্‌ল-এর প্রাণপুরুষ স্টিভ জোবস। এবং তখনই বোরেনস্টাইন ও তাঁর টিমকে অ্যাপ্‌ল-এ  চাকরির প্রস্তাব দেন। চওড়া ভুরুর বোরেনস্টাইন অবলীলায় তা ফিরিয়ে দেন। দু’টো বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে ১৯৮৯-এ তিনি টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দেন বেল কমিউনিকেশন রিসার্চে। তার পরে ১৯৯২-এর সেই ঐতিহাসিক ১১ মার্চ। রঙিন ছবি হিসেবে ইমেলে নিজের টিমের ছবি জুড়লেন বোরেনস্টাইন। আর অডিয়ো ফাইলে— ১৯৩৪-এ তৈরি গান ‘লেট মি কল ইউ সুইটহার্ট’-এর প্যারোডি ‘লেট মি মেল ইউ’। পথ চলা শুরু হল ইন্টারনেট প্রোটোকল ‘মাল্টিপারপাস ইন্টারনেট মেল এক্সটেনশনস’ (মাইম)-এর। সহজ হয়ে গেল ইমেল অ্যাটাচমেন্ট। 

মোদী কি তা হলে আশির দশকে মাইম-এর আগের ধাপ অ্যান্ড্রু বা ওই জাতীয় কোনও পদ্ধতিতে ছবি ‘ট্রান্সমিট’ করছিলেন? বোরেনস্টাইন বললেন, ‘‘কার্যত অসম্ভব। সেই সময়ে ভারতে অ্যান্ড্রু সিস্টেম কেউ ব্যবহার করতেন বলে আমার অন্তত জানা নেই। যদি এমনটা ঘটে থাকে, তা হলে আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত প্রযুক্তি-জ্ঞানের প্রশংসা করতেই হয়। মনে রাখতে হবে, সে ক্ষেত্রে ছবি ডিকোড করতে হলে দ্বিতীয় পক্ষেরও সমান দড় হওয়া প্রয়োজন।’’

বোরেনস্টাইন আজ আন্তর্জাতিক ইমেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ‘মাইমকাস্ট’-এর মুখ্য বিজ্ঞানী। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, দু’বছর বয়সে তিনি প্রথম ‘অ্যাডাল্ট বই’ পড়েন। আর তৃতীয় শ্রেণিতে কলেজের বই। ফেসবুকে তাঁর একটা প্রোফাইল আছে বটে, কিন্তু সেখানে লেখা— ‘মেসেঞ্জারে নয়, প্রয়োজনে ইমেল করুন।’ সদ্য ষাট পেরিয়েছেন। এখনও সফটওয়্যার ডিজ়াইনিং নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন। আর টুইটারে হাইকু লিখছেন— ‘বেস্ট ডিজ়াইনার নোজ়/ ইনভেনশন ফল্‌স ফ্রম দ্য স্কাই/ হেল্প ইজ় এভরিহোয়্যার...।’ 

আশির দশকে মোদীর ডিজি-ক্যামে ছবি তোলার দাবি তবু যেন হজম করতে পারছেন না। মোলায়েম করেই বললেন, ‘‘হতেও পারে। তিনি হয়তো সেই সময়ে অত্যন্ত আধুনিক কোনও ল্যাব ব্যবহার করেছিলেন। হয়তো তিনি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্পোরেট রিসার্চ ল্যাবে গিয়েছিলেন! তবে একটা কথা বলতে পারি, ১৯৮৫ সালে আমি নিজে কোডাকের অফিসে গিয়েছিলাম। ডিজিটাল ফোটোগ্রাফি তখনও কল্কে পেয়েছিল মনে হয়নি।’’সূত্র: আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে