বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৯, ০১:২৪:১১

মুরসির মৃত্যুতেই শেষ মিসরের মুক্তির স্বপ্ন

মুরসির মৃত্যুতেই শেষ মিসরের মুক্তির স্বপ্ন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে হয়েছিল তিউনিসিয়ার ৩০ বছরের স্বৈরশাসক বেন আলিকে। তিউনিসীয়দের দেখেই গণতন্ত্র ও মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল দশকের পর দশক ধরে স্বৈরশাসনের কবলে থাকা মিসরীয়রাও।

তাই নতুন মন্ত্রে ও স্লোগানে বলীয়ান হয়ে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল তারা। মাত্র কয়েকদিনের আন্দোলন আর প্রতিরোধেই বেন আলির মতোই ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মোবারক। মিসরের বুকের ওপর থেকে যেন নেমে যায় ৬৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরশাসনের জগদ্দল পাথর।

উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিত হয় মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন। নতুন স্বপ্ন ও আশা নিয়ে দেশের হাল ধরেন জননেতা মোহাম্মদ মুরসি। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই ভেঙে যায় সে স্বপ্ন। গণতন্ত্রের ওপর ফের স্বৈরশাসনের থাবা। ক্ষমতাচ্যুত ও বন্দি হন মুরসি। অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি।

স্বৈরশাসনের দেশে গণতন্ত্র ও মুক্তির যে স্বপ্ন মিসরীয়রা দেখেছিল তার এ অকাল মৃত্যুর মধ্যদিয়ে তা শেষ হয়ে গেল। অস্ত গেল গণতন্ত্রের শেষ সূর্য। যার মুখ আর কখনই দেখবে না মিসরের মুক্তিমনা জনগণ। ব্রিটেনের এক্সিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্রাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটি ইন্সটিটিউট’র গবেষক ও ২০১৫ সালে আলজাজিরার ‘ইয়ং রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড’ জয়ী তালহা আবদুল রাজাক তার প্রবন্ধে এসব কথা বলেছেন।

সোমবার দেশটির একটি আদালতে বিচার চলাকালে মুরসির মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও বন্দি হন তিনি। ক্ষমতায় এসেই বিরোধীদের ওপর সাঁড়াশি অভিযান চালান স্বৈরশাসক আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। গণ-আদালতে হাজার হাজার ব্রাদারহুড সমর্থককে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দেন।

ছাড় পায়নি ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীরাও। কয়েক বছরে ‘মিসরের নতুন ফারাও তথা ফেরাউন’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার স্বৈরশাসনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে মিসরীয় বিচারব্যবস্থাও।

বিশ্বাসঘাতক আর অবিচারের প্রতীক সেই বিচারব্যবস্থায় যেন মিসরীয় জনগণের বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়ে তাদেরকে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ‘দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’র এক বোগাস ও ভিত্তিহীন মামলায় মুরসির বিচার চলছিল। শুধু মুরসিই নয়, প্রহসনমূলক বিচারে তার বহু সমর্থককেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

তার এ অকাল মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি বা সরকারের পক্ষ থেকেও এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। কেউ বলছেন, স্ট্রোক করে মারা গেছেন তিনি। কেউ আবার বলছেন, হার্ট অ্যাটাক। তবে গত কয়েক বছর মুরসির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, উপরোক্ত কোনোটি তার মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়। তাকে আসলে তিলে তিলে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা-বঞ্চনার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।

মিসরের বর্তমান বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে যাদের জানা আছে, তার এ মৃত্যুতে তারা কেউ অবাক হয়নি। যা হোক, মুরসির এ অকাল মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সিসির স্বৈরাচারী সরকার একটা বার্তাই দিতে চেয়েছে, মিসরীয়রা যেন আর কখনই গণতন্ত্র ও মুক্তির স্বপ্ন না দেখার দুঃসাহস না করে।

যদি করে তাহলে কায়রোর তাহরির, রামসেস আর রাবিয়া স্কয়ারে হাজার হাজার মিসরীয়কে হত্যা করে যে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও সেটাই করা হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে