সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২০, ০৬:০৯:১৪

যে পাঁচ কারণে ইরান-আমেরিকা সং'কট সমাধান হচ্ছে না

যে পাঁচ কারণে ইরান-আমেরিকা সং'কট সমাধান হচ্ছে না

জোনাথন মার্কাস : ইরানের জেনারেল কাসেম সোলেইমানি হ'ত্যার ঘটনা পুরাদ'স্তুর একটি যু'দ্ধে রূপ নেয়নি। সে হিসাবে প'রি'স্থি'তি কিছুটা শান্ত হয়েছে বলা যেতে পারে। কিন্তু দুইটি দেশের মধ্যে যু'দ্ধ লেগে যাবার মত যেসব কারণ রয়েছে, সেসব কারণের কোনটিই পরিবর্তন হয়নি। কেন এই সং'ক'টের এখনো সমাধান হয়নি, তাই এখানে বর্ণনা করা হলো-

সাময়িক উত্তে'জনা প্রশমন : অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই উত্তে'জনার প্র'শ'ম'নকে পুরোপুরি হ্রা'স বা কমে যাওয়া বলা যাবে না। ইরানের নেতারা- যারা জেনারেল সোলেইমানি হ'ত্যার ঘটনায় স্ত'ম্ভিত হয়েছিলেন, তারা পা'ল্টা হা'ম'লা করার জন্য যা করার সেটা করেছেন। ইরান চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোন ল'ক্ষ্যবস্তুতে হা'মলা করে জবাব দিতে। সুতরাং নিজেদের ভূ'খ'ণ্ড থেকে মিসা'ইল নি'ক্ষে'প করে সেই জবাব দিয়েছে।

কিন্তু তাদের এই প'দক্ষে'পের বা'স্তব এবং রাজনৈতিক সী'মাব'দ্ধতা রয়েছে। তারা খুব দ্রুত কিছু একটা করতে চেয়েছিল, পুরাদস্তুর একটি যু'দ্ধ শুরু করতে চায়নি। সুতরাং এই অধ্যায় এখনো সমাপ্ত হয়নি বলেই ইরানের বিশ্লেষকরা বলছেন। তারা আরো বলছেন যে, ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান বি'ধ্ব'স্ত করার ঘটনাটি নিজে থেকে স্বী'কার করে নেয়াকে পরিস্থিতি শা'ন্ত করার জন্য ইরানের আরেকটি প'দক্ষে'প বলে যে মনে করা হয়, সেটাও ভু'ল। 

ইরানের প্রথমে এই ঘটনায় নিজেদের স'ম্পৃ'ক্ততার কথা অ'স্বী'কার করে। কিন্তু যখন আমেরিকানরা দাবি করে যে, তাদের কাছে বি'প'রীত গোয়ে'ন্দা তথ্য রয়েছে, ইউক্রে'নের ত'দ'ন্তকারীরা মিসা'ইল হা'ম'লার নমুনা দেখতে পান, যখন স্বাধীন ত'দ'ন্তকারীরা বেশ কিছু ভিডিও দেখতে পান যে, বিমানটিকে ভূ'পা'তিত করা হয়েছে, তখন ইরানের সামনে বিষয়টি স্বী'কার করে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।

ইরান যখন খুব তাড়াতাড়ি বুলডোজার দিয়ে বি'ধ্ব'স্ত বিমানের টু'ক'রোগুলোকে পরি'ষ্কার করতে শুরু করে, তখনি পরিষ্কার হয়ে যে, ইরান জানতো যে আসলে কি ঘটেছে। সেটা না হলে দু'র্ঘ'ট'নাস্থ'লের কোন কিছুই ইরান স্পর্শ করতো না। ইরানের এই স্বী'কার করে নেয়ার পেছনে দেশটির অভ্য'ন্তরীণ সম'স্যারও অবদান রয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগেই দেশটিতে দুর্নী'তি আর ভে'ঙ্গে পড়া অর্থনীতির কারণে ব্যাপক বিক্ষো'ভ হয়েছে। এরপরে দেখা যাচ্ছে, কত দ্রুত আবার বিক্ষো'ভ দা'না বে'ধে উঠেছে। সুতরাং এটা আসলে আমেরিকানদের সঙ্গে উত্তে'জনা প্রশ'মন নয়, বরং ঘরে বিক্ষো'ভ হ্রা'সের একটা চেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পাল্টাচ্ছে না : যুক্তরাষ্ট্র কেন কাসেম সোলেইমানিকে হ'ত্যা করলো এবং ইরানের আরেকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ইয়েমেনে হ'ত্যার চে'ষ্টা চালালো? দেশটি দাবি করেছে- হয়তো আইনি কারণে- অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের স্বা'র্থের বি'রু'দ্ধে হা'ম'লা ঠে'কাতে আত্মর'ক্ষা হিসাবে তারা ওই হা'ম'লা করেছে। তবে এই যু'ক্তিতে স'ন্তু'ষ্ট নন অনেক বিশ্লে'ষক অথবা ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্টের অনেক স'মালো'চক। ইরান যাতে বা'ড়াবা'ড়ি না করে, সেজন্য একটি পরি'ষ্কার সী'মা বেধে দেয়ার জন্যই সম্ভবত এই হা'মলা। 

সাময়িকভাবে এটি কাজ করতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যৎ কর্মকা'ণ্ড চালানোর সময় ইরান খুব স'ত'র্কভাবে এগোবে। তবে একই সময়ে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বি'রু'দ্ধে বি'ধ্বং'সী পদক্ষেপ নেয়ারও হু'মকি দিচ্ছেন। আবার তিনি এই ই'ঙ্গি'তও দিচ্ছেন যে, তিনি এখনো মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনতে চান। তিনি এটাকে অন্য কারো স'ম'স্যা হিসাবে মনে করেন। এর ফলে শ'ক্ত বার্তা দেয়ার বিষয়টি দু'র্ব'ল হয়ে যাচ্ছে।

ইরানের অর্থনীতি ধ্বং'স করে দেয়ার কার্যক্রম অব্যাহ'ত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তা তেহরানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারেনি। বরং উ'ল্টো ইরান নিজস্ব ধরণের একটি চা'প প্রয়োগ কৌ'শল বেছে নিয়েছে। একদিকে তেহরানের ওপর দ্বি'গু'ণ চা'প দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, আবার ওই এলাকা থেকে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনতে চাইছে। কিন্তু এই দুইটি জিনিস একই সঙ্গে পাওয়া সম্ভব নয়।

ইরানের কৌশলগত লক্ষ্য একই রয়েছে : ইরানের অর্থনীতি হয়তো ভেঙ্গে পড়ছে এবং দেশটির অনেক বাসিন্দা অখুশি, কিন্তু সেখানে রয়েছে এক 'বিপ্লবী শাসন ব্যবস্থা'। তারা হঠাৎ করেই ক্ষ'মতা ছেড়ে দেবে না। ইরানের ইসলামিক রেভ্যু'লশনারি গার্ডের মতো বাহিনী অনেক শ'ক্তিশালী। তাদের জবাব হচ্ছে, শ'ক্ত হাতে দেশের ভেতর নিয়'ন্ত্রণ রাখা আর যুক্তরাষ্ট্রের চা'পের জ'বাবে পা'ল্টা চাপ দেয়া। সেটা অ'ব্যাহ'তই থাকবে।

ইরানের কৌশলগত লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই অঞ্চল থেকে বিতা'ড়িত করা, অন্তত পক্ষে ইরাক থেকে। অন্তত ইরানের কর্তৃপক্ষের দৃ'ষ্টিভ'ঙ্গি থেকে দেখলে, তেহরানের নীতি অনেক ক্ষে'ত্রেই সফলতা পেয়েছে। তারা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারকে র'ক্ষা করতে পেরেছে এবং ইসরায়েলের বি'রু'দ্ধে নতুন একটি যু'দ্ধক্ষে'ত্রে তৈরি করতে পেরেছে। ইরাকে তাদের বেশ ভালো প্রভাব রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বৈপ'রীত্যের কারণে ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা নিজেদের এখন অনেক বেশি একা বলে মনে করছে। তেহরানের সঙ্গে নিম্ন পর্যায়ে আলোচনার পথ খতিয়ে দেখছে সৌদি আরব, তুরস্ক নিজেদের পথে হাঁটছে আর রাশিয়ার সঙ্গে নতুন বন্ধুত্ব তৈরি করছে। শুধুমাত্র ইসরায়েল মনে করে যে, সোলেইমানি হ'ত্যাকাণ্ড ওই এলাকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে সম্পৃক্ততার পথ তৈরি করেছে। তবে, হয়তো তাদের হ'তা'শ হতে হবে। অভ্য'ন্তরীণ অসন্তোষ এবং অবনতি হতে থাকা অর্থনীতি ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডকে কো'ণঠা'সা করে ফেলতে পারে। তারা দুইটি বড় ধরণের হা'ম'লার শি'কার হয়েছে, ফলে তারা প্র'তিশো'ধের জন্য উন্মুখ হয়ে উঠতে পারে।

ইরাকের অবস্থান নিয়ে বৈপরীত্য : ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সেনা প্রত্যা'হারের বিষয়টি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ইরাকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই দেশটির অভ্যন্তরীণ বিক্ষো'ভে ভুগছে। দেশটির অনেক বাসিন্দাই সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি আর তাদের ওপর ইরানের প্রভা'ব নিয়ে অসন্তুষ্ট। দেশটির পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, যেখানে দেশটি থেকে মার্কিন সৈন্যদের চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কালকেই তাদের বাড়ি চলে যাবে। 

কিন্তু তাদের সেখানে রাখতে হলে বেশ কৌশলী কূটনীতির দরকার হবে। তার বদলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হু'মকি দিয়েছেন, আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে থাকা ইরাকের সরকারের তহবিল জ'ব্দ করা হবে। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত থাকা না থাকার গুরুত্ব রয়েছে। যখন তাদের বাহিনী এবং মিত্ররা ইরাক থেকে ইসলামিক স্টেট যো'দ্ধাদের বি'তা'ড়িত করেছিল, তখন তারা দীর্ঘদিন সেখানে থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। 

আইএস খেলাফত ধ্বং'স হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বাহিনী সেখানে দীর্ঘদিন থাকবে বলেই ধরে নেয়া হয়। যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে চলেই যেতে হয়, তখন ক'থি'ত ইসলামিক স্টেটকে ঠে'কিয়ে রাখা অনেক ক'ঠি'ন হবে। পাশাপাশি সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অবশিষ্ট থাকা সেনাও ঝুঁ'কির মুখে পড়বে। কারণ এই সৈন্যরা প্রধানত ইরাকের মার্কিন ঘা'টিগুলো থেকে সহায়তা পেয়ে থাকে। কিন্তু সেনা উপস্থিতির এই বি'ত'র্কে যদি যুক্তরাষ্ট্র হারে, তাহলে হয়তো জয় হবে ইরানেরই।

পরমাণু শান্তি চুক্তি সত্যিকারের বি'প'দে : বর্তমান এই সং'ক'টের গোঁ'ড়ায় যেতে হলে ফিরে যেতে হবে ২০১৮ সালের মে মাসে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে ইরানের অর্থনীতির ওপর সর্বোচ্চ চা'প দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সেটা চা'প এড়াতে পরমাণু চুক্তির বেশ কিছু শর্ত ল'ঙ্ঘ'নের মাধ্যমে নিজেদের মতো করে পাল্টা চা'পের কৌশল নিয়েছে ইরান। 

চু'ক্তিটি যদি পুরোপুরি বা'তিল না হয়েও যায়, তখন এটা টিকে থাকবে শুধু এই কারণে যে, ট্রাম্প ছাড়া আর কেউ চুক্তিটাকে বা'তিল হয়েছে বলে দেখতে চান না। অন্য কোন পরিবর্তন না হলে চুক্তিটি শেষ হয়ে যাওয়ার প্র'ক্রি'য়া শুরু হয়েছে। এই চুক্তিটি বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তি হওয়ার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের যু'দ্ধের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কারণ ইরানের পরমাণু স্থাপনার ওপর হা'ম'লার সম্ভাবনা ছিল ইসরায়েলের। চু'ক্তির অন্য প'ক্ষগুলোকে যতদিন সম্ভব নিজেদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করবে ইরান। কিন্তু যে প'চ'ন ধরেছে তা শুরু বাড়তেই থাকবে।

ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক চা'প সা'মলাতে ইউরোপীয় উদ্যোগ ছাড়া সমা'ধানের কোন পথ আ'পাতত দেখা যাচ্ছে না। পর্যা'য়ক্র'মে চুক্তিটি যদি ভে'ঙ্গে পড়ে, তাহলে ইরান হয়তো ক্রমেই বো'মা তৈরির দিকে এগিয়ে যাবে। কিন্তু চুক্তিটির ক্ষেত্রে যাই ঘটুক না কেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে আরো সম্পৃক্ত করছে, যখন দেশটির জাতীয় নি'রাপ'ত্তা নীতি সেখান থেকে নিজেদের বের করে আনার কথা বলছে। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে