পথে নেমে মার খেলো বিজেপি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আইন অমান্য কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি নেতাকর্মীদের সমানে সমানে টক্করের সাক্ষী রইল বৃহস্পতিবারের কৃষ্ণনগর। বারুইপুর, সল্টলেক, শ্রীরামপুর, আসানসোলের সঙ্গে যোগ হল নদিয়ার জেলা সদরের নামও। গোটা কর্মসূচিতে পশ্চিমবঙ্গে কোনঠাসা বিজেপি কিছুটা হলেও অক্সিজেন পেল বলে মত ওপার বাংলার রাজনৈতিক মহলের।
বেশ কয়েক মাস ‘শীতঘুমের’ পরে বিধানসভা ভোটের আগে আড় ভেঙে আন্দোলনমুখী হয়েছিল নদিয়া জেলা বিজেপি। গুরুত্ব বুঝে সেই কর্মসূচিতে হাজির হয়েছিলেন রাজ্য এবং কেন্দ্রের প্রথম সারির নেতারাও। কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের সামনে তাদের কেউ পুলিশের লাঠি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে, কেউবা গ্রেফতার হয়ে এমনকী অনশনে বসে মরিয়া প্রমাণের চেষ্টা চালালেন ভোট ময়দানে উপস্থিত বিজেপিও।
বৃহস্পতিবার নদিয়ার জেলা সদর কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাঠ লাগোয়া রাস্তায় মঞ্চ বেঁধে সভার পরিকল্পনা নেয় বিজেপি। তাতে উপস্থিত হন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, কেন্দ্রীয় নেতা সুরেশ পূজারি, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি আশুতোষ পাল-সহ এক ঝাঁক নেতা।
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সভা শেষে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থককে নিয়ে জেলা প্রশাসন ভবনের দিকে রওনা দেন তারা। বিজেপির কর্মসূচির কথা জেনে প্রস্তুত ছিল পুলিশও। জেলা প্রশাসন ভবনের আগে দু’টো ব্যারিকেডও করা হয়। প্রথম ব্যরিকেড ভেঙে ফেলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। দ্বিতীয় ব্যারিকেডও এক সময় ভেঙে যায়। এরপরেই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে।
ইট ও লাঠির আঘাতে পাঁচ সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ বিজেপির একাধিক নেতা কর্মী জখম হন। তাদের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। লাঠির ঘায়ে মাথা ফেটে যায় সুরেশ পূজারীর। প্রথমে কিছুটা পিছু হঠেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। সেই সময় পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়। পাল্টা ইট ছোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার্সরা। এরপরেই ওই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা মারতে মারতে নিয়ে যায় বলে দাবি বিজেপি-র।
পুলিশের লাঠির মুখে এক সময় কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষেরা রাস্তায় বসে পড়েন। ঘটনাস্থলে আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অজয় প্রসাদ। তার নির্দেশে গ্রেফতার করা হয় বিজেপির চল্লিশের বেশি নেতা ও কর্মীকে। প্রিজন ভ্যানে ধৃতদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ ৩৬ জনকে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদের মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল— বেআইনি জমায়েত, পুলিশকে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর। গ্রেফতারির প্রতিবাদে রাতে কোতয়ালি থানার মধ্যেই অনশনে বসেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষেরা। বিজেপি কর্মীদের মারধরের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার দু’টো থেকে আড়াইটে আধ ঘণ্টা রাজ্যেজুড়ে রাস্তা অবরোধের ডাক দিয়েছে বিজেপি।
রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘গ্রেফতার করলে একই ধারায় কেস দিয়ে আমাদেরকেও গ্রেফতার করতে হবে। না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’
কৈলাসের অভিযোগ, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে আইন অমান্য করছিলাম। পুলিশ পরিকল্পিত ভাবে মারধর শুরু করে। রেহাই পাননি মহিলারাও। পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করতে পারত। তা না করে নির্বিচারে যে ভাবে লাঠি চালাল তাতে এ রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই সেটাই ফের প্রমাণিত হল।’’
অন্য দিকে পুলিশের দাবি, আইন অমান্য আন্দোলনের নাম করে প্রচারে আসতেই বিজেপি এমন কাণ্ড করেছে। অনেক দলই আইন অমান্য আন্দোলন করে। তবে বিজেপির মতো এমন বিশৃঙ্খলা এর আগে তারা দেখেননি বলেই দাবি করেছেন জেলা পুলিশের একাধিক কর্তা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অজয় প্রসাদ বলেন, ‘‘পুলিশের উপরে প্রথমে ওই রাজনৈতিক দল হামলা করে। আমাদের বেশ কয়েক জন কর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। পুলিশ আত্মরক্ষা করেছে মাত্র।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিজেপির এক নেতা কিন্তু অন্য কথা বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে। সংগঠনের অবস্থাও তথৈবচ। এ দিনও বিজেপির এই কর্মসূচিতে জেলার বহু গুরুত্বপূর্ণ নেতার দেখা মেলেনি। ছিলেন না সাবেক জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী ও তার অনুগামীরাও। এমন আবহে সকলকে নিয়ে সুষ্ঠু ভাবে এই কর্মসূচি পালন করা যেত। সেটা না করে এই জঙ্গিপনায় মুখ পুড়ল দলেরই।’’
যদিও জেলা সভাপতি আশুতোষ পাল বলছেন, ‘‘কল্যাণবাবুকেও আমি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কোনও কারণে হয়তো তিনি আসতে পারেননি। তবে এ দিনের কর্মসূচিতে আমরা বিপুল সাড়া পেয়েছি। আর সেটা সম্ভব হয়েছে সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলেই।’’ এ দিন রাত ন’টা নাগাদ আশুতোষের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে যান। সূত্র : আনন্দবাজার
১৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস
�