বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী, ২০২০, ১০:২৬:২০

ভারতের সরকারি তালিকা থেকে মুসলিমদের উৎসব বাদ

ভারতের সরকারি তালিকা থেকে মুসলিমদের উৎসব বাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের উৎসবের তালিকা রয়েছে। রয়েছে দুর্গাপুজো থেকে বড়দিন, বুদ্ধ পূর্ণিমা থেকে নানক জয়ন্তী, মহর্ষী দয়ানন্দ সরস্বতী জয়ন্তী থেকে ছটপুজো। আছে গাঁধী জয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস বা ইংরেজি নববর্ষের উল্লেখও। 

নেই শুধু মুসলিমদের কোনও ধর্মীয় উৎসবের উল্লেখ। ভারতের জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার বা এনপিআর-এর সদ্য প্রকাশিত ম্যানুয়ালে এই বিস্ম'য়কর ধর্মীয় বৈ'ষম্যের বিষয়টি নজরে আসতেই শুরু হয়েছে স'মালো'চনা। তবে এ ক্ষেত্রে বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকার একা কাঠগড়ায় নয়। এর আগে, ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের জমানায় যে এনপিআর ম্যানুয়াল প্রকাশিত হয়েছিল, তাতেও কোনও মুসলিম ধর্মীয় উৎসবের উল্লেখ ছিল না। 

এ দেশের ধর্মীয় জনসংখ্যার নিরিখে হিন্দুদের পরেই মুসলিমরা। ৩৭ পাতার এনপিআর ম্যানুয়ালের ৩২ নম্বর পাতায় অ্যানেক্সার ৫-এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে হিন্দু ছাড়াও বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-শিখ ইত্যাদি বিভিন্ন ধর্মের উৎসবের সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে। 

কিন্তু জনসংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুসলিমদের কোনও উৎসব বা স্মরণীয় দিন বা তিথির উল্লেখ নেই। কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আরও অনেকেই এর মধ্যে ধর্মীয় বি'ভা'জন বা বৈ'ষ'ম্য দেখতে পাচ্ছেন। এনপিআর ম্যানুয়ালে ধর্মীয় উৎসব বা রীতির উল্লেখ কেন রয়েছে?

২০১১ সালের এনপিআর ম্যানুয়ালে তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া ছিল না। ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে গোটা দেশে এনপিআর-এর জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করতে চায় কেন্দ্র। সেই তথ্য সংগ্রহের সময় জন্ম তারিখ এবং স্থানের কথা জানাতে হবে এ দেশের বাসিন্দাদের। 

এ বারে ওই তালিকার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে— অনেকেই নিজের জন্মের দিন ক্ষণ সঠিক মতো বলতে পারেন না। সে জন্য বড় কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা অথবা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব বা ধর্মীয় রীতির কথা মনে করিয়ে সম্ভাব্য জন্মতথ্য নথিবদ্ধ করার নিদান রয়েছে ওই ম্যানুয়ালে। আর প্রশ্নটা উঠছে এখানেই। 

ভারতে বসবাসকারী কোনও মুসলমান যদি তার জন্মের দিন ক্ষণ না জানেন বা ভুলে গিয়ে থাকেন, তাদের উৎসব বা রীতির কথা মনে করিয়ে এনপিআর-এ জন্মতথ্য নথিবব্ধ করার দায় কি নিতে চাইছে না কেন্দ্র? কেউ যদি অন্য ধর্মের উৎসব বা অনুষ্ঠানের কথা মনে করতে না পারেন, তা হলে কি ওই ব্যক্তির বিষয়ে 'সম্পূর্ণ তথ্য' থাকবে না এনপিআর-এ?

এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উৎসবের কথা মনে করিয়ে তার জন্মের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করানোর কথা বলা হলেও, কেন মুসলমানদের কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠানের বিষয়ের উল্লেখ  নেই ম্যানুয়ালে? কোনও মুসলমানের কাছে তো, তার ধর্মীয় উৎসবের বিষয়টি মনে থাকাই স্বাভাবিক। ফলে এই ক্ষেত্রে মুসলামানদের ব'ঞ্চি'ত করা হচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। 

এরপিআর-এর সঙ্গে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) আইনের মিলও খুঁ'জে পাচ্ছেন কেউ কেউ। তাদের মতে ওই আইনে (২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে) আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যারা এ দেশে এসেছেন, তারা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি বা খ্রিস্টান হলে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। মুসলমানদের ক্ষেত্রে সেই 'সুবিধা' দেওয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রেও ধর্মীয় বি'ভা'জন করা হয়েছে বলে মনে করছে বিরো'ধীরা।

তবে শুধু ধর্মীয় উৎসব বা রীতি নয়, জন্মের বছর মনে না পড়লে, কোনও ঘটনার কথাও মনে করানোর চেষ্টা করবেন তথ্য সংগ্রহে নি'যু'ক্ত সরকারি কর্মীরা। যেমন বন্যা, ভূমিকম্প, প্রথম বিশ্বযু'দ্ধ, ডান্ডি অভিযান (১৯৩০), স্বাধীনতার বছর (১৯৪৭), ভারত-চীন যু'দ্ধ (১৯৬২)-সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বলতে পারলেও, সেই তথ্য জন্মসাল হিসাবে এনপিআর-এ লিপিব'দ্ধ করা হবে। সূত্র : এবিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে