আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রাণঘা'তী করোনা ভাইরাসের থা'বায় বিপ'র্যস্ত গো'টা পৃথিবী। ভাইরাসজনিত এ রোগ মূলত মানুষের শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি করে। ফুসফুস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আক্রা'ন্তের বাঁ'চার সম্ভাবনা কমে যায়। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্তদের প্রায় ৯৯ শতাংশই সুস্থ হন। তবে গত প্রায় চার মাসের অভিজ্ঞতা থেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে।
সুস্থ হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে আক্রা'ন্ত ব্যক্তি কতোটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেই মাত্রার ওপর। কিছু আক্রা'ন্ত ব্যক্তির দ্রুতই উপশম হয় আবার কারো বেশ দীর্ঘসময় নানা ধরনের সমস্যা থাকে। এক্ষেত্রে বয়স, লি'ঙ্গ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থা কভিড-১৯ রোগীর অসুস্থতার মা'ত্রা নিয়ন্ত্র'ণ করে।
মৃদু লক্ষণ থাকলে: তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, কভিড-১৯ আক্রা'ন্তদের অধিকাংশেরই শরীরে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়। এ রোগের প্রধান উপসর্গ শুকনো কাশি অথবা জ্বর। তবে সেই সঙ্গে শরীরব্যথা, ক্লান্তিভাব, দুর্বলতা, গলাব্যথা বা জ্বালাপোড়া এবং মাথাব্যথা থাকতে পারে।
কাশি প্রথম দিকে শুকনো থাকবে। তবে কারো ক্ষেত্রে এক পর্যায়ে গিয়ে কাশির সঙ্গে মিউকাস বেরিয়ে আসে। এ মিউকাসে থাকে ফুসফুসের ম'রা কোষ। তার মানে এরই মধ্যে ভাইরাস ফুসফুসের ক্ষতি করতে শুরু করেছে। উপসর্গ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে বাড়িতেই চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে এবং প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথানাশ'ক খাওয়া যেতে পারে।
যাদের মৃদু লক্ষণ তাদের দ্রুতই সে'রে ওঠার কথা। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের রোগীদের জ্বর থাকবে এক সপ্তাহেরও কম। তবে কাশি আরো দীর্ঘ সময় থাকতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ ধরনের রোগীদের সম্পূর্ণ সে'রে উঠতে গড়ে দুই সপ্তাহ লাগে। অন্তত চীনের উপাত্ত এমন ত'থ্যই দিচ্ছে।
উপসর্গ আরো জটিল হলে: কারো ক্ষেত্রে কভিড-১৯ অনেক জটিল রূ'প নিতে পারে। সাধারণত সং'ক্রমণের সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এসব জ'টিলতা দেখা দেয়। শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ও অবন'তি খুব দ্রুত ঘটে। তখন শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং ফুসফুসের প্রদাহ দেখা দেয়। এমনটা হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরো'ধ ব্যবস্থা ভাইরাস সং'ক্রমণের বিরুদ্ধে যু'দ্ধ শুরু করে দেয়। আর পরিস্থিতি জ'টিল হওয়ার অর্থ প্রতিরো'ধ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভাইরাস প্রব'ল এবং শরীরের নানা প্রত্যঙ্গ এরই মধ্যে ক্ষতিগ্র'স্ত হতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে অনেককে অক্সিজেন থেরাপি দেয়ার জন্য হাসপাতালে নিতে হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, ঘন ঘন শ্বাস নেয়ার মতো সমস্যা উপশমে বেশ সময় লাগে। শরীর অত্যধিক সং'বেদনশীলতা দেখায় এবং প্রদা'হ সৃষ্টি হয়।চিকিৎসক সারাহ জার্ভিস বলেন, এ ধরনের রোগীদের সুস্থ হতে দুই থেকে আট সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে ক্লান্তিভাব আরো কিছুদিন থাকবে।
ইনটেনসিভ কেয়ারে নিতে হলে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, আক্রা'ন্তদের ২০ জনের একজনকে আইসিইউতে নিতে হয়। এর মধ্যে উত্তে'জনা প্রশ'মনের ওষুধ প্রয়োগ এবং ভেন্টিলেটরের (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) সহায়তা নিতে হতে পারে। যে কোনো রোগে আক্রা'ন্তকে আইসিইউ বা সিসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন হলে সেই রোগীর সুস্থ হতে বেশি সময় লাগেই। এ ধরনের রোগী সে'রে উঠলে প্রথমে সাধারণ ওয়ার্ডে নেয়া হয়। সেখানে কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর ছা'ড় দেয়া হয়।
ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন ড. অ্যালিসন পিটার্ড বলেন, সিসিইউ থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হতে ১২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কারণ হাসপাতালের বেডে দীর্ঘদিন শুয়ে থাকলে শরীরের পেশীগুলো শিথিল হয়ে যায়। রোগী খুব দুর্বল হয়ে যান এবং তার পেশীর গঠন আগের অবস্থায় ফিরতে বেশ সময় লাগে। এমনকি আবার হাঁটতে সক্ষম করে তু'লতে অনেকের ফিজিওথেরাপিরও প্রয়োজন হয়।
আইসিইউতে থাকা রোগীর চি'ত্তবিভ্র'ম ও মানসিক বি'কার দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ভেল ইউনিভার্সিটি হেলথ বোর্ডের ক্রি'টিক্যা'ল কেয়ার সাই'কোথেরাপি'স্ট পল টুজ বলেন, কভিড-১৯ এর সঙ্গে আরো কিছু জ'টিলতা যুক্ত হতে পারে যেমন, ভাইরাস সং'ক্রমণ জনিত অবসা'দ। এটি খুব বড় ব্যাপার।
চীন ও ইতালির তথ্য-উপাত্ত বলছে, এ ধরনের রোগীদের সারা শরীরে ক্লান্তি, একটু হাঁটাচলা বা নড়াচড়া করলেই ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, ঘন ঘন কাশি এবং অনিয়মিত শ্বাস নেয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। পাশাপাশি প্রচুর ঘুম পায়। পল টুজ বলেন, আমরা জানি এ ধরনের রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
তবে বিষয়টির একেবারে সাধারণীকরণ ঠিক হবে না। কারণ কিছু লোককে আইসিইউতে খুব কম সময়ের জন্য রাখতে হয়। আবার কারো কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ভেন্টিলেটর সহায়তা লাগে। এদের সে'রে ওঠার জন্য আলাদা সময় লাগারই কথা।
করোনা ভাইরাস কি দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে: কভিড-১৯ একেবারেই নতুন রোগ। দীর্ঘমেয়াদে এ রোগের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করার সময় এখনো পাওয়া যায়নি। সুতরাং এ রোগ দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে কিনা সেটি বলা মুশকিল। তবে একই ধরনের সমস্যার সঙ্গে তুলনা করে একটি অনুমান করা যেতে পারে।
যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর দিয়ে বড় ঝড় বয়ে যায় তাদের অ্যাকি'উট রেসপি'রেটরি ডি'সট্রে'স সিনড্রো'ম বা আ'র্ডস নামে একটি সমস্যা তৈরি হয় যা ফুসফুসের বড় ধরনের ক্ষতি করে। পল টুস বলেন, এ সম্পর্কিত প্রচুর নির্ভরযোগ্য ত'থ্য-উপা'ত্ত রয়েছে। এ ধরনের রোগীর এমনকি পাঁচ বছর পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক সমস্যা লেগে থাকতে পারে।
ওয়ারউইক মেডিক্যাল স্কুলের প্রভাষক ডা. জেমস গিল বলেন, এ ধরনের রোগীদের দ্রুত সে'রে উঠতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ধরুন, আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসকরা বললেন, আপনাকে ভেন্টিলেটরে নিতে হবে। আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া দরকার। আপনি কি আপনার পরিবারকে বিদায় জানাতে চান? এ ধরনের পরিস্থিতিতে রোগীর যে ধক'লজনিত বি'কার (পিটিএসডি) তৈরি হবে না সেটির নিশ্চয়তা নেই।
তাছাড়া ক্লান্তিভাব বা এরকম মৃদু সমস্যা কারো কারো মধ্যে কয়েক বছর ধরে থাকতে পারে।
কভিড-১৯ রোগের সুস্থতার হার কেমন: জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত উপাত্ত অনুযায়ী, ২২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪০ জন আক্রা'ন্তের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৫১ জন। তবে এই সংখ্যা গণনার পদ্ধতি একেক দেশে একেক রকম। অনেক দেশ সুস্থ হওয়ার সংখ্যা প্রকাশই করছে না আবার অনেক দেশে মৃদু লক্ষণযুক্ত রোগী হিসাবেই আসছে না।
তবে গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে ধারণা করা হচ্ছে, আক্রা'ন্তদের ৯৯ থেকে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশই সেরে উঠছেন।
দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা: রোগ প্রতিরো'ধ ক্ষমতার স্থায়িত্ব নিয়ে অনেক পর্যবেক্ষণ আছে তবে সপক্ষে প্রমাণ খুবই নগণ্য। কোনো রোগী যদি এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যু'দ্ধে জিতে যান তাহলে নিশ্চিতভাবেই তার শরীরে এর বিরুদ্ধে প্রতিরো'ধ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। চীনসহ অনেক দেশেই দ্বিতীয়বার আক্রা'ন্ত হওয়ার ত'থ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে এটি ভুল পরীক্ষার ফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রব'ল। অর্থাৎ তারা ভাইরাসমুক্ত হওয়ার আগেই নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন।
তবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যু'দ্ধ করতে ও ভ্যাকসিন তৈরিতে এর বিরু'দ্ধে শরীরের প্রতিরো'ধ ব্যবস্থাটি সম্পর্কে জানা খুব জরুরি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ অ্যা'ন্টিব'ডি টেস্টের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সূত্র: বিবিসি।