বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০১:৫৩:২৯

করুণ পরিণতিই পাকিস্তানি শাসকদের নিয়তি

করুণ পরিণতিই পাকিস্তানি শাসকদের নিয়তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাষ্ট্রদ্রো'হের দায়ে দো'ষী সা'ব্য'স্ত করে মৃ'ত্যুদ'ণ্ড দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে। তবে মুশাররফের এখন দুবাইয়ে। কীভাবে তার মৃ'ত্যুদ'ণ্ড কার্যকর হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা পারভেজ মোশাররফই দেশটির প্রথম সামরিক শাসক, যাকে রা'ষ্ট্রদ্রো'হের দায়ে মৃ'ত্যুদ'ণ্ড দেওয়া হলো। তবে পাকিস্তানি শাসকদের এমন ক'রু'ণ প'রিণ'তি কিন্তু বি'র'ল নয়। 

দেশটির অনেক শাসককেই এমন প'রিণ'তি বরণ করতে হয়েছে। লিয়াকত আলী খান থেকে শুরু করে পারভেজ মোশাররফ—পাকিস্তানি শাসকদের মধ্যে কার প'রিণ'তি কেমন ছিল, তা নিয়েই আজকের এই আয়োজন:

লিয়াকত আলী খান : লিয়াকত আলী খান পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন তিনি।

এর আড়াই বছরের মাথায় খু'ন হতে হয় তাকে। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডির কোম্পানিবাগে এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় আ'ততা'য়ীর গু'লিতে নি'হ'ত হন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে এই হ'ত্যাকা'ণ্ডের কারণ জানা না গেলেও পরবর্তী সময়ে এর র'হ'স্য উ'ন্মো'চিত হয়। 

আলোচিত এই হ'ত্যাকা'ণ্ডের ৬৪ বছর পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক গো'প'ন নথি থেকে জানা যায়, আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারের সহায়তায় লিয়াকত আলী খানকে হ'ত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।

গো'প'ন ওই নথির বরাতে জানা যায়, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে মার্কিন তেল কোম্পানিগুলোকে ইরানে তেল–সংশ্লিষ্ট চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার জন্য লিয়াকত আলী খানকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে ইরানের বেশ সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু লিয়াকত আলী খান যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাবে রাজি হননি।

এমনকি পাকিস্তান থেকে মার্কিন ঘাঁ'টি স'রা'নোর দাবি জানান তিনি। যে কারণে তাকে হ'ত্যার পরিকল্পনা করে সিআইএ। কৌশলগত কারণে তারা আফগানিস্তানের শ'র'ণা'প'ন্ন হয়। আফগানিস্তানও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিল। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর জনসভায় ভাষণ দিতে উঠলে সৈয়দ আকবর নামের এক আ'ত'তা'য়ী লিয়াকত আলী খানের বুক বরাবর দুটি গু'লি করেন। তৎ'ক্ষ'ণাৎ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে।

জুলফিকার আলী ভুট্টো : পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত চরিত্র। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কাছে আ'ত্মস'ম'র্পণের পর ইয়াহিয়া খানের জায়গায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৭৩ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু স্ব'স্তিতে ক্ষ'ম'তা ভোগ করতে পারেননি তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, ভুট্টোর 'একনায়কতান্ত্রিক' আচরণের কারণে পাকিস্তানজুড়ে ক্ষো'ভ দানা বাঁ'ধতে থাকে। তার গ্রহণযোগ্যতাও দু'র্ব'ল হতে থাকে। এই সুযোগে ১৯৭৭ সালে ভুট্টোকে হ'টিয়ে ক্ষ'মতা দ'খ'ল করে নেন জিয়াউল হক। অথচ জুলফিকার আলী ভুট্টোই তাকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

শুধু ক্ষ'ম'তা হা'রানোই নয়, ভুট্টোর জন্য অপেক্ষা করছিল আরও বড় দ'ণ্ড। ১৯৭৪ সালে এক রাজনৈতিক প্র'তিদ্ব'ন্দ্বীর বাবাকে হ'ত্যার দায়ে দো'ষী সা'ব্য'স্ত হন ভুট্টো। রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। অবশেষে ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল মাঝরাতে রাওয়ালপিন্ডি কারাগারে ভুট্টোর মৃ'ত্যুদ'ণ্ড কার্যকর করা হয়।

জিয়াউল হক : জুলফিকার আলী ভুট্টোকে উৎ'খা'ত করে ক্ষ'ম'তা দ'খ'ল করেছিলেন যিনি, সেই জেনারেল জিয়াউল হকের প'রিণ'তিও সুখকর হয়নি। ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষ'ম'তায় আসেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষ'ম'তা আঁকড়ে ছিলেন জিয়াউল। ১৯৮৮ সালের ৭ আগস্ট রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৪০০ মাইল দক্ষিণে বাহওয়ালপুর থেকে রাজধানীতে ফিরছিলেন তিনি। 

পাকিস্তানে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরনল্ড রাফেল ও মার্কিন সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হারবার্ট এম ওয়াসমও তার সঙ্গে একই উড়োজাহাজে ছিলেন। স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে বাহওয়ালপুর থেকে আকাশে ওড়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বি'ধ্ব'স্ত হয় প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান। এতে উড়োজাহাজে থাকা ৩১ জন নিহত হন।

এই দু'র্ঘ'ট'না ঘিরে শুরু থেকেই র'হ'স্যের গন্ধ পেয়েছিলেন অনেকে। গত বছর এই দু'র্ঘ'টনার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল বলে দাবি করেন পাকিস্তানের সিনেটর মুশাহিদ হোসেইন। পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, জিয়াউল হককে হ'ত্যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের তৎকালীন সা'ম'রিক প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করেছিল।

বেনজির ভুট্টো : ভুট্টো পরিবারের দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানের শীর্ষ ক্ষ'ম'তার অধিকারী হয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো। তিনি জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে। হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়া বেনজির ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে জিতে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু ক্ষ'ম'তার মেয়াদ শেষ করতে পারেননি তিনি। ১৯৯০ সালে তিনি ব'রখা'স্ত হন। 

১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু সেবারও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি, উৎ'খা'ত হন তিন বছর পরেই। এরপর একপ্রকার স্বেচ্ছা নি'র্বা'সনে চলে যান বেনজির। ২০০৭ সালের অক্টোবরে পুনরায় পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। তার দেশে ফেরার দিনই করাচিতে ভ'য়াব'হ বো'মা বি'স্ফো'রণে শতাধিক ব্যক্তি নি'হ'ত হন।

সৌভাগ্যবশত ওই ঘটনায় বেঁচে যান বেনজির। কিন্তু দুই মাস পর সৌভাগ্য আর সঙ্গ দেয়নি তাকে। লিয়াকত আলী খানকে যেখানে হ'ত্যা করা হয়েছিল, রাওয়ালপিন্ডির সেই এলাকাতেই ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর এক নির্বাচনী জনসভায় আ'ত্মঘা'তী বোমা হা'ম'লায় নি'হ'ত হন বেনজির।

নওয়াজ শরিফ : তিনবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু কোনোবারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। ১৯৯০ সালের ১ নভেম্বর প্রথমবার ক্ষ'ম'তায় আসেন নওয়াজ। তিন বছর পূরণের আগেই ক্ষ'ম'তা ছাড়তে হয় তাকে। ১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। 

তখন ক্ষ'ম'তা ছাড়তে হয় আড়াই বছরের মাথায়। ২০১৩ সালের নির্বাচনে জিতে ফের ক্ষ'ম'তায় আসেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু দু'র্নী'তির অভিযোগে সেবারও ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে। অ'ভিযো'গ প্রমাণিত হওয়ায় বর্তমানে দু'র্নী'তির মামলায় ১০ বছরের কা'রাদ'ণ্ড ভোগ করছেন নওয়াজ। একই মামলায় তার মেয়ে মরিয়ম শরিফকেও সাত বছরের কা'রাদ'ণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, গার্ডিয়ান, ডন, জিও টিভি, পাকিস্তান টুডে ও প্রথম আলো।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে