শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০, ০৫:২৫:৫৯

'করোনায় না মরলেও না খেতে পেয়ে মরে যাব'

'করোনায় না মরলেও না খেতে পেয়ে মরে যাব'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাজ ব'ন্ধ হয়ে গিয়েছে দশ দিন আগেই। হাতের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বাড়ি ফেরার কোনও উপায় নেই। ভিন্ রাজ্যে আরও বিশ দিন গৃহব'ন্দি থেকে কী ভাবে খাবার জোটাবেন, সেই দু'শ্চি'ন্তায় ঘুম ছুটেছে লালন শেখ, আব্দুল করিম, রোসাই খানদের। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম থেকে রাজমিস্ত্রি ও জোগাড়ের কাজ করতে তারা মুম্বাইয়ে গিয়েছিলেন।

করোনার সং'ক্র'মণ রু'খতে ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। তার জেরে বীরভূমের বিভিন্ন ব্লকের বহু মানুষ ভিন্ রাজ্যে আ'টকে রয়েছেন। দেশের মধ্যে সবচেয়ে সং'ক্র'মিত রাজ্য মহারাষ্ট্রেও এই জেলার বহু মানুষ রয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন লালনদের মতো শতাধিক পুরুষ-মহিলা। এখন তারা মুম্বাইয়ের মসজিদ বন্দরে ছ'টি ঝুপড়িতে (এক একটিতে ১৫-২০ জন) আছেন। বেকা'য়দায় সকলেই। 

বৃহস্পতিবার ফোনে জানালেন, গাড়ি ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বাড়ি ফিরতে পারেননি। লালনের কথায়, ''একে পর্যাপ্ত টাকা নেই। জিনিসের দাম দ্বি'গু'ণ হয়ে গিয়েছে। বাইরের দোকানে খাবার কিনতে গেলে পুলিশ আমাদের উপরে লাঠিচা'র্জ করছে। এ ভাবে কী করে বাঁচব! করোনা ভাইরাসে আ'ক্রা'ন্ত হওয়ার থেকেও বেশি ভয় এখন না খেতে পেয়ে ম'রার। আমাদের জন্য রাজ্য বা জেলা প্রশাসন কি কিছু করবে?''

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার মানুষ অসুবিধায় রয়েছে, এই খবর পাওয়ার পরে চু'প করে বসে থাকবে না। সে ক্ষেত্রে ওই রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। অথবা ওরা রাজ্যের হেল্পলাইন নম্বর বা জেলা প্রশাসনের যে কোনও ধাপে যোগাযোগ করতে পারেন। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে সিউড়ি ১ ব্লকের বাতাসপুর থেকে মাস দেড়েক আগে লালন শেখ মুম্বাই যান। 

মাস দুয়েক আগে ওই ব্লকেরই গরুইঝোড়া গ্রামের আব্দুল করিম, পাড়ুইয়ের কেশবপুরের রোসাই খানও গিয়েছেন রাজমিস্ত্রির কাজে। তারা বলছেন, ''করোনা ছড়িয়ে পড়ছে শুনছিলাম। হুট করেই ২০ তারিখ থেকে কাজ বন্ধ হয়ে গেল। সবাই বলল, দশদিন পর সব খুলবে। কিন্তু এখন সেটা তিন সপ্তাহ হয়ে গেল। বাড়ি ফেরার সুযোগ পাইনি। টাকা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। চাল আলু আনাজের দাম দ্বিগুণ।''

ওই দলেই রয়েছেন ময়ুরেশ্বরের যুবক শেখ হাসিরুল ও তার বাবা, মামা। হাসিরুল বলছেন, ''এখনই এক জনের খাবার দুজনে ভাগ করে খাচ্ছি। দিন কয়েক পরে কী হবে, জানি না।'' পাড়ুই থানার কেশবপুর থেকে যাওয়া মসাই খান বলেন, ''অনেকে স্ত্রী, বাচ্চা নিয়ে এখানে আ'টকে রয়েছে। এ রকম চললে করোনায় না মরলেও না খেতে পেয়ে মরে যাব। স্থানীয় প্রশাসনকে কিছু বোঝানোও যাচ্ছে না।''

জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিং জানান, বাইরে যারা আ'টকে আছেন, তাদের কথা ইতিমধ্যেই ভেবেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তিনি এ রাজ্যের আ'টকে পড়া মানুষের থাকা-খাওয়ার বন্দো'বস্ত করার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ''আমাদের জেলা প্রশাসনের তরফেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাইরে আ'টকে পড়া মানুষজনের পরিবার যদি জেলা পুলিশের কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করেন, সেটা রাজ্য প্রশাসনকে জানিয়ে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।''

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে