শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৯, ০২:৫৪:২৭

মুকুট হারাচ্ছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমান! বিকল্প ক্রাউন প্রিন্স হচ্ছেন আহমেদ বিন

মুকুট হারাচ্ছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমান! বিকল্প ক্রাউন প্রিন্স হচ্ছেন আহমেদ বিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মুকুট হারাতে পারেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান! গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন খবর প্রচারিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘটনার কারণে সৌদির রাজপরিবারে ক্রাউন প্রিন্সকে নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এর কারণ হিসেবে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তার নেয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কারণে রাজ পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে জানিয়ে বলা হচ্ছে, যুবরাজ সালমান রাজপরিবারকে সুরক্ষা দিতে পারবেন না। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা।

সম্প্রতি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের পর সৌদি রাজতন্ত্রের পরবর্তী উত্তরাধিকারী বিবেচনা করা হয় ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে। রাজপরিবারে বর্তমানে সবচেয়ে ক্ষমতাশীল ব্যক্তি তিনি। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

গেল এক বছরে নারীদের ওপর থেকে বিভিন্ন কঠোর বিধি-নিষেধ তুলে নিয়ে কট্টরপন্থি সৌদিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন প্রিন্স সালমান। তার এমন সব সিদ্ধান্তকে সৌদির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে ব্যাপক সমালোচিতও হয়েছেন তিনি।

তবে এবার এসব বিষয়কে ছাপিয়ে যে তথ্য জানা গেছে, ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্ব নিয়ে অনেকে বিরক্ত। প্রিন্স সালমান ক্ষমতাকে কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেজন্য তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছেন তা রাজ পরিবারসহ সৌদির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ হুমকি বাড়িয়ে তুলছে।

এমন গুঞ্জনের মধ্যে সালমানের বড় ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে (৭৭) তার বিকল্প হিসেবে দেখছেন রাজপরিবারের বেশ কিছু সদস্য। রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে এখবর জানিয়েছে রয়টার্স।

বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশটির দুটি স্থাপনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভ'য়া'ব'হ হা'ম'লার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে সৌদিতে এতো বড় হা'ম'লার ঘটনা ঘটেনি। বিশেষ করে তেলনির্ভর সৌদির অর্থনীতির একটি বড় অংশই তাদের তেলক্ষেত্রের ওপর নির্ভরশীল। 

ওই হা'ম'লার পর সৌদির তেলের যোগান কমে যাওয়ায় বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। ওই হা'ম'লার পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রফতানিকারক দেশটির নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা প্রদানে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ পরিবারের সদস্যরা।

সৌদির রাজ পরিবারে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার সদস্য রয়েছেন। তাদের অনেকের মধ্যেই ক্রাউন প্রিন্স সালমানকে নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত তেলক্ষেত্রে হা'ম'লার ঘটনায় দো'ষীদের শ'না'ক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে ক'ঠো'র কোনো অবস্থানও নেয়া সম্ভব হয়নি।

তাই ক্ষমতাসীন রাজপরিবার ও ব্যবসায়ী অভিজাতদের কয়েকজন সদস্য সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ বিদেশী কূটনীতিক এবং রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, অভিজাত পরিষদের কয়েকজন বলছেন- যুবরাজের প্রতি তাদের কোনো আত্মবিশ্বাস নেই। আরও চারটি সূত্র ও জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিকের কাছ থেকে একই কথার পুনরাবৃত্তি শোনা গেছে।

ইরানের বিরুদ্ধে খুব বেশি ক'ঠো'র অবস্থানে চলে যাওয়ায় এসব ঘটছে বলে প্রিন্স সালমানকে দো'ষারো'প করছেন রাজ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। সম্প্রতি সৌদি আরবের কয়েকজন সমালোচক বলেছেন, ইরানের প্রতি এমবিএসের আ'গ্রা'সী পররাষ্ট্রনীতি এবং ইয়েমেন যু'দ্ধে জড়িত হওয়ার সুবাদে সৌদি আরব হা'ম'লার শিকার হয়েছে। 

পাঁচটি সূত্র ও এক জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা খাতে কোটি কোটি ডলার খরচ করেও হা'ম'লা থেকে সৌদিকে যুবরাজ রক্ষা করতে পারছে না।

সাম্প্রতিক নিউইয়র্কে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেছিলেন, সৌদি আরবের দিকে ধেয়ে আসা শত শত দূরপাল্লার ক্ষে'পণা'স্ত্র প্র'তিরো'ধ করেছে আমাদের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। 

আদেল আল-জুবায়ের বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বরের হা'ম'লা শ'না'ক্ত করতে ব্য'র্থতার ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ৩০০ ফুট উচ্চতা দিয়ে উড়ে আসা ছোট বস্তু শ'না'ক্ত করা খুবই কঠিন।

জুবায়েরের এমন বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে সরকারি চক্রের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, প্রিন্স সালমান এমন সব কর্মকর্তাকে বসিয়েছেন, যারা আগের লোকদের তুলনায় কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।

এদিকে সৌদি পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী বলছেন, রাজপরিবারের অনেক সদস্যই মনে করেন একমাত্র আহমেদ বিন আবদুল আজিজই তাদের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারেন।

রাজ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য মনে করছেন, সালমানের মুকুট আবদুল আজিজের মাথায় পরানো হলে আর্ন্তজাতিক সব আ'ক্র'ম'ণ, ষ'ড়য'ন্ত্র ও হু'ম'কি থেকে রেহাই পেতে পারে সৌদি আরব। নিরাপদ থাকবে সৌদি। 

তবে যুবরাজ সালমানের বি'রু'দ্ধে বলা এসব তথ্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন তার প্রতি অনুগত একটি সূত্র। সেই সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক ঘটনা সৌদি যুবরাজ্যের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনিই পরবর্তী উত্তসূরি হতে যাচ্ছেন।

বিশেষ করে বাদশাহ সালমান জীবিত থাকাকালীন যুবরাজ সালমানের মুকুট হারানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাদশাহ সালমানের বর্তমানে ক্রাউন প্রিন্সের বি'রো'ধিতা করা রাজপরিবারের পক্ষে অসম্ভব। এমনটাই বলছেন সৌদি আরবের ভেতরের লোকজন ও পশ্চিমা কূটনীতিকরা।

তাছাড়া নারীদের ওপর থেকে গাড়ি ও বিমান চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, মাঠে বসে নারীদের খেলাধূলা উপভোগ করাসহ কর্মক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগামী করানোয় খুব অল্প সময়ে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ২১ জুন মুহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং তার স্থলে মুহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ মনোনীত করা হয়। একই সঙ্গে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে নায়েফকে তার সব পদ থেকে অপসারণ করে তার সকল ক্ষমতা মুহাম্মদ বিন সালমানকে দেয়া হয়।

১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট জন্ম নেয়া এই সৌদি যুবরাজকে পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলা হয়ে থাকে। তিনি আল সৌদ রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। তার পিতা বাদশাহ সালমানের পরেই তার ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে