বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৯, ০৭:৩২:৪২

চীনে মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক মাতৃত্ব নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে

চীনে মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক মাতৃত্ব নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের উইঘুর গোত্রভূক্ত মুসলিম নারীদের জো'রপূর্বক মাতৃত্ব নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। চীনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এসব মুসলিম দীর্ঘদিন ধরে জিনজিয়াংয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশে কথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আটক ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমের মধ্যে যেসব নারী রয়েছেন তাদের সঙ্গে এমনটা করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

জিনজিয়াংয়ের সেসব শিবিরে একসময় বন্দি থাকা নারীর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। 

জিনজিয়াং প্রদেশ চীনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। ওই অঞ্চলটি স্বর্ণ, তেল ও গ্যাসসম্পদে সমৃদ্ধ। সেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা সবাই উইঘুর সুন্নি মুসলমান। তারা চীনা নয়, তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। কথাও বলেন উইঘুর ভাষায়। 

স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করতে পারে ভেবে তাদেরকে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে চীনা সরকার। গুলবাহার জালিলোভা। চীনা সরকারের কথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ বন্দিশিবিরে এক বছরের বেশি সময় আটক ছিলেন তিনি। 

পরে বুদ্ধি খাটিয়ে একসময় তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। তিনি বললেন, ‘নিয়মিত বিরতিতে আমাদের শরীরে ইনজেকশন দেয়া হতো।’

৫৪ বছর বয়সী ওই উইঘুর মুসলিম নারী জানালেন, ‘দরজার ছোট্ট একটি খোলা অংশে আমাদের হাত-পা বেঁধে রেখে ইনজেকশন দেয়া হতো। ইনজেকশ দেয়ার পর আমরা বুঝতে পারলাম কোনোভাবেই আমাদের আর ঋতুস্রাব (পিরিয়ড) হচ্ছে না।’

গুলবাহার আরও জানালেন, ১০ ফিট বাই ২০ ফুট একটি ছোট্ট একটি বন্দিশালায় (সেলে) ৫০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে বসবাস করতে হতো তাকে। তখন নিজেকে একটি মাংসের টুকরো বলে মতে হতো তার। চলাফেরা করতে পারতেন না।

গুলবাহারের মতো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ৩০ বছর মেহেরগুলকে। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত। ২০১৭ সালে যখন জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরে ছিলেন তখনকার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘নাম না জানা কত ওষুধ সেবন এবং ইনজেকশন নিতে বাধ্য করা হতো আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ অচেতন হয়ে পড়ে ছিলাম। সেসব দিনের কথা কিছুই মনে করতে পারি না। আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছিল এবং আমি সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। চার মাস পর যখন প্রমাণিত হলো আমি মানসিকবাবে অসুস্থ তখন আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’

মেহেরগুল জানালেন যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পর তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে জানা যায়, ইনজেকশনের মাধ্যমে তার মাতৃত্ব নষ্ট করা হয়েছে। তিনি আর কখনও সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না। আরও লাখ লাখ নারীকে এভাবে জোরপূর্বক মাতৃত্ব নষ্ট করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব নারী।

গবেষকরা বলছেন, যুদ্ধের সময় বন্দিশিবিরগুলোতে যেভাবে পূনঃশিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয় ঠিক সেভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে উইঘুর মুসলিমদের। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে চীন সরকার।

চীনের উগ্রপন্থীবিরোধী কথিত রাজনৈতিক পুনঃশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে উইঘুর সম্প্রদায়ের ১০ লাখ মুসলিমকে আটক রাখা হয়েছে জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে