ক্যাটরিনার স্বামীর অজানা গল্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে কয়েক ঘণ্টার ড্রাইভ৷ পাহাড়ের মাথায় একটা সুসজ্জিত রিসোর্টে বিয়ের আয়োজন৷ ২০১৩ -এর ফেব্রুয়ারি মাসের এ বিয়ে নিয়ে উৎসুকের অন্ত ছিল না৷ কার বিয়ে? পরে জানা গেল, ভিআইপি ওই পাত্রপাত্রী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ছোট মেয়ে ক্যাটরিনা তিকোনোভা ও উঠতি ব্যবসায়ী কিরিল শামালোভ৷
উঠতি ব্যবসায়ীর চেয়েও অবশ্য বড় পরিচয়, কিরিল পুতিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলে৷ গল্পটার শুরু এখানেই৷ বিয়ের আসরের সেই পাত্র এখন রাশিয়ার অন্যতম বিজনেস টাইকুন৷ দু’বছরে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে উঠেছেন তিনি৷ অস্বাভাবিক মসৃণ সেই পথ৷ কোটি কোটি ডলারের বিনিময়ে একের পর এক সংস্থার শেয়ার কিনেছেন৷ সে সবই কি নেহাত সমাপতন ? নাকি শ্বশুর-জামাইয়ের অন্য কোনো সমীকরণ কাজ করছে? কিরিলের সাফল্যের কিন্ত্ত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷
শনিবার রয়টার্সের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে।
বিয়ের ১৮ মাসের মধ্যেই রাশিয়ার তেল ও পেট্রোক্যামিক্যাল উত্পাদক সংস্থা 'সিবুর 'এর বড় অঙ্কের শেয়ার কিনে নেন কিরিল৷ বর্তমান দাম অনুযায়ী , তার মূল্য ২৮৫ কোটি ডলারের কম নয়৷
জানা গেছে, বিয়ের এক বছরের মধ্যেই নামিদামি ব্যাঙ্ক থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছেন তিনি৷ কিন্ত্ত কিসের ভিত্তিতে পেলেন ঋণ? উত্তর একটাই , ব্যাঙ্কের কর্ণধার পুতিনের দীর্ঘদিনের পরিচিত ও কিরিলের দাদা ওই ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্মী৷ বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই নাকি সিবুরের শেয়ার কেনার আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল৷ তাতে সমস্যাও বিশেষ হয়নি, কারণ সিবুর- এর মালিকও পুতিনের বন্ধু৷
তবে কি শ্বশুরের কল্যাণেই কিরিলের এত বাড়বাড়ন্ত? রাশিয়ার শক্তিশালী মন্ত্রীর সাবেক প্রতিমন্ত্রী, বর্তমানে বিরোধী দলের প্রার্থী ভ্লাদিমির মিলভের কথায়, গ্যাজপ্রোম ব্যাঙ্কটাকে তো পুতিন পকেট ব্যাঙ্ক বানিয়ে ফেলেছেন৷ সেই ব্যাঙ্ক থেকে ইচ্ছেমতো ঋণ নিয়ে পুতিনের পরিচিত ও ঘনিষ্ঠরাই দেশের অধিকাংশ বড় বড় সংস্থার শেয়ার কিনে নিয়েছেন৷
বসেছেন সেই সব সংস্থার শীর্ষপদে৷ এতদিন পুতিন ও তার বন্ধুদের হাতে কুক্ষিগত ছিল সব ক্ষমতা৷ এখন জামাইয়ের মাধ্যমে সেই ক্ষমতা পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট৷ এ ঋণ দেয়া-নেয়ার চুক্তি খুবই অস্পষ্ট৷ পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কোভ অবশ্য বলছেন, পুতিনের মেয়ের সঙ্গে এসব ব্যবসার কোনো সম্পর্ক নেই৷ ব্যবসায়ী হিসেবে কিরিলকে তো সবাই চেনেন৷
যতদূর আমরা জানি , কিরিল যেসব লেনদেন করেছেন, সবই আইনি পথে৷ ওর ক্যারিয়ার বা বিজনেসের সঙ্গে ক্রেমলিনের কোনো সম্পর্ক নেই৷ কিন্ত্ত দ্বন্দ্ব থাকছে অন্য জায়গাতেও৷ কিরিল শামালোভের বয়স তখন অনেকটাই কম৷
পুতিন ও অন্য কয়েকজনের সঙ্গে মিলে 'ওজেরো (লেক ) কোঅপারেটিভ ' গড়ে তোলেন কিরিলের বাবা নিকোলাই৷ কিছুদিনের মধ্যেই নিকোলাই ছোট্ট একটা ব্যাঙ্ক 'রোশিয়া 'র শেয়ার কেনেন, যা ১৫ বছরের মধ্যে রাশিয়ার নামজাদা ব্যাঙ্কগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে৷
২০১৪-এ রাশিয়া ক্রিমিয়ার দখল নেয়ার পর রাশিয়ার সম্ভ্রান্ত শ্রেণির ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক হিসেবে রোশিয়াকে অনুমোদন দেয় আমেরিকা৷ দু'হাতে রোজগার শুরু করেন নিকোলাই৷ আর পুতিনের জামানায় আখের গুছিয়ে নেন তার ছেলে ইউরি ও কিরিলও৷ ২০১৪ -এর মার্চে সিবুর- এর ম্যানেজমেন্ট থেকে সরে আসেন কিরিল৷ কিন্ত্ত শেয়ার বিক্রি করেননি তিনি৷ বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স এর সদস্য হিসেবে থেকে যান কিরিল৷ চার মাস পর তিনি সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি সংস্থা খোলেন৷ নাম দেন 'ইয়াউজা ১২ '৷
পরের মাসেই তিমচেনকোর হাত থেকে সিবুর- এর ১৭ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় 'ইয়াউজা ১২ '৷ এর ফলে পেট্রোকেমিক্যাল ওই সংস্থায় কিরিলের মোট অংশীদারিত্ব হয় ২১ .৩ শতাংশ৷ বর্তমানে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ গ্যাস ও পেট্রোকেমিক্যাল প্রস্ত্ততকারক সংস্থার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার পুতিনের জামাই৷
বঞ্চিত হননি কিরিলের পরিজনও৷ সমীকরণটাও খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ ২০১৩ -এর ফেব্রুয়ারিতে পাহাড়ের কোলের সেই রিসর্টে যে গুটিকয়েক নিমন্ত্রিত ছিলেন, তাদের হাত থেকেই রাশিয়ার রাশ যাচ্ছে পুতিনের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে৷