মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯, ০৭:১১:৩১

কাশ্মির নিয়ে মোদির নাম জড়িয়ে ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্যে ভারতজুড়ে তোলপাড়!

কাশ্মির নিয়ে মোদির নাম জড়িয়ে ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্যে ভারতজুড়ে তোলপাড়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাশ্মীর মধ্যস্থতা বিতর্ক নিয়ে সোমবার তোলপাড় হল ভারতের সংসদ। বিরোধীদের চাপে পড়ে বিবৃতিও দেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। 

তিনি রাজ্যসভায় বলেন, ‘মোদি ট্রাম্পকে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার কথা কখনই বলেননি।’ কিন্তু, তাতে শান্ত হয়নি বিরোধীরা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য নিয়ে এ বার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে টার্গেট করেছে তারা। দাবি করা হয়েছে তার বিবৃতিও।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সেই বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে কাশ্মীর প্রসঙ্গ। ওভাল অফিসে ইমরানের পাশে বসেই ট্রাম্প মধ্যস্থতার কথা তোলেন।

পাক প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি দাবি করেন, ‘জাপানের ওসাকায় জি-২০ সামিটে মোদির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি জানতে চান, আমি মধ্যস্থতা করতে রাজি কি না। আমি প্রশ্ন করি, কোন বিষয়ে? তিনি বলেন, কাশ্মীর। কারণ, বিবাদটা অনেক দিন ধরে চলছে। আমি ওঁকে জানাই, মধ্যস্থতা করতে পারলে আমি খুশিই হব।’

সোমবার ইমরান খানকে পাশে নিয়ে বিতর্কের শুরুটা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ধাক্কা মেরেছিল দিল্লির রাজনীতিতে। মঙ্গলবার, সংসদ শুরু হতেই সেই ঝড়ের গতি যেন বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গেল।

নরেন্দ্র মোদি দেশের স্বার্থ বলি দিয়ে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করছেন বলে সোমবারই মন্তব্য করেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা। সোমবার, কংগ্রেসের তরফে এই মন্তব্য ছিল কার্যত বিরোধিতার ফুলকি মাত্র। মঙ্গলবার এ নিয়ে ঝড় বয়ে যায় সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশনেই।

লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই তাঁকেই বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। ’ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে এসে বিবৃতি দেওয়ার দাবি করেন তিনি। একই পরিস্থিতি হয় রাজ্যসভারও। হইহট্টগোলে সাময়িক ভাবে মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভা। পরে অধিবেশন শুরু হলেও ওয়াকআউট করে বিরোধীরা। 

বিরোধীশূন্য অধিবেশনেই বিবৃতি দেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কেবলমাত্র দ্বিপাক্ষিক আলোচনাই হবে। ভারত বার বার এই কথাই বলে আসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কখনই এমন প্রস্তাব দেননি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কড়া পদক্ষেপ করলে তবেই আলোচনার রাস্তা খুলবে।’

একইসঙ্গে শিমলা ও লাহৌর চুক্তির কথাও তুলে ধরেন বিদেশমন্ত্রী। বক্তৃতায় জয়শঙ্কর হাততালি কুড়োলেও এই বিতর্ক এখনই যে থামছে না, তা একরকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতিও দাবি করেছেন বিরোধীরা।

কাশ্মীর বিবাদকে ভারত বরাবরই দ্বিপাক্ষিক সমস্যা বলে মনে করে। ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তিতে কাশ্মীরকে দ্বিপাক্ষিক বিষয় বলেই মেনে নিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। সেই চুক্তি এবং লাহৌর ঘোষণাপত্রই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করে ভারত। 

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা ও বালাকোটে এয়ারস্ট্রাইকের পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েন তুঙ্গে। তার মধ্যেই নরেন্দ্র মোদীকে টেনে এনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি ঘরোয়া রাজনীতিতে তুফান তুলেছে।

এদিকে, কাশ্মীর নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেফাঁস মন্তব্যে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি। সেই ক্ষোভ প্রশমন করতেই এ বার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হল ট্রাম্প প্রশাসনকে। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রনালয়ের টুইটে লিখেছেন, ‘কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। দু’পক্ষ আলোচনার মাধ্যমেই তা স্থির করবে।’

ট্রাম্পের ‘অস্বস্তিকর’ মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের এক ডেমোক্র্যাট সদস্য। কিন্তু, কাশ্মীর নিয়ে সেই পুরানো অবস্থানেই পাকিস্তান। তৃতীয় পক্ষ ছাড়া কখনই সমাধান মিলবে না বলে দাবি করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি নস্যাৎ করে নয়াদিল্লি জানায়, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এমন কোনও অনুরোধ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে করেননি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সব বিষয় নিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্তরেই আলোচনা হবে, এটাই আমরা ধারাবাহিক ভাবে বলে এসেছি।’

ভারতের বয়ানের পরেই কার্যত পাশা উল্টে যায়। বিষয়টি কোথায় ধাক্কা মেরেছে তা আন্দাজ করেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপর তড়িগড়ি করে রাস্তায় নামে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়।

তারা জানায়, ‘ভারত ও পাকিস্তানের উভয়ের কাছেই কাশ্মীরএকটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়। উভয়পক্ষ যদি এ নিয়ে আলোচনা করে তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বাগত জানাবে। দু’পক্ষকে সাহায্যও করবে।’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ট্রাম্প ও  ইমরানের বৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউসের তরফে যে নথি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কোথাও কাশ্মীরের উল্লেখ নেই। তবে জাপানে জি-২০ সম্মেলনে মোদীর সঙ্গে ট্রাম্পের এমন কোনও কথা হয়েছিল কি না তাও স্পষ্ট করেনি ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্য শোরগোল ফেলে দিয়েছে সে দেশেও। 

মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য ব্র্যাডলি জেমন শেরম্যান টুইটে বলেন, ‘প্রত্যেকেই জানেন, কাশ্মীর নিয়ে কখনই তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি মেনে নেয়নি ভারত। ট্রাম্পের এই মন্তব্য অপেশাদার ও বিভ্রান্তিকর। আমি এ জন্য ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রীঙ্গলার কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছি।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে