বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৯:৩০:০১

যে কারণে আরব আমিরাতের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করে না যুক্তরাষ্ট্র

যে কারণে আরব আমিরাতের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করে না যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লিবিয়ায় জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারকে উৎখাতের অভিযানে নামা সামরিক কমান্ডারের অর্থ যোগানদাতা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। কাতারের ওপর অর্থনৈতিক অবরো'ধ আরোপ করেছে যে দেশগুলো, তাদের মধ্যে নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে আছে ইউএই। 

যদিও যুক্তরাষ্ট্র এই সং'ঘা'ত নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ)-এর সাবেক কর্মীদেরকে হ্যা'কার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে দেশটি। তাদেরই করা কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনলাইন নজরদারি পরিচালনা করে আবুধাবি, যার আওতায় মার্কিন নাগরিকরাও পড়েছে।

তবে, এ ধরণের মার্কিন স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকা সত্ত্বেও, আবুধাবির বি'রু'দ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ নজরদারি চালায় না। সাবেক তিন সিআইএ কর্মকর্তার বরাতে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

খবরে বলা হয়, সিআইএ গুপ্তচরবৃত্তি ব'ন্ধ করে দিয়েছে এমন নয়। আগে থেকেই আবুধাবির ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করে না সিআইএ। কিন্তু কয়েক দশকে আমূল পাল্টে গেছে আরব আমিরাতের প্রভাব ও চরিত্র।

সম্পদশালী এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলে বহু যু'দ্ধে অর্থায়ন করছে। গোপন অভিযান পরিচালনা করছে। আর্থিক প্রভাব ব্যবহার করে আঞ্চলিক রাজনীতির গতিধারাই দেশটি পাল্টে দিচ্ছে। যার ফলে অনেক সময় মার্কিন স্বার্থও বি'ঘ্নি'ত হচ্ছে।

একজন সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা বলেন, আমিরাতের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও রাজনৈতিক উ'চ্চাকা'ঙ্খার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিআইএ'র অবস্থান গ্রহণে ব্যর্থ হওয়াটা অনেকটা কর্তব্য অবহেলার শামিল। অবশ্য, আমিরাত পুরোপুরি এড়িয়ে চলে না মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। 

যেমন, এনএসএ দেশটির ভেতরে ইলেক্ট্রনিক নজরদারি চালিয়ে থাকে। কিন্তু এ ধরণের নজরদারিতে ঝুঁ'কি যেমন কম, তেমনি ভালো ফলও আসে কম। এনএসএআমিরাতেরর কর্মকান্ড সম্পর্কে সম্যক অবহিত আছেন এমন দু'জন ব্যক্তি রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সিআইএ কোনো গুপ্তচরবৃত্তি করে না। 

বরং, আমিরাতের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে 'লিয়াজোঁ' বজায় রেখে চলে সিআইএ। যার ফলে অভিন্ন শ'ত্রু যেমন ইরান ও আল কায়েদা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে থাকে দুই সংস্থা। কিন্তু সিআইএ সেখানে ‘মনুষ্য গোয়েন্দা তথ্য’ (হিউম্যান ইন্টিলিজেন্স) সংগ্রহ করে না। 

অর্থাৎ, সেখানে সিআইএ'র কোনো কর্মী নেই। নেই সরকারের ভেতরে কোনো তথ্যদাতা বা গুপ্তচর। যদিও হিউম্যান ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমেই সবচেয়ে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সিআইএ খুবই অল্প কিছু দেশের ক্ষেত্রেই এভাবে কাজ করে। 

কথিত ‘দ্য ফাইভ আইজ’ জোটভুক্ত দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও কানাডার ক্ষেত্রেই সিআইএ সরাসরি গুপ্তচরবৃত্তি করে না। এই চার দেশ ছাড়া পৃথিবীর যে দেশেই গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন স্বার্থ রয়েছে, সেখানে সিআইএ গোয়েন্দাগিরি চালায়। অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্রও এক্ষেত্রে বাদ যায় না।

মধ্যপ্রাচ্যে আরেক প্রভাবশালী মার্কিন মিত্র সৌদি আরব। এই দেশটি তেল যেমন উৎপাদন করে, তেমনি মার্কিন অস্ত্র কিনে থাকে। কিন্তু ইউএই’র ওপর গোয়েন্দাগিরি না চালালেও, সিআইএ প্রায়ই সৌদি আরবকে টার্গেট করে। 

কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, অতীতে বেশ কয়েকবার সৌদি গোয়েন্দারা সিআইএ এজেন্টদের ধরে ফেলতে সক্ষম হয়, যারা কিনা সৌদি সরকারের ভেতর থেকে তথ্যদাতা রিক্রুট করার চেষ্টা করছিল। সৌদি গোয়েন্দা সংস্থা প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে কিছু করে না। তবে গোপনে ঠিকই সিআইএ’র রিয়াদ স্টেশন চীফের সঙ্গে দেখা করে ওই সিআইএ কর্মকর্তাদের নীরবে দেশ থেকে নিয়ে যেতে বলে।

সাবেক সিআইএ এজেন্ট ও লেখক রবার্ট বায়ের বলেন, ইউএইতে হিউম্যান ইন্টিলিজেন্স না থাকাটা সিআইএ’র একটি ব্য'র্থতা। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের রাজপরিবারগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পারবারিক দ্বন্দ্বের ব্যাপারে সবচেয়ে কার্যকর তথ্য থাকা উচিত সিআইএর কাছে।


‘বেপরোয়া রাষ্ট্র’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ইউএই'র ভেতর সিআইএ'র গোয়েন্দা তৎপরতা না থাকাটা উদ্বে'গজন'ক। কেননা, আমিতাব এখন বেপরোয়া রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। লিবিয়া, কাতারের মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছাড়াও আফ্রিকাতেও দেশটি তৎপরতা চালাচ্ছে।

সুদানে ইউএই বছরের পর বছর ধরে শত শত কোটি ডলার দিয়ে প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশিরকে টিকিয়ে রেখেছিল। পরে তাকে পরিত্যা'গ করে তার বি'রু'দ্ধে অভ্যুত্থান ঘটানো সামরিক নেতাদের সাহায্য দেয় ইউএই। 

আবুধামি সমর্থিত নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী জুনে কয়েক ডজন বেসামরিক বি'ক্ষো'ভকারীকে হত্যা করে, যারা কিনা বেসামরিক শাসন ও নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করছিল। ইউএই আফ্রিকার আরেক দেশ ইরিত্রিয়া ও স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডেও সামরিক ঘাঁটি বানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি হর্ন অব আফ্রিকায় যেখানেই পরখ করতে যাবেন, দেখবেন সেখানে আমিরাত আছে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সারা লি হোয়াইটসন বলেন, ‘নিকটবর্তী অঞ্চল ছাড়িয়ে বহুদূর অবদি নিজেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে জানান দিয়েছে ইউএই। হোক সেটা সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া বা জিবুতি বা ইয়েমেন, ইউএই কোথাও কারও তোয়াক্কা করছে না।’ 

ইয়েমেনে ইউএই ও সৌদি আরব মিলে ইরান-সমর্থিত হুতি বি'দ্রো'হীদের বি'রু'দ্ধে লড়াইরত জোটের নেতৃত্বে আছে। দেশটির বিমান হামলায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। পাশাপাশি, লাখ লাখ মানুষ দু'র্ভি'ক্ষের শিকার হয়েছে। ফলে এক মানবিক সংকটের সূচনা হয়েছে সেখানে।

মার্কিন কংগ্রেস সম্প্রতি সৌদি আরব ও ইউএই’র কাছে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি প্রস্তাবনা পাস করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই প্রস্তাবনার ওপর ভেটো দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের পর থেকে ইউএই মার্কিন লবিস্টদের পেছনে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার খরচ করেছে। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে