দাবী মেনে নিলো নেপাল, খুশি ভারত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অবশেষে নেপাল সমস্যার জট খোলার সম্ভাবনা দেখছে ভারত। দীর্ঘদিন টালবাহানার পর নেপালের মন্ত্রিসভা রোববার মধেসিদের দাবিগুলি বিবেচনা করার এবং ২টি দাবি মেনে নিয়ে সংবিধান সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত তিন মাস ধরে এই দাবিগুলি নিয়ে নেপালের তরাই অঞ্চলে ব্যাপক আন্দোলন চলছিল, যার জেরে ভারত থেকে জ্বালানি তেল–সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
গত তিন মাসে এই আন্দোলনে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা সকলেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মধেশি। এদিনও এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে দিল্লি বারবার আবেদন জানিয়েছিল সমস্যা নিরসনের জন্য পদক্ষেপ করতে। এখন নেপাল সরকারের সিদ্ধান্তে দিল্লি খুশি।
মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেপালের উপ–প্রধানমন্ত্রী কমল থাপা ফোনে কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে। পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রতিবেশী ও শুভচিন্তক হিসাবে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিবাদ থেকে উদ্ভূত সঙ্কট নিয়ে ভারত যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিল।’ এখন সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি পরিপক্কতার পরিচয় দিতে পারবে বলে ভারত আশাবাদী।
এ কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত এই ঘটনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। ২০ সেপ্টেম্বর নেপালের নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। আর তার পরেই আগুন জ্বলে ওঠে তরাই অঞ্চলে। সেখানকার অধিবাসীদের একটা বিরাট অংশই ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যাদের বলা হয় মধেসি। এরা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। নতুন সংবিধান নিয়ে এদের আপত্তি ছিল মূলত তিনটি কারণে।
এক, সংবিধানে জনসংখ্যা অনুযায়ী আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কোনও ব্যবস্থা নেই। দুই, দেশকে যেভাবে ৭টি প্রদেশে ভাঙা হয়েছে, তাতে সর্বত্রই তারা সংখ্যালঘু হয়ে গেছেন। তিন, তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে প্রায়ই ভারতীয়দের বিয়ে হলেও নতুন সংবিধানে বলা হয়েছে, মেয়েদের বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ে হলে তাদের ছেলেমেয়েরা নেপালের নাগরিকত্ব পাবে না।
ভারত বারবার আবেদন জানিয়েছে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের জন্য। আজ সেদেশের মন্ত্রী সোমপ্রসাদ পান্ডে জানিয়েছেন, মধেসিদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করতে সংবিধান সংশোধন বিল আনা হচ্ছে। প্রদেশগুলি গঠিত হলে তার তিন মাস পর তা পর্যালোচনা করা হবে। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনের কথাও ভাবা হবে। তবে এই সিদ্ধান্তগুলি মধেসিদের খুশি করবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। মধেসিদের আন্দোলনের মধ্যে ভারতীয় ট্রাকগুলি নেপালে ঢুকছিল না।
তাদের বলা হয়েছিল, ঝুঁকি নিয়ে সেদেশে ঢোকার কোনও প্রয়োজন নেই। এর ফলে নেপালে জ্বালানির ব্যাপক সমস্যা হয়। সেদেশের বহু মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে চলে যান। অবস্থার ফায়দা তুলতে এগিয়ে আসে চীন। ভারতেও অনেকে নরেন্দ্র মোদির কড়া মনোভাবের সমালোচনা করেন।
কিন্তু নেপাল যে ভারতের বিকল্প হতে পারে না, তা নেপালের অজানা নয়। চাপ তৈরি করে লাভ হবে না বুঝে অবশেষে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষের সঙ্গে আপস করে নেওয়ার রাস্তা নিয়েছে নেপাল সরকার। এখন অপেক্ষা মধেসি আন্দোলনকারীরা এ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার।
২২ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস
�