বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ০১:১৭:৫৩

অমুসলিমদের সঙ্গে উইঘুর মুসলিম নারীদের জো'রপূর্বক বিয়ে দিচ্ছেন চীনা সরকার!

অমুসলিমদের সঙ্গে উইঘুর মুসলিম নারীদের জো'রপূর্বক বিয়ে দিচ্ছেন চীনা সরকার!

আলমা সিদ্দিকা : উইঘুরদের জাতিগত দ'ম'নে চীন সরকারের অন্য যে কৌশলটির কথা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এসেছে তা হল, উইঘুর মুসলিম নারীদের সঙ্গে জো'রপূর্বক অমুসলিম চীনাদের বিয়ে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন নানা জাতিগত দ'ম'নের অভিযোগে জ'র্জ'রিত। জাতিগত নি'পী'ড়নের ও দ'ম'নের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি মেলে জিনজিয়ান প্রদেশের উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর। চীনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরকারকর্তৃক ক'ঠো'র ভাবে নিয়ন্ত্রিত। 

যারফলে প্রকৃতপক্ষে সেখানে দমন নি'পী'ড়'নের মাত্রা কতটুকু ভয়াবহ পর্যায়ে আছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন গোপনে ধারণকৃত তথ্যের ভিত্তিতে সেখানকার পরিস্থিতির যে চিত্র ফুটে ওঠে তা সত্যিই চাঞ্চল্যকর। 

জাতিগত দ'ম'নে চীন বেছে নিচ্ছে নানা কৌশল। জিনজিয়ান প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে ব'ন্দিশিবির। তবে চীনা কর্তৃপক্ষের মতে, এগুলো ব'ন্দিশিবির নয় বরং সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া স'ন্ত্রা'সবাদের আ'ত'ঙ্ক যেন উইঘুরদের প্রভাবিত না করে সেজন্য এখানে তাদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এব্যাপারে সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভ'য়'ঙ্ক'র কিছু তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, উইঘুরদের পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের সম্প্রদায়ের কৃষ্টি ও প্রথা থেকে দূরে রেখে সমাজবাদী চীনের অনুগত হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। 

বিদেশে অবস্থানরত উইঘুরদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বিবিসি বলছে, তারা জিনজিয়ান প্রদেশে মুসলিম শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। জার্মান গবেষক ড. আদ্রিয়ান জেনিস জিনজিয়ান প্রদেশে মুসলিমদেরকে আ'ট'কে রাখার বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন। 

তার মতে, বন্দিশিবিরের পাশাপাশি শিশুদেরকে সার্বক্ষণিক দেখভালের ব্যবস্থাও করছে সরকার। আর মূলত মুসলিম বা অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর কথা ভেবেই এই শিবিরগুলো নির্মিত হচ্ছে। সরকারি প্রকাশিত নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০১৭ সালে জিনজিয়ানে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। 

এদেরমধ্যে উইঘুর বা অন্য মুসলিম শিশুদের ভর্তির হার বেড়েছে ৯০ শতাংশ। এই প্রদেশে ভর্তির হার বৃদ্ধি জাতীয় পর্যায়ে বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। জিনজিয়ানের দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে উইঘুর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে কর্তৃপক্ষ কেবল কিন্ডারগার্টেন স্কুল তৈরিতে ১২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। আর অর্থের বেশিরভাগই ব্যয় হচ্ছে ছাত্রবাস নির্মাণে, যেখানে শিশুদেরকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে।

উইঘুরদের জাতিগত দ'ম'নে চীন সরকারের অন্য যে কৌশলটির কথা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এসেছে তা হল, উইঘুর মুসলিম নারীদের সঙ্গে অমুসলিম চীনাদের বিয়ে। তবে বিষয়টি আলোচনায় আসার পেছনে কারণ হল, এসব বিয়ে সম্পাদিত হচ্ছে জো'রপূ'র্ব'কভাবে।

ফেসবুক ভিত্তিক উইঘুর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপ 'টক টু ইস্ট তুর্কিস্তান'-এ প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজক চীনা পাত্রকে জিজ্ঞাসা করছেন কতদিন যাবৎ তিনি পাত্রীকে চেনেন। জাবাবে পাত্র বলেন, তিনি মাত্র দুই মাস ধরে পাত্রীর সঙ্গে পরিচিত। অন্যদিকে উইঘুর পাত্রীকে দেখা যায়, বিয়ে অনুষ্ঠানে আনন্দিত হওয়ার পরিবর্তে তিনি যেন বি'ষ'ণ্ন ও দুঃ'খভা'রা'ক্রা'ন্ত। 

চীনা সরকারের দ্বারা উইঘুর বি'রো'ধী বিভিন্ন অপতৎপরতার অংশ হিসেবে উইঘুর নারীদের জোর করে অমুসলিম চীনা পুরুষের সাথে বিবাহ করানোর এটি একটি উদাহরণ মাত্র। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে, এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম উইঘুর জাতির অর্ন্তভুক্ত হবে না, যা ক্রমান্বয়ে জাতিগত দমনে সহায়ক হবে।

বাইরের গণমাধ্যম কর্মীরা চীনের অভ্যন্তরে স্বাধীনভাবে তাদের অনুসন্ধান চালাতে পারেনা। এমনকি চীনের অধিবাসীরাও এ ব্যাপারে কথা বলতে নারাজ। জিনজিয়ানের উইঘুরদের ওপর জাতিগত দ'ম'ন চলছে তার যথেষ্ট প্রমাণ মিললেও প্রতিকারের উপায় সত্যিই জানা নেই। উইঘুরদের জাতিসত্তা রক্ষায় মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ একান্তভাবে জরুরি।

লেখক- সাবেক গবেষণা সহযোগী, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস)

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে