শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ০৩:৪০:৩৮

আজ আমার মুসলিম ভাইরা আমাকে রক্ষা করছে: বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে হিন্দু কনে

 আজ আমার মুসলিম ভাইরা আমাকে রক্ষা করছে: বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে হিন্দু কনে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সপ্তাহজুড়েই র'ক্তক্ষ'য়ী স'হিং'সতা চলছে দিল্লির উত্তর পূর্বে । হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যেকার এই স'হিং'সতার মধ্যেও কিছু ঘটনা অনুভব করায় মানুষ মানুষের জন্য। মনে করিয়ে দেয় হিন্দু-মুসলিম ভাইভাই। ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত চান্দ বাগ এলাকার বাসিন্দা সাবিত্রী প্রসাদের বিয়েতে গত বুধবার এমনই এক ঘটনা ঘটেছে।

রয়টার্সের খবরে জানা যায়, মুসলিম অধ্যুষিত চান্দ বাগ এলাকার বাসিন্দা ২৩ বছরের সাবিত্রী প্রসাদের গত মঙ্গলবার ছিল বিয়ের দিন। কিন্তু বিয়ের পোশাকে, হাতে মেহেদি পরে আর হলুদ মেখে কেঁ'দেই যাচ্ছিলেন সাবিত্রী। কারণ বাড়ির বাইরে তখন চলছিল স'হিং'সতা। ওই প'রিস্থি'তিতে বিয়ে ছিল অসম্ভব। সাবিত্রীর বাবা তাই পরদিন বিয়ের অনুষ্ঠান হবে বলে সিদ্ধান্ত নেন। আর এ ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করেন সাবিত্রীর মুসলিম প্রতিবেশীরা। তাঁরাই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাবিত্রীর বিয়ে দেন। যাতে সা'ম্প্রদায়িক দা'ঙ্গার কারণে সাবিত্রীর বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনো বি'ঘ্ন না ঘটে।

গত বুধবার বিয়ের ওই অনুষ্ঠানস্থল থেকে সাবিত্রী রয়টার্সকে বলেন, ‘আজ আমার মুসলিম ভাইরা আমাকে রক্ষা করছে।’

সাবিত্রীর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই প্রধান সড়কটি তখন ছিল র'ণ'ক্ষেত্র। যানবাহন ও দোকানপাটে ভা'ঙ'চু'র চালানো হয়েছিল। পুরো রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল ইট।এ সপ্তাহে চান্দ বাগ ও এর কাছাকাছি এলাকাগুলোতে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কমপক্ষে ৩৮ জন নিহ'ত হয়েছে। আহ'ত হয়েছে শতাধিক। সাবিত্রীর বাবা বোধি প্রসাদ বলেন, সোম ও মঙ্গলবার আমরা ঘরে কেবল ধোঁ'য়া দেখেছি। প'রি'স্থি'তি ছিল ভ'য়ংক'র। আমরা কেবল শান্তি চাই।

বোধি প্রসাদ বলেন, ‘আমরা জানি না এই স'হিং'সতার পেছনে কারা রয়েছে। তবে তারা আমার প্রতিবেশী নয়। বছরের পর বছর মুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে কোনো সমস্যা ছাড়াই আমরা বসবাস করে আসছি। এখানে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে কোনো শ'ত্রু'তা নেই।’

সোমবার সন্ধ্যায় বিয়ের আগের আনুষ্ঠানিকতা ছিল সাবিত্রীর। সেদিন হাতে মেহেদি পরে সাবিত্রী। আর সেদিনই স'হিং'স প'রিস্থি'তি নি'য়ন্ত্র'ণের বাইরে চলে যায়। সাবিত্রী বলেন, ‘বাইরে আমি অনেক হ'ইচ'ই শুনছিলাম। তবে আমি মেহেদি পরা শেষ করি। আশা করেছিলাম, পরের দিন (মঙ্গলবার) প'রি'স্থিতি ভালো হবে। কিন্তু সেদিন প'রিস্থি'তি আরও খা'রাপ হয়ে গেল।’

সাবিত্রীর বাবা বাধ্য হয়ে হবু জামাইকে বললেন, তাদের বাড়িতে আসা বি'পজ্জ'নক। সাবিত্রীর প্রতিবেশী সামিনা বেগম বলেন, ‘আমরা ওর জন্য খুব দুঃ'খ পেয়েছিলাম। বিয়ের কনে বিয়ের দিন বাড়িতে বসে কাঁ'দবে এমনটা কোন মা-বাবা চায়।’

বুধবার সহিং'স'তা কিছুটা কমে যায়। তবে সেদিনও বাজারগুলো ব'ন্ধ ছিল। দাঙ্গা আর স'হিং'সতার ভ'য়ে বাসিন্দারা ঘরের ভেতরেই ছিল।সাবিত্রীর বাবা বলেন, তিনি ছোট করে বিয়ের অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেন।

সাবিত্রীর স্বজন পূজা বলেন, ‘হিন্দু-মুসলিম আমরা সবাই মানুষ। আমরা সবাই দা'ঙ্গার ভ'য়ে ভী'ত। এই দা'ঙ্গা ধ'র্মের জন্য নয়। কিন্তু প'রিস্থি'তি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে।’

সাবিত্রীর বাবার বাড়িতেই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যখন পু'রো'হিত বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছিলেন, সাবিত্রী আর তাঁর বর যখন সাত পাকে বাঁ'ধা পড়ছিলেন তখন বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে পা'হারা দিচ্ছিলেন সাবিত্রীর প্রতিবেশী মুসলিম ভাইয়েরা। তাঁদের মধ্যে একজন আমির মালিক বলেন, ‘আমরা আমাদের হিন্দু ভাইদের সঙ্গে শা'ন্তিতে বসবাস করি।’

বোধি প্রসাদ বলেন, ‘আজ মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাদের কোনো স্বজন আসেননি। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী মুসলিম ভাইয়েরা এখানে আছেন। তাঁরাই আমার পরিবার।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে