শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০, ০৪:৩৭:৩৯

করোনা নিয়ন্ত্রণে যেভাবে এতো সফল দক্ষিণ কোরিয়া

করোনা নিয়ন্ত্রণে যেভাবে এতো সফল দক্ষিণ কোরিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন থেকে শুরু, এরপর একে একে বিশ্বের অন্তত ১৪৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনা ভাইরাস। চীনে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কে'ড়েছে কোভিড-১৯। এখন তা'ণ্ডব চালাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যে। সেদিক থেকে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দক্ষিণ কোরিয়ায়। 

গত মাসে হঠাৎ করেই ব্যা'পক হারে করোনার সং'ক্রমণ শুরু হয় দেশটিতে। দিনে ছয়-সাতশ মানুষও আক্রা'ন্ত হয়েছে সেখানে। কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানেই পরি'স্থিতি নিয়'ন্ত্রণে এনেছে তারা। কি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনলো তারা? চলুন, জেনে নেয়া যাক-

সেলফ কোয়ারেন্টাইন : করোনার উৎস চীনে গোটা হুবেই প্রদেশ অবরু'দ্ধ প্রায় তিন মাস ধরে। ইতালির ১৪টি প্রদেশ, ইরানের অধিকাংশ এলাকাই অবরু'দ্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব- সবাই একই পথে হাঁটছে। ব্যতিক্রম শুধু দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির কোথাও অবরু'দ্ধ পরি'স্থিতি নেই, এমনকি সেখানে করোনা সংক্র'মণের কেন্দ্র ডেগু শহরেও নয়। এর ব'দলে কোরীয় কর্তৃপক্ষ ভাই'রাস আক্রা'ন্ত বা সন্দে'হজনক ব্যক্তিদের বা'ধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম করেছে। এছাড়া, জনগণকে যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা, অনুষ্ঠান পরি'হার, মাস্ক পরিধান এবং পরি'চ্ছন্নতা বজায় রাখতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা : যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ করোনায় ভুক্তভো'গী ইউরোপ, চীন, ইরানের ওপর সরাসরি ভ্রমণ নিষে'ধা'জ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু, সে পথেও হাঁটেনি সিউল। বরং তারা ওইসব দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছে। সেখানে যাত্রীদের শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা, খুঁটিনাটি ভ্রমণ তথ্য, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন : ইউরোপে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে করোনা ভাইরাস: আক্রা'ন্ত ২৩৩৩৯, মৃত্যু ৯৫১

মেডিকেল টেস্টে রেকর্ড : যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকার, রাজ্য সরকার, সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলোতে বিক্ষি'প্তভাবে করোনা ভাইরাস টেস্ট করা হচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত মোট কতজনের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে তা বলতে পারছে না ওয়াশিংটন। দ্য আটিলান্টিক ম্যাগাজিনের হিসাবে, এ সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি হবে না।

সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়'ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনায় করোনা টেস্টে দারুণ সফল দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় তাদের গড় পরীক্ষার হার সবচেয়ে বেশি। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত আড়াই লাখ মানুষের শারীরিক পরীক্ষা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। দেশটিতে প্রতিদিন অন্তত ১৫ হাজার মানুষের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে।

বিনামূল্যে মেডিকেল টেস্ট : সন্দে'হভাজন করোনা রোগীদের মেডিকেল টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। চিকিৎসকরা রেফার্ড করলে সন্দে'হভাজন রোগীরা বিনামূল্যেই টেস্ট করাতে পারছেন। বাকিদের জন্যেও সাশ্রয়ী মূল্যে মেডিকেল টেস্টের ব্যবস্থা করেছে সেখানকার সরকার। দেশটির শতাধিক হাসপাতাল-ক্লিনিকের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস টেস্টে প্রায় অর্ধশত ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরিও কাজ করছে।

তথ্যের ব্যবহার : নাগরিকদের সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে সহজেই ভাইরাস সংক্র'মণের উৎস নির্ধারণ, আক্রা'ন্ত বা সন্দে'হভাজনদের চিকিৎসা ও কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ। কোন এলাকায় ভাইরাস সংক্র'মণের ঝুঁ'কি বেশি, এমনকি কোন দোকান বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কেউ করোনা আক্রা'ন্ত হয়েছেন তাও এসএমএসের মাধ্যমে স্থানীয়দের জানিয়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন : 'মোটেও ভয় পাবেন না', সুস্থ হয়ে উঠেই করোনা ভাইরাস নিয়ে আশার বাণী শোনালেন মার্কিন তরুণী

এসব তথ্য ব্যবহার করেই করোনা সং'ক্রমণের হার আশ্চ'র্যজনকভাবে কমিয়ে এনেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে মৃ'ত্যুহারও অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক কম। ইতালিতে করোনা আক্রা'ন্তদের মৃ'ত্যুহার যেখানে পাঁচ শতাংশ, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃ'ত্যুহার ০.৮ শতাংশ মাত্র।

অতীত থেকে শিক্ষা : কোরিয়া ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কিম উ-জু বলেন, ২০০৯ সালে নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ২০১৫ সালে মার্স প্রাদু'র্ভাবের পর দক্ষিণ কোরিয়ার টেস্ট করার সক্ষ'মতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে তারা এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ।

স্বচ্ছতা : অন্যান্য দেশ যেখানে ভাইরাস সং'ক্রমণের উৎস বা বাহকের পরিচয় প্রকাশে দ্বি'ধান্বিত, সেখানে অবলীলায় এ তথ্য প্রকাশ করছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে ভাইরাস ছড়িয়েছে মূলত শিনচিয়নজি নামে একটি গির্জা থেকে। করোনা সং'ক্রমণের ঝুঁ'কি সত্ত্বেও নিদে'র্শনা অমান্য করে অনুষ্ঠান আয়োজন করায় তাদের কড়া সমালো'চনা করেছে সিউল প্রশাসন। করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্য'র্থতার কারণে ধর্মীয় সংগঠনের বি'রু'দ্ধে ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হয়নি তারা।

অন্যান্য : দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা সং'ক্রমণের কারণে সব স্কুল-কলেজ ব'ন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে রেকর্ড গড়েছে স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে যাওয়ার হার। গত ১৫ দিনে দেশটিতে সাময়িক ব'ন্ধ অন্তত ১২ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দিতে সরকারের কাছে ভতুর্কির জন্য আবেদন করেছে। ডেগু শহরের তিন-চতুর্থাংশ দোকানপাটই ব'ন্ধ। 

মানুষজন ঘর থেকে বের না হওয়ায় শপিংমল-সিনেমা হলগুলো খাঁ খাঁ করছে। ক্যাথলিক গির্জা ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে জমায়েত ও প্রার্থনা বাতিল করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে সেখানকার বাসিন্দাদের সচেতনতা ও শৃঙ্খলা। মূলত জনগণের সাহায্যেই দেশটিতে করোনা মহামা'রি প্রতিরো'ধে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে