রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২০, ০৮:২৫:৫৫

করোনায় গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দৈন্যদশার পথে দক্ষিণ এশিয়া : বিশ্বব্যাঙ্ক

করোনায় গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দৈন্যদশার পথে দক্ষিণ এশিয়া : বিশ্বব্যাঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের হা'নায় খা'দের অতলে তলিয়ে যাওয়ার মুখে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি। মাত্র কয়েক মাস আগেও উন্নয়নের যে আশা দেখা দিয়েছিল, তা ভেঙে চু'রমার করে দিয়েছে এই ভাইরাসের থা'বা। করোনা-মো'কাবিলায় লকডাউনের কোপে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সঙ্গীণ পথে এগিয়ে চলেছে। রবিবার এমন আশ'ঙ্কার কথা শুনিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।

ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা-সং'ক্র'মণের হা'র বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে তুলনামূলক ভাবে অনেক কম হলেও চিকিৎসক ও অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, ভবিষ্যতে এই অঞ্চলই হয়ে উঠতে পারে করোনার 'হটস্পট'। এর জেরে ধসে পড়তে পারে দক্ষিণ এশিয়ারবহু দেশের অর্থনীতি।

এ দিন বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে দারিদ্রের বি'রু'দ্ধে লড়া'ইয়ে যে সুফল মিলছিল, লকডাউনের ফলে তা প্র'বল ঝুঁ'কির মুখে। অনি'শ্চয়তার মুখে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভবিষ্যৎ। লকডাউনের জে'রে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বি'র্প'যস্ত হওয়ার প্রভাব পড়েছে সমাজের সব স্তরেই। তবে অর্থনৈতিক ভাবে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষ'তিগ্র'স্ত। আমদানি-রফতানি নেই, বেহাল পর্যটন শিল্প, বন্ধ কলকারখানা, মার খাচ্ছে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। 

যার জেরে হঠাৎই কাজ হা'রিয়েছেন দিনমজুর বা অস্থায়ী কর্মীরা। স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে সামাজিক বা অর্থনৈতিক সুর'ক্ষা—সবেতেই অনি'শ্চিত তাদের ভবিষ্যৎ। বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ''অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আদর্শ প্রতিকূল পরি'স্থিতির মধ্যে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়া। পর্যটন শিল্প অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থা বি'প'র্যস্ত, বস্ত্র শিল্পে চাহিদা নেই, ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীর কাজেও ধা'ক্কা লেগেছে।''

বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশে ম'ন্দা, কোনও দেশে বা মহামন্দাও দেখা দিতে পারে। চলতি আর্থিক বছরে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হা'র কমে দাঁড়াতে পারে ১.৮ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশে। যদিও বিশ্বব্যাপী করোনা-সং'ক্র'মণের আগে এ অঞ্চলে ৬.৩ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি পূর্বাভাস করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। ওই সংস্থার দাবি, এই আবহে সবচেয়ে ক্ষ'তিগ্র'স্ত হবে মলদ্বীপ। মূলত পর্যটন শিল্পের উপরে নির্ভরশীল মলদ্বীপের জিডিপি ১৩ শতাংশ নীচে নেমে যেতে পারে।

অন্য দিকে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৫.৯ শতাংশ ও ২.২ শতাংশ নিম্নমুখী হতে পারে। অ'স্বস্তিতে দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতির হেভিওয়েট দেশ ভারতও। এ দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হা'র ঘোরাফেরা করবে ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশের মধ্যে। করোনা-পরি'স্থিতির আগে যা ছিল ৪.৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের হুঁ'শিয়ারি, আর্থিক দিকে ক্ষ'তিগ্র'স্ত হওয়া ছাড়াও সামাজিক বৈ'ষম্যের খাতেও বড়সড় ভাটার টান পড়বে ভারত-সহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে। 

সেই সঙ্গে ভারতের উদাহরণ দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দৈ'ন্যদ'শার কথাও উল্লেখ করেছে এই সংস্থাটি। ভারতের জন্যবিশ্ব ব্যাঙ্কের পরামর্শ, ''সরকারের উচিত, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জ'রুরি অবস্থার মো'কাবিলায় উদ্যোগী হওয়া। দেশের নাগরিক, বিশেষত সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণিকে র'ক্ষা করা। পাশাপাশি, অর্থনীতির হাল ফেরানোর জন্য মঞ্চ তৈরি করা।''

ভারতের আর্থ-সামাজিক দিক নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কের দাওয়াই, এক দিকে, পরিযায়ী শ্রমিকদের অস্থায়ী কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করতে হবে, ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিবর্গের ঋণ মকুবে নজর দিতে হবে, প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি-রফতানিজন্য সরকারি লাল ফিতের ফাঁস আলগা করতে হবে। অন্য দিকে, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য দু'র্ব'ল জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটানো, সামাজিক সুর'ক্ষা প্রদান করা বা খাদ্যের সংস্থান করার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফারের স'ত'র্কবাণী, ''এগুলোর বন্দোবস্ত করা না হলে দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধি বা'ধা পাবে। সেই সঙ্গে দারিদ্র দূ'রীকরণে যে ক'ষ্টা'র্জিত উন্নতি হয়েছে, তা-ও বিপরীতমুখী হবে।'' তবে শুধুমাত্র পরামর্শ দিয়েই থেমে থাকেনি বিশ্ব ব্যাঙ্ক। আগামী ১৫ মাসে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি বা বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে চা'ঙ্গা করতে ১৬ হাজার কোটি ডলারেরও আর্থিক সাহায্য দেবে তারা। সূত্র : আনন্দবাজার

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে