আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামীরা। ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসে ভারতের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে বেলুচ অধিকারকর্মীরা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে দিল্লির সহায়তা কামনা করেছেন।
বেলুচিস্তান ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চলে একটি প্রাদেশিক সরকার রয়েছে। তবে বেলুচিস্তানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কার্যত ভিনদেশি আগ্রাসী বাহিনীর মতো করে দমননীতি জারি রেখেছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রাদেশিক সরকারের তেমন কোনও অবস্থান নেই।
সেখানে বেলুচ বংশোদ্ভূত আদি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছে। বেলুচদের স্বাধীনতার আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখে আসছে পাকিস্তান। পাকিস্তান যেমন করে কাশ্মিরিদের অধিকার হরণের অভিযোগে ভারতকে দুষে থাকে, তেমনি ভারতও বেলুচিস্তানের মানুষের অধিকার হরণের প্রশ্নে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
এমন বাস্তবতায় আশরাফ শারজান নামের এক অধিকারকর্মী ভারতের স্বাধীনতা দিবসে সে দেশের মানুষের জন্য শুভকামনা জানান। বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তানের পক্ষে আওয়াজ তুলতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
আত্তা বেলুচ নামে এক অধিকারকর্মী বলেন, ‘গত ৭০ বছরে ভারতীয়দের অর্জিত সফলতা তাদের জন্য গর্বের বিষয়। আজ বিশ্বজুড়ে ভারতীয়রা গর্বিত। তাদের সংহতি ও সহযোগিতার জন্য আমরা বেলুচরা কৃতজ্ঞ। আমরা চাই, বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য তারা আওয়াজ তুলুক। তাদের সহযোগিতা আমাদের দরকার। আপনাদের ধন্যবাদ, জয় হিন্দ।’
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ প্রদেশ বেলুচিস্তান। ১৯৪৮ সাল থেকে এ প্রদেশের জনগণ পাকিস্তানি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। তাদের অভিযোগ, পাকিস্তানের ছত্রছায়ায় চীন প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র সমৃদ্ধ এই অর্থনৈতিক সম্পদ লুণ্ঠন করছে।
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অধীনে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা, অসংখ্য জ্বালানি প্রকল্প ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের মাধ্যমে তারা সেখানে লুটপাট চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আশরাফ শারজান নামে আরেক বেলুচ অধিকারকর্মী ভারতীয়দের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তানের পক্ষে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
আশরাফ শারজান বলেছেন, 'বেলুচিস্তানের জনগণ পাকিস্তান ও তার সামরিক সংস্থার হাতে গণহত্যার শিকার হচ্ছে। বেলুচিস্তানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।' ওই বেলুচ অধিকারকর্মী ভারতের প্রতি ‘ভাষাহীনদের কণ্ঠস্বর’ হয়ে আওয়াজ তোলার অনুরোধ জানিয়েছেন। এবং হিন্দি ভাষায় ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে তার আহ্বান শেষ করেছেন।
তবে ভিন্ন দেশের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি ইসলামাবাদের এই সংহতি প্রদর্শনের সময়েই পাকিস্তানি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড চালু করেছে বেলুচ অধিকারকর্মীরা। টুইটারে #বেলুচিস্তানসংহতিদিন লিখে এক লাখ টুইট ও #১৪আগস্টকালোদিন লিখে ৫৪ হাজার টুইট হয়েছিলো। পাকিস্তান কাশ্মিরিদের অধিকারের দাবি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারস্থ হওয়ার কাছাকাছি সময়ে বেলুচিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অন্যান্য মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।