মৃত্যু নিয়েও ব্যবসা!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জন্মটা কারো হাতে ছিল না৷ মৃত্যুও কারো হাতে নেই তবে আপনি চাইলে মৃত্যুর সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেন। কী ভাবে স্মরণীয় করে রাখতে চান নিজের মৃত্যুকে? রংবেরঙের কফিন রয়েছে, চাইলে অস্থিভস্মকে মহাকাশে বা চাঁদে ছড়িয়ে দিতে পারেন, বা তা দিয়ে রঙিন রত্ন বানাতে পারেন, এমনকি দারুণ সুন্দর 'শেষ বার্তা'ও লিখে দেব৷ জাপানের বাসিন্দাদের কাছে এই রকম প্রস্তাবই রাখছে সে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি৷ জন্মের থেকে মৃত্যুর হার জাপানে বেশ খানিকটা বেশি৷ গত বছর মারা গিয়েছেন ১৩ লক্ষ জন৷ অন্য দিকে, জন্মেছে ১০ লক্ষ শিশু৷ আর, বয়স্কদের সংখ্যাও বিশ্বের মধ্যে দ্রুততম হারে বাড়ছে জাপানে৷ বর্তমানে জাপানের জনসংখ্যার চার ভাগের একভাগের বয়স ৬৫ বছর ও তার বেশি৷ তাই ওই কোম্পানিগুলির মতে, এই ক্ষেত্রটাতে 'ব্যবসা বাড়ানো'র দারুণ সুযোগ রয়েছে! টাইমস অপ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।
টোকিয়োতে ইতিমধ্যেই 'এন্ডেক্স' প্রদর্শনীতে নিজেদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে এ রকম প্রায় ২০০টি জাপানি কোম্পানি৷ তাদের একটির প্রতিনিধি কোইচি ফুতিজার কথায়, 'জাপানে প্রতি বছর ১২ লক্ষ মৃত্যু ঘটে৷ আর আমাদের তাতামি মাদুরের বিক্রি ৬০ হাজার৷ তাই পণ্যের প্রচারে এসেছি৷'
জাপানি ঐতিহ্য অনুসারে ঘরের মেঝেতে খড় দিয়ে তৈরি 'তাতামি মাদুর' থাকে৷ 'জাপানিরা তাতামি মাদুরের উপর জীবন কাটায়৷ তাই বলা হয়, তারা মরতে চায় ওই মাদুরের উপরেই, প্রতীকি অর্থে নিজের ঘরেই৷ কিন্ত্ত অনেকেরই মৃত্যু হয় হাসপাতালে৷ তাই অন্তত কফিনের মধ্যে তাতামি মাদুর চায় তারা', বললেন ফুতিজা৷
আর অন্যান্য কোম্পানিগুলির স্টলে? রয়েছে কফিন, কফিন-বহনকারী মোটরগাড়ি, বাহারি স্মৃতিস্তম্ভ, অস্থিভস্ম রাখার পাত্র (আর্ন)৷ রীতি মেনে সত্কারে আসা আত্মীয়-পরিচিতদের 'কফি উপহার দিন', এই বলে কফি ব্যবসায়ীরা দোকান সাজিয়ে বসেছেন৷ প্রদর্শনীতে এসেছেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও- যাতে 'নিয়মমাফিক' সত্কার সম্পন্ন করতে তাঁদেরও ডাক পড়ে!
'কিছু মানুষের ইচ্ছা ছিল মহাকাশে যাওয়ার', বললেন 'গ্যালাক্সি স্টেজ' কোম্পানির হিরোহিসা দেগুচি৷ মৃতের চিতাভস্মকে বিশেষ ক্যাপসুলে পুরে রকেটে চাপিয়ে মহাকাশে পাঠায় এই কোম্পানি৷ এই পরিষেবার দাম পড়ে ৩,৭০০ ডলার৷ অথবা ক্যাপসুলটিকে স্যাটেলাইটে রেখে আসলে আগামী ২৪০ বছর ধরে জিপিএস সিস্টেমে সেটির অবস্থান নজরে রাখতে পারবে মৃতের পরিবার আর এতে খরচ পড়বে ৮,০০০ ডলার৷ ক্যাপসুলকে চাঁদে পাঠানোর খরচ ২১,০০০ ডলার৷ 'হার্ট ইন ডায়মন্ড'-এর মতো কোম্পানির প্রস্তাব, মৃতের চুল বা অস্থিভস্ম দিয়ে কমলা-নীল-সবুজ ইত্যাদি নানা রঙের পাথর বানান- আকৃতি ও 'ক্যারাট'-এর হেরফেরে দামটা ৩ থেকে ২০ হাজার ডলারের মধ্যে পড়বে৷ কোম্পানির ডিরেক্টর নাওতো কিকুচির কথায়, 'এই ধরনের পাথরের অলঙ্কার বিবাহিত মহিলারাই বেশি করান৷ মৃত্যুর পর স্বামীর পরিবারের সঙ্গেই তাদের সমাধিস্থ করা হয়৷ তাই এই ধরনের অলঙ্কারের সাহায্যে নিজের পরিবারের প্রিয়জনদের 'স্পর্শ' তারা পেতে পারেন৷' সামগ্রিক ভাবে এই শিল্পের একটা নামও দেওয়া হয়েছে- 'শুকাত্সু', বা মৃত্যুর প্রস্তুতি৷ এটা আসলে শব্দের খেলা৷ জাপানি ভাষায় একই রকম শুনতে অন্য শব্দটির অর্থ 'চাকরির প্রস্তুতি'!
তবে দাই-ইচি লাইফ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সমাজবিজ্ঞানী মিদোরি কোটানির বক্তব্য, সমীক্ষা বলছে সত্কারের পিছনে খরচ করার প্রবণতা কমাচ্ছে জাপানিরা৷ তাই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলির সামনে চ্যালেঞ্জ হল, নিত্যনতুন পণ্য উদ্ভাবন করে আরও দেশবাসীকে এতে আগ্রহী করে তোলা! কোটানির কথায়, 'যা-ই হোক, মরবেন তো একবারই!'
২১ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই
�