অনেক বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশের আশ্রয় শিবিরে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বা মারা গেছেন- এমন ব্যক্তিদের স্মরণ করা হচ্ছে আজ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে।
বিদেশে যেয়ে সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন থাকলেও নিখোঁজ ও প্রাণ হারানো এসব মানুষের পরিবার এখন পার করছেন এক অনিশ্চিত জীবন।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো বলছে, এখনও বিশ্বের কয়েকটি দেশের আশ্রয় শিবিরে আটকে রয়েছেন অনেক বাংলাদেশী যাদের খবর হয়ত তাদের পরিবারগুলোও জানে না।
দুই বছর আগে যশোরের শারশার বাবুল আখতার সমুদ্র পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় কম খরচে মালয়েশিয়ার যাওয়ার প্রস্তাব ছিল তার কাছে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।
বাবুল আখতারের স্ত্রী রিপা বলছিলেন, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে তার স্বামী বাড়ি থেকে বের হন।
দুই বছরে তার কোন খোঁজ পাননি তিনি।
বাবুল আখতার ছিলেন বর্গাচাষী।
তার কোন খোঁজ না পেয়ে রিপা দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে এখন বলা যায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
রিপা বলছিলেন, “সরকারি একটা কার্ড দিয়ে চাল আনি দু’বছর, চোখে না দেখলে আমার কষ্ট বোঝা যাবে না। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কিভাবে আছি তা শুধু আমি জানি।”
এ বছরের মার্চ মাসে নরসিংদী জেলার আব্দুর রশিদ একই ভাবে সমুদ্রপথে বিদেশে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়েন।
প্রথমে তার পরিবারের মানুষ জানতেন না ঠিক কোন দেশে তিনি যাচ্ছেন।
একমাস পরে মালয়েশিয়া থেকে একটি ফোন আসে আব্দুর রশিদের পরিবারের কাছে।
তার ছেলে স্বপন বলছিলেন, এরপরের চারমাস আর কোন খোঁজ পাননি তার বাবার।
স্বপন বলছিলেন, এ বছরের অক্টোবরে তার বাবার মরদেহ তারা পান মালয়েশিয়া থেকে।
“আমরা তিন ভাই, আমি বড় এবার ডিগ্রী পরীক্ষা দিতাম। আব্বুর এই ঘটনায় আমি পরীক্ষা দেইনি, আমার দুই ভাইয়ের পড়াশোনা এখন বন্ধ। আমি একটা কাজ খুঁজছি,” বলছিলেন স্বপন।
নরসিংদীর আব্দুর রশিদ এবং যশোরের বাবুল আখতারের মতো নিখোঁজ রয়েছেন বা মারা যাওয়ার খবর রয়েছে আরো পরিবারে।
সিলেটের নারী শ্রমিক রিপন বেগম দুবাই যেয়ে দুই বছর ধরে নিখোঁজ বলছিলেন তার স্বামী।
একই ভাবে যশোরের তানভীর হোসেনের কোন হদিশ পাচ্ছেন না তিন বছর ধরে তার ভাই মহিউদ্দিন।
জাতিসংঘের এক হিসেব বলছে, বর্তমানে নৌকায় করে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া রওয়ানা হওয়া লোকজনের ৪০% বাংলাদেশী।
এই বিপদজনক পথ পাড়ি দিতে গিয়ে হচ্ছেন অনেক নিখোঁজ আবার অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন।
তবে এদের কেউ কেউ বিভিন্ন দেশের আশ্রয় শিবেরে রয়েছেন। যাদের খোঁজ তাদের পরিবারের কাছে আসছে না।
এশীয় অঞ্চলে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে ক্যারাম এশিয়ার কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেছেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের আশ্রয় ক্যাম্পে এখনো অনেক বাংলাদেশী আটক রয়েছেন।
তিনি বলেন, “ মালয়েশিয়ার একটা ক্যাম্পে আছে দুশোর মত বাংলাদেশী, সম্প্রতি আরেকটি ক্যাম্পে ১২ জনের খবর পেয়েছি। থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার ক্যাম্পগুলোতে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে আরো অনেকে।”
এসব ব্যক্তিরা কোন আশ্রয় শিবিরে আছেন কিনা সেটার যেমন কোন তথ্য পরিবারের কাছে নেই আবার আশ্রয় শিবিরে আটকে থাকাদের উপায় নেই পরিবারের সাথে যোগাযোগের।-বিবিসি
১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন
�