শিশুর নকশায় আগামীর সিরিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক সময়রে শান্তিপূর্ণ দেশটি ক্রমেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। চতুর্মুখী যুদ্ধের আগুনে জ্বলছে মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধশালী দেশটি। সেখানে এখন কেবলি মৃত্যু, শুধুই হাহাকার। দীর্ঘদিনে গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার অবস্থা এখন সব চেয়ে সংঘাতপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। একদিকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনী, অন্যদিকে আইএসসহ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠি। সেই সঙ্গে যোগ দিয়েছে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।
যুদ্ধের এ ডামাডোলে অন্য অনেক নগরের মতো ধ্বংস হয়েছে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় এবং উদীয়মান শহর আলেপ্পো। আপাতত যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তাই আলেপ্পো পুনরায় গড়ে উঠবে এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
তবে তা মানতে নারাজ সেখানকার বেড়ে ওঠা ১৩ বছরের বালক মোহাম্মদ কাতিশ। তার স্বপ্ন আলেপ্পোকে আবার গড়ে তুলবে সে। ইতিমধ্যে নিজের শোবার ঘরে আগামী দিনের আলেপ্পোর একটি নকশাও তৈরি করেছে মোহাম্মদ। কাগজ, কাঠ, কিছু খেলনা আর গৃহস্থালীর কিছু সামগ্রী দিয়ে গড়েছে স্বপ্নের আলেপ্পোকে।
মোহাম্মদের স্বপ্ন সে একদিন প্রকৌশলী হবে এবং সত্যি সত্যি আবার নির্মাণ করবে নিজের শহরটিকে। আল জাজিরাকে কাতিশ বলেছে, ‘যখন এটি তৈরি করতে শুরু করি, তখন আমি ভবিষ্যতের কথাই ভাবছিলাম।’
সে আরও বলে, ‘আমি বিদেশে পড়াশুনা করতে চাই। এরপর আলেপ্পোতে ফিরে এসে এখানকার ভবনগুলো পুননির্মাণ করতে চাই। আমি স্থাপত্যবিদ অথবা নির্মাণ প্রকৌশলী হতে চাই।’
সে জানায়, স্কুলে তার পছন্দের বিষয় গণিত আর প্রকৌশলবিদ্যা। ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে নকশাটি তৈরি করতে শুরু করে মোহাম্মদ এবং এখনো কাজ করে যাচ্ছে সে।
তার শোবার ঘরের রয়েছে কাগজে নির্মিত শহরের নকশাটি। কয়েক সেন্টিমিটার উঁচু ভবনগুলো আর তার নিচে সবুজ রঙের ঘাস। ভবনগুলোর দরজা-জানালাও বিভিন্ন রঙে সাজানো। তার কল্পিত আলেপ্পোর রাস্তাগুলোও ছোট ছোট খেলনা গাড়িতে পূর্ণ।
কাতিশের নকশার মধ্যে আছে একটি ফুটবল মাঠ। সে বলে, ‘আমি প্রতিদিন আমার বাবার সাথে ওখানে যেতে পছন্দ করতাম। কিন্তু এখন শহরে প্রতিদিন বোমা পড়ে। আমরা আর সেখানে যেতে পারি না।’
মোহাম্মদের নির্মিত অন্য নকশাগুলোর মধ্যে আছে একটি ছোট দুর্গ, হোয়াইট হাউজ এবং আল আকসা মসজিদ। সে জানায়, ওগুলো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মাঝে মাঝে বন্ধুরা দেখতে আসে তার নকশাগুলো।
তার সহপাঠি মোস্তফা বলে, ‘আমি মোহাম্মদের কাজকে খুব পছন্দ করি। আমিও বড় হয়ে একজন নির্মাণ প্রকৌশলী হতে চাই এবং বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমাদের বাড়িগুলো পুনরায় নির্মাণ করতে চাই।’
মোহাম্মদের মা-বাবাও তার এই কাজকে সমর্থন করেন। বাবা বলেন, ‘তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি তাকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে চাই।’ তবে নিজের ছেলের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করার সাথে সাথে আশঙ্কার কথাও জানান তিনি। বলেন, ‘আমি তাকে আলেপ্পোর বাইরে পাঠিয়ে দিতে চাই। এখানে জীবন মানেই বোমা আর ধ্বংস।’
হয়তো একদিন মোহাম্মদ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, কবে শেষ হবে সিয়িয়ার এই ভয়াবহ যুদ্ধ, কবে বাস্তবায়িত হবে তার স্বপ্ন?
২৬ ডিসেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস
�