শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ০৭:৪৭:৫০

করোনায় মৃত্যুপথযাত্রী বলল, মাকে তো বলে আসিনি

করোনায় মৃত্যুপথযাত্রী বলল, মাকে তো বলে আসিনি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনাভাইরাসের বিরু'দ্ধে যু'দ্ধে ব্রিটেনের হাসপাতালগুলো এখন যু'দ্ধক্ষেত্র। এই যু'দ্ধের একেবারে সামনের কাতারে আছেন জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডা. বিশ্বজিৎ রায় কাজ করছেন লন্ডনের উলউইচে কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের ইমার্জে'ন্সিতে। করোনাভাইরাসের মহামা'রীতে প্রতিদিন তাদের কাছে অবিরাম আসছে জীবন-মৃ'ত্যুর স'ন্ধিক্ষণে থাকা বহু রোগী। এসব মানুষের জীবন বাঁ'চাতে তাদের প্রতিদিনের ল'ড়াইয়ের কথা উঠে এসেছে বিবিসি বাংলায়।

খুব ক'ঠিন একটা দিনের কথা দিয়ে শুরু করি। সেদিন আমার শিফট শুরু হয়েছিল সকাল দশটায়। সেদিন আমার ডিউটি ক্রি'টিক্যা'ল কেয়ারে।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আমার কনসালট্যান্ট চিকিৎসক আমাকে ডাকলেন। বললেন, তুমি ক্রি'টিকা'ল কেয়ারে যাচ্ছো, তোমাকে জানিয়ে রাখি,, দুজন পেশেন্ট আসবে। পথে আছে।

হাসপাতালের ক্রি'টিকা'ল কেয়ারে অ্যাম্বুলেন্সে যখন রোগী আসে, অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা আমাদের আগেই আগাম বার্তা দিয়ে রাখে। যাতে আমরা সব প্রস্তুত রাখতে পারি। পেশেন্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে যাতে আমরা ট্রিটমেন্ট শুরু করে দিতে পারি।

রোগী সম্পর্কে যতটুকু জানলাম, তা হলো, বয়স ৪৩। বাসায় ছিল। তার প্রচ'ন্ড শ্বাসক'ষ্ট। কথা বলতে পারছে না। আমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে রিসা'সিটে'শন ডিপার্টমেন্টে ঢু'কে গেলাম।দশ মিনিট পরেই রোগী আনা হলো। খুব সুঠাম দেহী। অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীরা আমাকে জানালেন, রোগী একটু ডায়াবেটিক, কিন্তু নিয়মিত ঔষধ নেয়। নিয়মিত ব্যায়াম করে।

যখনই কোন রোগীর শ্বাস ক'ষ্ট হয়, তার অক্সিজেনের মাত্রাটা আমরা মেপে নেই। দেখা যাচ্ছে যে এই রোগীকে হাই ফ্লো অক্সিজেন দেয়ার পরও তার অক্সিজেন স্যা'চুরেশন আকা'ঙ্খিত লেভেলে নেই। হাই ফ্লো অক্সিজেন দিলে র'ক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০/৯৫ এর উপরে থাকা উচিৎ, কিন্তু এই রোগীর বেলায় তা ৮২/৮৩তে। কখনো ৭০ এ নেমে যাচ্ছে। এটা খুবই উ'দ্বে'গের ব্যাপার।

তখন আমি সাথে সাথে আমাদের অন্য সহকর্মীদের ডে'কে আনলাম। সবাই চলে আসলো। রোগীর অবস্থা দেখে আমরা ঠিক করলাম, তাকে , তাকে ই'নটি'উবে'ট (শ্বা'সনা'লীতে টিউব ঢো'কানো, যাতে করে ভে'ন্টিলেট'রের মাধ্যমে কৃত্রি'মভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা যায়) করতে হবে।

রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু তখনো তার চে'তনা আছে। তাকে আমরা বোঝালাম, তোমার ভালোর জন্য আমরা তোমাকে ই'নটি'উবে'ট করবো এবং কৃ'ত্রিমভাবে ফুসফুসে অক্সিজেন সা'প্লাই দেয়া হবে। সেজন্য তোমাকে অচে'তন করার দরকার হবে।

রোগী তখন আমাকে বললো, আমার মা আছে। আমার মাকে আমিই দেখাশোনা করি। আমার মাকে কিন্তু আমি কিছু বলে আসতে পারিনি।

কথাটা আমার মনে খুব ধা'ক্কা দিল। এরকম একজন মানুষ, তার মাকে ঠিকমত বলে আসতে পারেনি, জীবন-মৃ'ত্যুর সঙ্গে এই ল'ড়াইয়ের সময় সেটাই তার সবার আগে মনে হচ্ছে।দশ মিনিটের মধ্যে অ্যা'নেসথে'সি'স্ট চলে আসলো। রোগীকে অচে'তন করে ই'নটিউ'বে'ট করা হলো। ইমার্জে'ন্সি থেকে পরে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো আইসি'ইউতে।

এই রোগীর অবস্থা সম্পর্কে আমি পরে খবর নিয়েছি। এখনো ভে'ন্টিলে'টরে আছে। তার কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না। হি'মোফি'লট্রে'শন করতে হচ্ছে। এটা উদ্বে'গের।আমার এখনো কানে বা'জছে তার কথাগুলো। সে বলেছিল, মায়ের প্রতি আমার অনেক দায়িত্ব। মাকে বলে আসতে পারিনি।

আমি এই লোকটির জন্য প্রার্থনা করি। প্রার্থনা করি, বিধাতা যেন এই লোকটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে