মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৯:৪২

নভোচারীর বর্ণনায় মহাকাশে জীবনযাপন

নভোচারীর বর্ণনায় মহাকাশে জীবনযাপন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহাকাশে আসা যাওয়া এখন নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছে। তেমনই একটি অভিযানের বর্ণনা দিয়েছেন ব্রিটিশ নভোচারী টিম পিক। যা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামরে ‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে-দেখবো এবার জগৎটাকে’ মনে করিয়ে দেয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ ষ্টেশনে অবস্থানরত ক্রুদের সাথে যোগ দিয়েছেন এ নভোচারী। সেখানে পৌঁছে টিম পিকের জীবন কেমন কাটছে তা সরাসরি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি। জার্মানীর কোলন শহরে অবস্থিত ইউরোপের এস্ট্রোনট সেন্টারে বসে সাংবাদিকরা কথা বলেন টিম পিকের সঙ্গে। মহাকাশের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এখানে দিনে ১৫ বার সুর্যদয় ও সুর্যাস্ত হয়। এটা মানুষের পক্ষে মানিয়ে নেয়াটা একটু অন্যরকম। সুর্যটা দিনে একবার উঠবে আর একদিনে অস্ত যাবে এটা দেখেই আমরা অভ্যস্ত। তবে তিন দিন কেটে যাবার পর যতটা খারাপ হওয়ার কথা ছিল ততটা খারাপ লাগে নি। টিম পিক মহাকাশে গেছেন গত সপ্তাহে। সাড়ে ছয় ঘন্টার মতো যাত্রা শেষে যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ ষ্টেশনের অন্যান্য ক্রুদের সাথে। আগামী ছয়মাসের জন্য এটাই হবে তার বাড়ি ঘর। টিম পিকের সাথে ছিলেন আরো দুজন নভোচারী। একজন রুশ আরেকজন আমেরিকান। কাজাখিস্তান থেকে মহাকাশ ষ্টেশনে সয়্যুজ রকেটে করে যাত্রা শুরু করেন বৃটিশ এই নভোচারী। তিনি বলেন, আমি যা কল্পনা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক ভাল। এটা বর্ননা করা কঠিন। যে সয়্যুজে (মহাকাশ যাওয়ার যান) করে আমি এখানে এসেছি সেটা খুবই শক্তিশালী এবং অভিনব একটি যান। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস ষ্টেশনে এসে পৌঁছাতে আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি। এখন ওজনহীন একটি পরিবেশে আমরা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছি। এক সময় আমি কিউপলাতে যাবো এবং সেখান থেকে দেখতে পাবো আমাদের পৃথিবীকে । টিম পিক জানান, প্রথম ২৪ ঘন্টা ছিল খুবই কঠিন। এখানে প্রথম দিকে মাথা ঘোরাচ্ছিল। কোথায় আছি বুঝতে পারছিলাম না। তবে আমার শরীর এত দ্রুত এই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে যে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। আপনার চারপাশে বাতাসের যে পরিবেশ সেটা কানের মধ্যে দিয়ে মস্তিকে একটা বার্তা পাঠাচ্ছে। এখানে বাতাস নেই। তাই আমার মস্তিস্ক এখন এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য টা ধরতে চেষ্টা করছে। টিম পিক বলেন, বিস্ময়করভাবে মহাকাশে চায়ের স্বাদ খুব ভাল। আমি খুব খুশি। পৃথিবীতে আমি যেভাবে আমার নিজের জন্য চা বানাতাম এখানেও একই ভাবে চা বানানো যায়। রান্নাবান্নার কাজে এখানে আমরা পানি ফুটাই না। পানি গরম করলেই চলে। ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়। ফলে এখানে পানি ফুটবে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই। পৃথিবীর সাথে এখানে এই বিষয়ে কোন তফাৎ হবেনা। ষ্টেশনের ভেতওে যে পরিবেশ সেটা পৃথিবীর পরিবেশের মতোই। একই রকমের চাপ, একই তাপ, একই আদ্রতা, তবে এখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা ১০ গুন বেশি। আমরা জানি এই পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০০কোটির মতো। তাদের প্রত্যেকের জীবন আলাদা আবার আমাদের সকলের জীবনের অভিজ্ঞতা প্রায় একই ধরণের। প্রত্যেকদিন আমরা যেসব কাজ করি সেসব বিষয়ে ভেবেও দেখিনা যেমন, সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন বালিশ থেকে মাথা তুলে নেওয়া তারপর বিছানা ছেড়ে আমরা হয়তো একজোড়া সেন্ডেল খুঁজতে শুরু করি। কিন্তু পৃথিবীতে ছয়জন মানুষ আছে যাদের জীবন পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের চেয়ে আলাদা। এই ছয়জন মানুষ আমাদের মাথার ৪০০ কি.মি উপরে আন্তর্জাাতিক মহাকাশ স্টেশনে ভাসছে। ঐ মহাকাশ ষ্টেশনের আকার একটি ফুটবল মাঠের সমান। বলতে পারেন তাদের জীবন একেবারেই আলাদা অথবা আমাদের জীবনের মতোই। যুক্তরাষ্ট্রে নাসার বিজ্ঞানী ড.অমিতাভ ঘোষ বলেন, সেখানে গ্রাভেটি নেই। তার মানে আমরা যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছি ওরা হাঁটতে পারছেনা ওদের শুন্যে ভাসতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের কিছু প্রয়োজন হলে বা বাড়িতে ভুলে গেলে আমরা বাজার থেকে কিনে আনতে পারছি কিন্তু মহাকাশ স্টেশনে ওদের যাওয়ার সামর্থ্য নেই। সবকিছু ঐখানে যা আছে সেটা প্লান করে ব্যবহার করতে হবে। লাগলে হয়তো কিছু মাস পরে আনানো যাবে। তৃতীয়ত স্পেস স্টেশন পৃথিবীর চারদিকে ৯২ মিনিটে একবার ঘুরে আসে তার জন্যে দিনে ১৫ বার সুর্যদয় ও সুর্যাস্ত হয়। এটা মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়াটা একটু অন্যরকম। আমরা পৃথিবীর মানুষেরা একবার সুর্যাস্ত ও সুযর্দোয় দেখতে অভ্যস্ত। নাসার বিজ্ঞানী ড.অমিতাভ ঘোষ আরো বলেন, মহাকাশ স্টেশনে সবকিছুই খুব প্ল্যান করে করতে হয়। জল মুখে দেওয়ার সময় একটা বন্ধ পেয়ালা বা ক্লোজ কন্টেনারে থাকতে হবে আবার মুখ থেকে জল বাইরে ফেলতে বা কুল করতে চাইলে ও তা বন্ধ কোন পেয়ালায় বা ক্লোজ কন্টেনেয়ারে ফেলতে হয় সেটা বাইরে ফেললে সাড়া কেবিনে ছড়িয়ে যাবে। টুথপেষ্ট বা কিছু কাটতে হলে সেই কেচিটা কোথাও গেঁথে রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নাসার এ বিজ্ঞানী জানান, এখানে খাবার হয় খেতে হয় একটু অন্যভাবে। একটা প্যাকেটের ভিতর গরম জল দিয়ে বিভিন্ন খাবার প্রসেসড ফুডরান্না খাবার খেতে হয়। ফ্রিজ ড্রাইড আইসক্রিম, লাইট খাবার, জল দিলে গলে যায়। পৃথিবীর মত ফ্রেশ খাবার খাওয়ার উপায় নেই। এখানে স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাই। ঘুমানোর জায়গায় একটু অন্ধকার হলে ভালো হয় কারণ এখানে দিনে ১৫ বার সুর্য যায় আর আসে তাতে সমস্যা হয়। মহাকাশ স্টেশন একটা ফুটবল মাঠের মতো। মাঝে মাঝে স্টেশনের কাজে এর বাইরে যেতে হয়। যেমন মেকানিকেল পার্টস, হাবল মেরামত তখন এস্ট্রোনটদের বাইরে ৮ ঘন্টার মতো মহাকাশের বাইরে যেতে হয়। কমপক্ষে দুজন এস্ট্রোনটদের সাথে যেতে হয়। একজন আরেকজনের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। বাইরে কিন্তু টেমপারেচার ও প্রেশার ভিশন কম। মহাকাশে দিনে ৩ ঘন্টা ব্যায়াম করতে হয়। তা না হলে শরীরে ক্যালসিয়াম কমে যায় পেশীতে সমস্যা হয়। হাড়ক্ষয় হয়। মহাকাশে একটা কালোর চেয়ে গাড় অন্ধকার একটা পরিবেশে দিনের পর দিন থাকার জন্য প্রয়োজন প্রচন্ড মানসিক শক্তি ও প্রবল ইচ্ছা। সাধারনত মিশনগুলোতে ছয় মাস বা এক বছর থাকা হয়। এস্ট্রোনটরা পরিবারের সাথে কথা বলতে পারে, ই-মেইল করতে পারে। এছাড়া মুভি দেখা ও বিনোদনমূলক কাজ করে প্রানবন্ত থাকতে পারে। সুত্র : বিবিসি বাংলা ২২ ডিসেম্বর ২০১৫/এএমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে