বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ১০:০৭:৪৫

ভিটেমাটি ছেড়ে পালাচ্ছেন দিল্লির মুসলমানরা

ভিটেমাটি ছেড়ে পালাচ্ছেন দিল্লির মুসলমানরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উত্তর-পূর্ব দিল্লির একটি শহর খাজুরি খাস। এর চার নম্বর গলির মুখটায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তাহির। কাঁদছিলেন পাশে দাঁড়ানো তার দুই পুত্রবধূও। গলির মুখ থেকে তাদের বাড়িটা ছিল খান চার-পাঁচেক বাড়ির পরেই। সেই সুন্দর বাড়িটার এখন আর কোনো চিহ্ন নেই। 

এখন গোটা বাড়িটাই আগুনে ছাই হয়ে গেছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রায় এক হাজার যুবক ঢুকেছিল তাহিরদের গলিতে। তাদের হাতে ছিল ধারালো অ'স্ত্রশ'স্ত্র। গলিতে ঢুকেই তারা মা'রধ'র শুরু করে সেখানকার বাসিন্দাদের। ঘরে ঘরে ঢুকে শুরু করে লু'টপা'ত। তারপর একটা একটা করে বাড়িতে আ'গু'ন লাগাতে থাকে। লোকজন যে বাড়িগুলোর ভেতরে রয়েছেন, তার পরোয়াই করেনি তারা।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ভু'ক্তভো'গী তাহির। বাড়ি দা'উদা'উ করে জ্ব'লছে দেখে প্রাণে বাঁচতে আর কয়েক জন প্রতিবেশীর মতো তিনিও তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে উঠে যান ছাদে। তারপর এক এক করে সেই ছাদ থেকে পাশের বাড়ির ছাদে ঝাঁ'প দেন। সেই বাড়ির ছাদ থেকে তার পরের বাড়ির ছাদে। এভাবে ছাদ ট'পকে ট'পকে তাহিররা পৌঁছে যান গলির শেষ প্রান্তে। 

ওইদিন এভাবে তাহিরের মতো অন্যরাও পালিয়ে প্রাণে বাঁচে। অনেক ক'ষ্টে বাড়িটা বানিয়েছিলেন তাহির। বুধবার বিকেলে দুই পুত্রবধূকে নিয়ে বাড়িটা দেখতে এসেছিলেন তিনি। গিয়ে দেখেন, গোটা বাড়িটাই ছা'ই হয়ে রয়েছে। পাশের বাড়িটারও একই দ'শা। তার পরেরটাও...। নিজের বাড়ির ভ'স্মরূ'প দেখে ডু'করে কাঁদতে থাকেন তিনি। গলির মুখে এসে কাঁদতে কাঁদতে বারবার পেছনে ফিরে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছিলেন। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি।

দুই পুত্রবধূকে নিয়ে চার নম্বর গলির মুখেই বসে পড়েছিলেন তাহির। ফুঁ'পিয়ে কাঁ'দতে কাঁ'দতে তাহির বলতে থাকেন, ''ওরা বাড়িতে আ'গুন লাগিয়ে দিল। আমরা প'ড়িম'ড়ি করে বাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করলাম। কোমর থেকে পঙ্গু আমার বউ। ও পারল না। আমার দুই ছেলেও গু'রু'তর জ'খ'ম হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা মুখে কিছুই দিতে পারিনি। আমার সদ্যোজাত নাতি-নাতনিরা শুধু পানি খেয়ে রয়েছে।''

খাজুরি খাসের চার নম্বর গলিতে যত মুসলিম পরিবার থাকতেন, মঙ্গলবার গভীর রাতের ভ'য়াব'হ ঘটনার পর তারা সকলেই সেখান থেকে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছেন। একই চেহারা মৌজপুর বাবরপুর ও ভাগীরথী বিহারের গলিগুলোর। কোনো মুসলিম পরিবার আর সেখানে নেই। শুধু খাজুরি খাস নয়; মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহার-সর্বত্রই একই দৃশ্য। গাড়ি নিয়ে সবজি বিক্রি করেন মোহাম্মদ এফাজ (২০)।

খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির মুখে দাঁড়িয়ে বলেন, ''এমন ভ'য়াব'হ ঘটনা এর আগে দেখিনি। ওদের সকলের হাতে ছিল ব'ন্দু'ক, লাঠি, ধা'রালো অ'স্ত্রশ'স্ত্র। ওরা 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি দিচ্ছিল। ওই ধ্বনি দিতে দিতেই গলির একের পর এক ঘরবাড়িতে ওরা আ'গুন লাগাতে শুরু করল। গু'লি চালাচ্ছিল এলো'পাথা'ড়ি। তবে খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির হিন্দু বাসিন্দারা ওই সময় মুসলিম প্রতিবেশীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসে।''

মুসলিমদের ঘরবাড়িগুলো যখন পুড়ছে, তখন তারা নিজেদের বাড়ি থেকে বালতির পর বালতি পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রতিবেশী হিন্দু বাসিন্দারা। তবে ইচ্ছা থাকলেও দু'র্বৃ'ত্তদের হা'মলার ভ'য়ে অনেক হিন্দু পরিবার মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারেনি। গত রোববার থেকে টানা স'হিং'স ঘটনার পর খাজুরি খাস, মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহারের মুসলিম এলাকাগুলো এখন খাঁ খাঁ করছে। সূত্র : আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে