মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯, ১০:৩৫:৫৩

কাশ্মীর ইস্যুতে আরব দেশগুলোর নীরবতার নেপথ্যের কারণ

কাশ্মীর ইস্যুতে আরব দেশগুলোর নীরবতার নেপথ্যের কারণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীর ইস্যুতে আরব দেশগুলো যথাযথভাবে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে না। বরং অনেক আরব দেশ সরাসরি ভারতের পক্ষাবলম্বন করে বিবৃতি দিয়েছে। এ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে এক ধরনের আক্ষেপ রয়েছে।

কাশ্মীরি মুসলমানদের অধিকার কেড়ে নিতে ভারতের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সৌদি আরব উভয়পক্ষকে সহনশীলতার উপদেশ দিয়েছে। আর কুয়েত, কাতার, বাহরাইন এবং ওমান এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেয়ারও সাহস করেনি।

অধিকন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মোদি সরকারকে প্রকাশ্য সমর্থন জানিয়েছে।

কেন এই নীরবতা?

ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণে অধিকাংশ আরব দেশ কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিলের বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির তথ্যমতে, ভারতের সঙ্গে আরব দেশগুলোর বার্ষিক ব্যবসায়িক লেনদেন ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ কাশ্মীর ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটেছে।

ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করায় কাশ্মীর নিয়ে সৌদি আরবের অবস্থানও স্পষ্ট নয়। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যদিও বিষয়টি নিয়ে সৌদি যুবরাজ ও বাহরাইনের শাসকের সঙ্গে কথা বলেছেন।

কিন্তু কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘের বৈঠকে তারা কোনো সহায়তা করবেন কি না তা জানাননি। ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, গত শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আরব দেশগুলো কাশ্মীরি মুসলমানদের পক্ষে কোনো প্রকারের সমর্থন বা সহযোগিতা করেনি।

কাশ্মীর বিষয়ে সৌদি আরব জানিয়েছে, উপত্যকাটির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাছাড়া বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে তারা।

ভারতের সঙ্গে আরব দেশগুলোর ব্যবসায়িক সম্পর্ক : মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৭০ লাখের বেশি ভারতীয় প্রবাসী বসবাস করেন। ভারতীয় এ নাগরিকদের মধ্যে ব্যবসায়ী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, গাড়িচালক ছাড়াও বিশালসংখ্যক শ্রমিক রয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পর্ক রাখে। দেশটিতে ভারতীয় প্রবাসীর সংখ্যা প্রচুর। বলা হয়ে থাকে, প্রতি তিনজন আমিরাতির মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক।

গত বছর ভারতের সঙ্গে আরব আমিরাতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫০ হাজার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই মুহূর্তে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ ভারত।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া তথ্য মতে, এ বছর আরব আমিরাতে ভারতীয় বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৫ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া দুবাইয়ের রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ও ব্যাপক ভারতীয় বিনিয়োগকারী রয়েছেন।

এ কারণে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ভারতে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ড. আহমেদ আল বান্না বলেন, রাজ্যের পুনর্গঠন স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে উন্নতির লক্ষ্যে মূলত এটি করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী এটি একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ভারত সরকারের দেয়া তথ্যমতে, সৌদি আরবে ২৭ লাখ ভারতীয় নাগরিক বসবাস করেন। ইরাকের পর ভারতকে সবচেয়ে বেশি তেল সরবরাহ করে সৌদি আরব। গত বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের আওতায় সৌদি আরব ভারতকে ২৭ বিলিয়ন ৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের তেল রফতানি করেছে।

এমনকি যখন কাশ্মীরের এই অবস্থা ঠিক সেই মুহূর্তে গত ১২ আগস্ট সৌদি আরবের বড় বিনিয়োগ পাওয়ার কথা জানালো ভারত। এ দিন ভারতের রিল্যায়ান্স গ্রুপের ‘অয়েল টু কেমিক্যালস’ (ওটিসি) বিভাগের ২০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়ার ঘোষণা দেয় সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকো।

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে রাজ্য বিলোপ ও অঞ্চলটিকে দ্বিখণ্ডিত করে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উপমহাদেশের ইতিহাসে এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী গুরুত্বও বিশাল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ কাশ্মীরসহ এই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এবং দীর্ঘমেয়াদে মুসলিমপ্রধান এই এলাকাটির মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য বদলে দেবে।

কাশ্মীর নিয়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের এমন সুপরিকল্পিত কৌশলের বিষয়ে আরব দেশগুলোর মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিমের কাছে বিস্ময়ের। বিশেষত মুসলিমবিশ্বের স্বঘোষিত মোড়ল সৌদি আরব এ বিষয়ে কোনো নিন্দা, প্রতিবাদ বা উদ্বেগ প্রকাশ না করায় মর্মাহত হয়েছে। সূত্র : ডন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে