রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৪:৪৩:৫৭

অপহরণ করলো আইএস, উদ্ধার করলো তালেবান

অপহরণ করলো আইএস, উদ্ধার করলো তালেবান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশ থেকে অপহৃত হবার নয় মাস পর উদ্ধার হলেন এক তরুণ। আর এখন সেই তরুণই তার কাহিনি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরছেন। নবী নামের ঐ তরুণসহ বেশ কয়েকজনকে আইএস জিম্মি করে এবং একপর্যায়ে তালিবানরা তাদের মুক্ত করে। তার গল্প থেকে আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেটের কর্মকাণ্ড বিষয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়। ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে কাজ খুজতে যাবার সময় বাস থেকে ২৫ বছর বয়স্ক নির্মাণশ্রমিক নবীসহ আরো কয়েকজনকে অপহরণ করা হয়। কালো মুখোশ পড়া বন্দুকধারীরা যাত্রীদের মধ্য থেকে সংখ্যালঘু শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের ৩০ জনকে আলাদা করে এবং তাদের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে নিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে এই অপহরণের পেছনে তালিবানরা রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই নবী এবং অন্যান্য জিম্মিরা জানতে পারে যে তাদের অপহরণকারীরা ইসলামিক স্টেটের সদস্য। ‘তারা চাইছিল আমাদের বিনিময়ে আফগান সরকারের হাতে তাদের বন্দী নারী এবং শিশুদের মুক্ত করতে’ বলেন নবী। অপহরণকারীরা জানায় যে তারা পার্শ্ববর্তী উজবেকিস্তান থেকে এসেছে 'জিহাদে অংশ নেয়ার জন্যে'। চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল জিম্মিদের : অপহরণকারীরা জিম্মিদের ভিডিওচিত্র ধারণ করে এবং কিছুদিন পর তাদের দুটি দলে ভাগ করে। নবী এবং তার দলকে একটি পশুর খামারে আটকে রাখা হয়। ‘আমাদের চোখ বেঁধে রাখা হয় এবং হাত পিছমোড়া করে বাঁধা থাকতো’ তিনি বলছেন, ‘কিন্তু আমাদের কান খোলা ছিল, আমরা বুঝতে পারছিলাম কোন আবাসিক এলাকায় আমাদের আটকে রাখা হয়েছে কারণ আমরা নারী ও শিশুদের গলার স্বর শুনতাম এবং আজানও শুনতে পেতাম।’ প্রথমদিকে সরকারী বাহিনীও তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়েছিল। ‘আমাদের মাথার ওপর হেলিকপ্টার উড়ছিল’ নবী বলছিল, ‘গুলির শব্দও পরিষ্কার শুনতে পারছিলাম।’ যদিও সরকার বলছে, অপহরণকারীরা বারবার স্থান পরিবর্তন করায় তারা সফল হতে পারেনি, কিন্তু নবী বলছে নয় মাসে তাদের মাত্র চারবার স্থানান্তর করা হয়েছিল। উদ্ধারকৃত জিম্মিরা জানিয়েছে তাদের নিয়মিত নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হতো এবং একপর্যায়ে একজন জিম্মিকে শিরচ্ছেদও করা হয়। ‘আল্লাহ ছাড়া সবার ওপর থেকে আমরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলাম’ নবী বলছিল। অপ্রত্যাশিত উদ্ধার : শেষপর্যন্ত স্থানীয় তালিবানরা আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালানোর পরই জিম্মিদের মুক্তি ঘটে। জিম্মিদের চোখ বাঁধা অবস্থাতেই ভিন্ন একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তারা প্রবল গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায়। তিনদিন পর পাশতো ভাষায় কথা বলতে বলতে কিছু সশস্ত্র লোক ঐ বাড়িতে উপস্থিত হয়। ‘যখন চোখের কাপড় খোলা হয়, তখন আমি সামনে বিশালাকৃতির দাড়িওয়ালা এক লোককে দাড়িয়ে থাকতে দেখি,’ বলেন নবী। ‘আমি বুঝতে পারি যে এরা তালিবান এবং কিছুটা আস্বস্ত হই।’ জিম্মিদের স্থানীয় তালিবান কমান্ডারের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। ‘চার থেকে পাঁচ'শ মানুষ আমাদের অভিনন্দন জানায়’ বলেন নবী। ‘কমান্ডার আমাদের আলিঙ্গন করতে নিষেধ করেন কারণ দাড়ানোর মতো শক্তিও আমাদের ছিল না।’ নবী বলছেন, উজবেক যোদ্ধা এবং তাদের পরিবার প্রাণপণে যুদ্ধ করে। শেষপর্যন্ত তাদের কয়েকজন নিহত হয় এবং অনেকে আটকও হয়। এখন কাবুলে বাবা-মা, তিন ভাই এবং দুই বোনের কাছে ফিরে এসেছে নবী। তবে এখনো পুরো ধাক্কা সে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। নির্যাতনের কারণে তার কিডনিও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখন তার চিকিৎসা চলছে। বিবিসিকে নবী জানিয়েছে যে সে এখনো সরকারের কাছ থেকে কোন ধরণের অর্থনৈতিক সাহায্য পায়নি। ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে