২০১৫ সালে বিশ্বকে অবাক করা যত ঘটনা-দুর্ঘটনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ২০১৫ সালকে জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক আলো ও মৃত্তিকা বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশ্ব সংস্থা ঘোষিত ‘আলো’ ও ‘মৃত্তিকার’ এই বছরটি এখন শেষ প্রান্তে। ‘মৃত্তিকার’ উপর দাঁড়িয়ে ‘আলোকময়’ এই বছরটির দিকে ঘুরে তাকালে কী দেখতে পাই আমরা, কতোটা আলোকিত ছিল বছরটি? মহাকালের পথে ব্যয়িত বছরটির আশা-নিরাশায় ভরা আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়ে এই আয়োজন।
জঙ্গিবাদের নয়া বিস্তার:
বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক উগ্র ইসলামিপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় গোষ্ঠীটির মদদে সংঘটিত বিভিন্ন জঙ্গি হামলার ঘটনাও গোষ্ঠীটিকে আলোচনার কেন্দ্রে রেখেছিল। এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন অংশে তৎপর বেশ কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। এসব গোষ্ঠীর মধ্যে নাইজেরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম, লিবিয়া ও সিনাইয়ের জঙ্গিগোষ্ঠী অন্যতম। এই বছরটিতেই আইএস তার লড়াই নিজস্ব এলাকা ছাড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়। এসবের মধ্যে ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে চালানো হামলাটি সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। আইএস জঙ্গিদের তিনটি দল প্রায় একই সময় (স্থানীয় সময় রাত ৯টার পর) প্যারিসের চারটি জায়গায় হামলা চালিয়ে ১৩০ জনকে হত্যা করে। প্যারিসের একটি স্টেডিয়ামে বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলার সময় স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ দেখতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ। এর একদিন আগে ১২ নভেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আইএসের বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলায় ৪৩ জন নিহত ও ২৩৯ জন আহত হন। জুলাইয়ে আইএসের একজন অনুগত জঙ্গি
তুরস্কের সুরুকে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৩৩ জনকে হত্যা করে। এর তিনমাস পর গোষ্ঠীটির অনুগত আরো দুই জঙ্গির জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় দেশটির রাজধানী আঙ্কারার এক শান্তি সমাবেশে ১০২ জন নিহত ও ৪০০ জন আহত হন। ৩১ অক্টোবর মিশরের সিনাইয়ে রাশিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২২৪ আরোহীর সবাই নিহত হন। তাদের পেতে রাখা বোমায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে দাবি করে আইএস। বছরের শেষদিকে ২ ডিসেম্বর আইএসের আনুগত্য স্বীকার করা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক পাকিস্তানি দম্পতির গুলিতে ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনোতে ১৪ জন নিহত হন। এছাড়া তিউনিসিয়ার সুসেতে আইএসের অনুগত এক আত্মঘাতীর বেপরোয়া গুলির্বষণে ৪০ জন নিহত, কুয়েতে, সৌদি আরব ও ইয়েমেনে শিয়া মসজিদে গোষ্ঠীটির আত্মঘাতী বোমা হামলায় আরও অন্ততপক্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হন। তবে বছরটির প্রথম উল্লেখযোগ্য জঙ্গি হামলা হয়েছিল শার্লি এবদু নামে প্যারিসের একটি বিদ্রুপ সাময়িকীর দপ্তরে। নিজেদের আল কায়েদার সদস্য পরিচয় দেওয়া দুইভাই এই পত্রিকা দপ্তরে হামলা চালানোর পর একটি ইহুদি বিপণীবিতানে হামলা চালায়। দুটি হামলায় মোট ১৭ জন জঙ্গি ভাতৃদ্বয়ের গুলিতে নিহত হন।
সিরিয়ায় পালমিরা নগরে আইএসের তাণ্ডব:
চলতি বছরের মে মাসে সিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী নগর পালমিরার দখল নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই নগরীতে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি সেখানকার ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনা পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করে ফেলে। বিশেষ করে দুইহাজার বছরের পুরনো বেল মন্দিরটি তারা বিস্ফোরক দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।
আরব ভূখণ্ডে অস্থিরতা:
অস্থিরতার মধ্য দিয়েই চলমান বছরটি পার করে মধ্যপ্রাচ্য। এ অঞ্চলের সিরিয়া ও ইরাকে গৃহযুদ্ধ চলমান থাকলেও এ বছর নতুন করে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইয়েমেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তি শিয়া ইরান ও সুন্নি সৌদি আরবের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেকাংশেই প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। ইয়েমেনের ইরানপন্থি হুতি বিদ্রোহীরা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহর অনুগত সেনাদের সহায়তায় সুন্নি প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে তাড়িয়ে রাজধানী সানাসহ দেশটির অধিকাংশ স্থান দখল করে নেয়। পরে হুতি ও তাদের মিত্র সেনাবাহিনীর অংশটির বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোট বাহিনী। ইয়েমেনের নয়মাসের লড়াইয়ে প্রায় ছয় হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ; এদের প্রায় অর্ধেক বেসামরিক। নিহতদের মধ্যে ছয়শরও বেশি শিশু রয়েছে। এ বছর রাশিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষ হয়ে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের উপর বিমান হামলা শুরু করলে দেশটির গৃহযুদ্ধ এক নতুন পর্বে প্রবেশ করে। আসাদের অনুরোধে বিমান হামলা শুরু করা হয়েছে বলে জানায় রাশিয়া। রুশ বিমান হামলা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনার মধ্যেই সিরিয়ার তুর্কি সীমান্তের কাছে একটি রুশ বোমারু বিমানকে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করে তুর্কি জঙ্গি বিমান। এতে নেটোভুক্ত তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তুরস্কের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে রাশিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশ দুটির শীর্ষ দুই নেতা বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। অন্যদিকে রুশ বিমান হামলায় আইএসের অবস্থান অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। এ বছরটিও ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিমতীর ও জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘাত ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে পার হয়। বছরের শেষ দিকে ওই দুটি এলাকায় ইসরায়েলিদের ওপর ফিলিস্তিনিদের ছুরি নিয়ে হামলায় সহিংসতার একটি নতুন পর্ব শুরু হয়। এর প্রতিক্রিয়ার ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হন। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি ছুরি হামলায় অনেক ইসরায়েলিও নিহত হন।
ইউরোপের শরণার্থী সঙ্কট:
বছরজুড়ে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং লিবিয়া ও অন্যান্য দেশের অস্থিতিশীলতার ঢেউ ভূমধ্যসাগরের পেরিয়ে ইউরোপে গিয়েও পৌঁছেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের বিভীষিকা থেকে ও অন্যান্য অঞ্চলের সহিংসতা থেকে বাঁচতে লাখ লাখ বেপরোয়া শরণার্থী বিপদসঙ্কুল সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়ে হাজির হয়। ভালো চাকরি ও উন্নত জীবনমানের আশায় অন্যান্য দেশ থেকে আসা শরণার্থীরাও এদের সঙ্গে যুক্ত হন। সারা বছর ধরে চলা শরণার্থীর স্রোত বছরের শেষ দিকে ১০ লাখের কোটা অতিক্রম করে।
সমুদ্রপথে শরণার্থীবাহী নৌকাডুবিতে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও অধিকাংশই ইউরোপে পৌঁছতে সমর্থ হয়। শরণার্থীদের চাপে ইউরোপের দুর্বল সীমান্ত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় আর এরমধ্যদিয়ে ইউরোপের জাতীয়তাবাদী ও অভিবাসীবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, যতদিন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলবে আর ইউরোপের অর্থনীতি বেকারদের আকর্ষণ করবে ততদিন ইউরোপকে শরণার্থীর চাপ বহন করে যেতে হবে।
গ্রিসের অর্থনৈতিক সঙ্কট:
বছরের আরেকটি আলোচিত ঘটনা এটি। জানুয়ারিতে গ্রিসের আগাম সাধারণ নির্বাচনে কৃচ্ছ্রতাবিরোধী বামপন্থি সিরিজা পার্টি জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়। ক্ষমতা গ্রহণ করেই নতুন প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপ্রাস জানিয়ে দেন, দাতাদের ঋণ নেবেন তারা কিন্তু শর্ত মানবেন না। বেইলআউট প্যাকেজের শেষ কিস্তির ৭২০ কোটি ইউরো পাওয়ার শর্তে দাতাদের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় গ্রিসকে ঋণ দিতে অস্বীকার করে দাতারা। ঋণ না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয় গ্রিস। আইএমএফ এর ৭১ বছরের ইতিহাসে বিশ্বের অগ্রসর দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে গ্রিস ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এতে ঋণ খেলাপি গ্রিসের ইউরোজোনের সদস্যপদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বেইলআউটের শর্তে মতানৈক্যের কারণে চুক্তি না হলে গ্রিস ইউরোজোন এবং ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। ইউরোজোন ও ইইউ থেকে গ্রিস বের হয়ে গেলে ইইউ এর একক মুদ্রা ইউরোর পতন হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় ইইউর একক মুদ্রা প্রকল্প ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ইউরো হুমকির মুখে পড়ে, ইউরো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এতে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি দেখা দেয়। আর্থিকভাবে গ্রিসও প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়ে। দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির সব ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটিএম বুথ থেকে অর্থের রেশনিং ব্যবস্থা চালু হয়। নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে অনড় দাতাদের সংস্কার প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হন সিপ্রাস। ইউরোপ ও বিশ্ব অর্থনীতি কোনোরকমে বড় ধরনের একটি সংকট এড়াতে সক্ষম হয়।
ওবামার নতুন কূটনীতি:
যুদ্ধকে এড়িয়ে কূটনীতিকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরিকল্পনা এ বছর বেশ সফল ছিল। এ বছর বৈরি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া পথে ঐতিহাসিক অগ্রগতি হয়। এসব দেশের মধ্যে ইরান ও কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বরফ গলা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা পথে বড় ধরনের অগ্রগতি।
ইরানের পরমাণু চুক্তি:
প্রায় দুই বছর ধরে আলোচনার পর চলতি বছরের পূর্ব নির্ধারিত সময়ে (৩০ জুনের মধ্যে) ব্যর্থ হলেও জুলাইয়ে পি৫+১ দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এবং ইরানের মধ্যে বহুল আলোচিত পরমাণু চুক্তি সই হয়। চুক্তির অনুযায়ী, আগামী অন্ততপক্ষে দশ বছরের জন্য ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ কমিয়ে আনবে। বিনিময়ে ধীরে ধীরে দেশটির উপর থেকে পরমাণু সংশ্লিষ্ট সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা, আটকে থাকা দেশটির তেল বাণিজ্যের শত শত কোটি ডলার ছাড় ও নিষেধাজ্ঞার কারণে জব্দ হয়ে থাকা অন্যান্য সম্পদ মুক্ত করার কথা রয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞার কোনো কোনোটি ৩৫ বছর ধরে বলবৎ ছিল। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও ওই চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে। শুরুতে আপত্তি জানালেও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও ওই চুক্তি সমর্থন করেন।
যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা কূটনৈতিক সম্পর্ক:
চলতি বছরেরর ২০ জুলাই দুই দেশে থাকা পরস্পরের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে পূর্ণ দূতাবাসের মর্যাদা দিয়ে ৫৪ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবায় বিপ্লব হওয়ার পর দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়ে। ১৯৬১ সালে কিউবার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরও কিউবার ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল আছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের প্রতি অনুমোদনের জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।
মিয়ানমারের নির্বাচন:
মিয়ানমারের নির্বাচনে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমক্রেসি (এনএলডি) জয়ী হয়েছে।দেশটিতে কয়েক দশকের সেনাশাসন শেষে ২৫ বছরের মধ্যে এই নির্বাচনকেই সবচে গণতান্ত্রিক বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কঠোর নির্বাচনী নিয়মে দেশটির এই ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি ১০ হাজারেরও বেশি পর্যবেক্ষক এই নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচন:
চলতি বছরের ৭ মে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ক্ষমতাসীন ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টি। পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৩৩১টিতে জয়লাভ করে দলটি। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষতায় থেকে যান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। মতামত জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত থাকলেও প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি ২৩২টি আসন পায়। নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক দেয় স্কটল্যান্ডের দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি)।তারা ৫৬টি আসনে জয়লাভ করে।
কানাডার নির্বাচন:
কানাডার পার্লামেন্ট নির্বাচনে জাস্টিন ত্রুদোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি জয় লাভ করেছে। পার্লামেন্টে তৃতীয় অবস্থানে থেকে প্রচারণা শুরু করে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। এর মধ্যদিয়ে দেশটিতে কনজারভেটিভদের প্রায় এক দশকের শাসনের অবসান হয়। ৪৩ বছর বয়সী ত্রুদো দেশটির প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ত্রুদোর ছেলে। পিয়েরে ত্রুদোকে আধুনিক কানাডার জনক হিসেবে মান্য করা হয়। পার্লামেন্টে তৃতীয় স্থানে থাকা কোনো দল পরের নির্বাচনেই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় অর্জন করার ঘটনা দেশটির ইতিহাসে এবারই প্রথম। কানাডার পার্লামেন্টে মোট আসন ৩৩৮টি। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে এই আসনের আইন প্রণেতারা নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে পার্লামেন্টের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন:
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন রক্ষণশীল প্রার্থী মৌরিশিও মাক্রি। তিনি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির ক্ষমতাসীন বামপন্থি দলের প্রার্থী ড্যানিয়েল স্কিওলিকে পরাজিত করেন। আর্জেন্টিনার অন্যতম ধনী ব্যক্তির সন্তান মাক্রির রাজনীতিতে আসার আগে ব্যবসায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াল। মাক্রির এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় পর আর্জেন্টিনায় মধ্যডানপন্থি গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসে। প্রথম দফা নির্বাচনে ড্যানিয়েল স্কিওলি জয়ী হয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিনা ফার্নান্দেজের দলকে ক্ষমতায় ধরে রাখবেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ফিরতি ভোটে সেই হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়।
নেপালে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প:
চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল শনিবার ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় হিমালয় কন্যা নেপাল। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোখারা থেকে ৫০ মাইল পূর্বে ভূপৃষ্ঠের মাত্র ২ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র। ভূমিকম্পে নেপালে ৮ হাজার ৮৫৭ জন, প্রতিবেশী ভারতে ১৩০ জন, চীনে ২৭ জন এবং বাংলাদেশে ৪ জনসহ মোট ৯ হাজার ১৮ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ১৬ হাজারের বেশি মানুষ। এরপর ১২ মে ৭ দশমিক ৩ মাত্রার আরেকটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় দেশটিতে। এতে নেপালে আরো ১৫৩ জন, ভারতে ৬২ জন, বাংলাদেশে ২ জন ও চীনে ১ জনসহ মোট ২১৮ জন নিহত হন। ১৯৩৪ সালের পর এ দুটোই ছিল নেপালে আঘাত হানা সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূমিকম্প। এতে হিমালয় পর্বতের একটি এলাকা আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে যায়।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ভূমিকম্প:
২৬ অক্টোবর হিন্দুকুশ পর্বতমালা এলাকায় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার এক ভূমিকম্প হয়। এতে পাকিস্তানে ২৭৯ জন, আফগানিস্তানে ১১৫ জন এবং ভারতে ৪ জনসহ মোট ৩৯৮ জন নিহত হন।
ঘূর্ণিঝড় প্যাট্রিসিয়া:
২৩ অক্টোবর মধ্য আমেরিকার তিনটি দেশে (গুয়াতেমালা, এল সালভাদর ও নিকারাগুয়া) আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় প্যাট্রিসিয়া। প্রতি ঘণ্টায় ২০০ মাইল বাতাসের গতিবেগ সম্পন্ন এই ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম গোলার্ধের সবেচেয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ড করেছে। ঘূর্ণিঝড়টির আঘাতে তিনটি দেশে ছয়জনের মৃত্যু ও ৪১ লাখ ডলার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তামিলনাড়ুতে ভয়াবহ বন্যা:
চলতি বছরের শেষ দুইমাসের নজিরবিহীন বৃষ্টিপাতে দক্ষিণ ভারতের করমণ্ডল উপকূলের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পাদুচেরিতে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। তবে তামিলনাড়ু ও এর প্রধান শহর চেন্নাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চারশরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং তিনশ কোটি ডলার থেকে অন্ততপক্ষে ১৫শত কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
হজে ভয়াবহ পদদলন, ক্রেন দুর্ঘটনা:
চলতি বছরের হজ মওসুম শুরুর পর ১২ সেপ্টেম্বর মক্কার মসজিদ আল-হারামের সম্প্রসারণ কাজে থাকা একটি ক্রেন ঝড়ে উল্টে পড়লে ১১৭ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার মিনা থেকে জামারায় ‘শয়তানের স্তম্ভে’ পাথর ছুঁড়তে যাওয়ার পথে পদদলনের ঘটনায় সৌদি আরবের সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৭৭৯ জন নিহত হন ও অন্ততপক্ষে ৮৬৩ জন আহত হন। সৌদি সরকারের ওই ভাষ্য সত্বেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অন্ততপক্ষে ২ হাজার ২০০ জন, আহত নয়শরও বেশি এবং নিখোঁজ ৬৫০ জন।
চীনের জাহাজডুবি:
জুনে চীনের ইয়াংজি নদীতে টর্নেডোর আঘাতে একটি যাত্রীবাহী জাহাজ ডুবে প্রায় সাড়ে চারশ মানুষের মৃত্যু হয়। জাহাজের যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। তারা ১১ দিনের এক প্রমোদ ভ্রমণে পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংসু প্রদেশের নানজিং থেকে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর চোংকিংয়ে যাচ্ছিলেন। ক্যাপ্টেনসহ জাহাজটির মাত্র ১৪ জন আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ৭০ বছরে চীনের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বিপর্যয়কর জাহাজডুবির ঘটনা।
জার্মানির বিমান দুর্ঘটনা:
চলতি বছরের ২৪ মার্চ স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ডুসেলডর্ফ যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আল্পস পর্বতমালায় জার্মানির রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা লুফথানসার মালিকানাধীন সাশ্রয়ী বিমান পরিবহন নেটওয়ার্ক জার্মান উয়িংসের একটি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের ১৫০ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। এয়ারবাস কোম্পানির এ৩২০ বিমানটি আল্পসের ডিগনে ও বার্সিলোনেত্তি এলাকার মাঝামাঝি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান ফরাসি কর্মকর্তারা। মানসিকভাবে অসুস্থ বিমানটির কোপাইলট সচেতনভাবে বিমানটির ককপিট ছেড়ে গিয়ে বিমানটিকে দুর্ঘটনায় ফেলেন।
ইন্দোনেশিয়ায় সামরিক বিমান বিধ্বস্ত:
চলতি বছরের ৩০ জুন ইন্দোনেশিয়ায় সুমাত্রায় একটি আবাসিক এলাকায় সামরিক পরিবহন বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৪১ জনের মৃত্যু হয়। বিমানটিতে মোট ১২২ জন আরোহী ছিল, যাদের সবাই মারা গেছে। বিমানটি আবাসিক এলাকার উপর বিধ্বস্ত হওয়ায় বাকিরা নিহত হয়।
জলবায়ু চুক্তি:
জুলাইয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্যারিস সম্মেলনে সই হওয়া চুক্তিটিকে সর্বসম্মতিতে করা একটি ঐতিহাসিক চুক্তি হিসেবে দেখছেন বিশ্বনেতারা। চুক্তিটি আগামী কয়েক দশকের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিশ্ব অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রুখে দেবে বলেও ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ফ্রান্সের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে (২১তম কনফারেন্স অব পার্টিজ বা কপ২১) প্রায় দুইশ দেশের প্রতিনিধিরা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে আলোচনা করেন। অবশেষে সব দেশের সম্মতিক্রমে প্রথমবারের মতো কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়। চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, “যে একটি মাত্র গ্রহ আমাদের আছে তাকে বাঁচাতে এটিই সেরা সুযোগ।” নিম্ন-কার্বনের ভবিষ্যৎ গড়ার চ্যালেঞ্জে এই চুক্তি বিশ্বের জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির মাত্রা ২ সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। কিছু অংশ পালন করার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা ও কিছু অংশ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে পালন করার বিধান সম্বলিত চুক্তিটি ২০২০ সাল থেকে কার্যকর হবে। এই চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা এবং নিয়মিত অগ্রগতি পর্যালোচনার বিষয়ে দেশগুলো নিজেরা আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে প্রতিশ্রুতি পূরণে দেশগুলোর উপর কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা চুক্তিতে রাখা হয়নি।
সুদহার বাড়াল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ:
চলতি বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ এক দশক পর প্রথমবারের মতো সুদ হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে, যার প্রভাব পুরো বিশ্বেই পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের কারণে উন্নয়নশীল অনেকে দেশের ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার খরচ বেড়ে যাবে, যাদের অর্থনীতির গতি ইতোমধ্যে ধীর হয়ে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতি নিয়ে বেকায়দায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বশেষ সুদের হার বাড়িয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর তা কমে ২০০৮ সালে শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছায়। মন্দার সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করছেন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জ্যানেটে ইয়েলেন। আর সুদ বাড়ানোর এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারও চাঙ্গা হয়ে উঠে। বিপরীত দিকেযুক্তরাষ্ট্র সুদ হার বাড়ানোর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার শক্তিশালী হবে, কিন্তু তাতে করে অনেক দেশ ও কোম্পানি ঋণ নিতে সমস্যায় পড়তে পারে এবং প্রবৃদ্ধির গতি নতুন করে জটিলতায় পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইউরোপ যেখানে ঋণ নেওয়ার শর্ত আরও শিথিল করার চেষ্টা করছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র সুদ বাড়িয়ে উল্টো পথে হাঁটছে বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ
মঙ্গলে পানি!:
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মঙ্গলে পানির প্রবাহ রয়েছে- এমন ইঙ্গিত পাওয়ার দাবি করেন নাসার বিজ্ঞানীরা, যা গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে দিক নির্দেশক হবে। নাসার গবেষকরা বলেছেন, সৌর পরিবারের লাল গ্রহটির উপরিভাগে গ্রীষ্মের মাসগুলোতে পানির প্রবাহের চিহ্ন পেয়েছেন তারা। ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে নাসার প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের পরিচালক জিম গ্রিন ঘোষণা দেন, “এতদিন ভাবা হত মঙ্গল একটি শুষ্ক গ্রহ। কিন্তু তা নয়, বিশেষ পরিবেশে তরল পানির সন্ধান মিলেছে মঙ্গলে। “এর মানে হল মঙ্গলে এখনও প্রাণের উদ্ভবের পরিবেশ রয়েছে।” বলেন তিনি। তবে এই পানির উৎস কী কিংবা এর রসায়ন সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা বিজ্ঞানীরা এখনও পাননি। তারা বলছেন, সৌরমণ্ডলে পরিবেশের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার ক্ষেত্রে চিন্তার নতুন খোরাক দেবে এই প্রমাণ।
ইবোলা শঙ্কায় ‘জরুরি অবস্থা’:
চলতি বছরের মার্চে গিনির পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম পাঁচটি অঞ্চলে ইবোলা প্রাদুর্ভাবের কারণে ৪৫ দিনের ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আলফা কন্ডে। নতুন নিষেধাজ্ঞায় যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ইবোলা সংক্রমিত রোগী সনাক্ত হবে সেসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আলাদা করে রাখা হবে। পাশাপাশি এই রোগে মৃত্যুবরণকারীদের সমাহিতকরণের ব্যাপারেও নতুন নিয়ম জারি করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে গিনিতে ইবোলা প্রাদুর্ভাব ছড়িযে পড়ে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)ইবোলা প্রাদুর্ভাবের তালিকা থেকে গিনিকে বাদ দিয়েছিল। কিন্তু পুনরায় সেটি মহামারী আকারে ফিরে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছিল। সেই তালিকায় গিনিসহ লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওনও রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলোতে ইবোলা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বে প্রথম ডেঙ্গুর টিকা অনুমোদন:
চলতি বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু জ্বরের টিকা ব্যবহার অনুমোদন করে মেক্সিকো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, মশাবাহিত এই প্রাণঘাতী রোগে বিশ্বে প্রতিবছর ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ফরাসি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্যানোফি জানায়, ডেঙ্গুভ্যাক্সিয়া নামের এই টিকা উন্নয়নে ২০ বছর ধরে তারা কাজ করেছে। বিশ্বে প্রতিবছর ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বিশেষ করে ক্রান্তীয় ও আধা ক্রান্তীয় জলবায়ুর শহরগুলোর বাসিন্দাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্যানোফি জানিয়েছে, ডেঙ্গুর টিকা তৈরি ও চিকিৎসা পদ্ধতি বের করার পেছনে তারা ১৬০ কোটিরও বেশি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে ১৯৫০-এর দশকে বিশ্বে প্রথম ডেঙ্গু রোগের নথিভুক্ত তথ্য পাওয়া যায়।
‘ঘড়ি বালক’ আহমেদ:
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শিক্ষকদের খুশি করার জন্য নিজের তৈরি করা একটি ঘড়ি নিয়ে স্কুলে হাজির হয়েছিল ১৪ বছরের কিশোর আহমেদ মোহামেদ। কিন্তু স্কুলে আহমেদের নিয়ে আসা ঘড়িটিকে ‘ঘড়ির ছলে বানানো বোমা’ ভেবে পুলিশকে খবর দেয় টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের আর্ভিং শহরের ম্যাকআর্থার হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তবে সুদানি বংশোদ্ভূত বালক মোহামেদকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনেনি পুলিশ। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে। আহমেদ রাতারাতি সেলিব্রেটিতে পরিণত হন। নাসার বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও এ প্রতিক্রিয়ায় শামিল হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে মোহামেদ কাতার ফাউন্ডেশনের দেয়া শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক মেধাবৃত্তি নিয়ে পরিবারসহ কাতার পাড়ি জমান।
প্রথমবারের মতো ভোট দিলেন সৌদি নারীরা:
চলতি বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবে পৌর নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দেশটির নারীরা। এই প্রথম সৌদি নারীরা কোনো নির্বাচনে ভোট দিলেন। ভোট দেওয়া ছাড়াও এই প্রথম সৌদি আরবে নারী প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছেন। যদিও কঠোর শরিয়া আইনে পরিচালিত দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালনার অধিকার নেই; কিন্তু এরপরও এই নির্বাচনে ৫,৯৩৮ জন পুরুষের পাশাপাশি ৯৭৮ জন নারীও বিভিন্ন পদে প্রার্থী হয়েছেন। সৌদি আরবে নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি বিরল ঘটনা। কিন্তু ডিসেম্বরের এই নির্বাচন দেশটির ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘটনা। ১৯৬৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর দেশটিতে কোনো ধরনের নির্বাচন হয়নি।
মেরকেল ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’:
চলতি বছর টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকীটি এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইউরোপে শরণার্থী সংকট এবং গ্রিসের ঋণ নিয়ে সংকট মোকাবেলায় মেরকেলের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে। “মেরকেল অবিচলিতভাবে এমন এক বিশ্বে নৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেখানে এর অভাব রয়েছে,” বলেছেন টাইমের সম্পাদক ন্যান্সি গিবস। মেরকেল টাইমের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হওয়ার খবরের প্রতিক্রিয়ায় তার মুখপাত্র স্টেফান সিবট বলেন, “আমি নিশ্চিত চ্যান্সেলর এটাকে তার কাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে নেবেন।” চ্যান্সেলর হিসেবে ১০ বছর ধরে জার্মানির ক্ষমতায় রয়েছেন মেরকেল।
গাম্বিয়াকে ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা:
চলতি বছরের ডিসেম্বরে গাম্বিয়াকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাম্মে।গাম্বিয়ার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি মুসলমান। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন খাত। সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে গাম্বিয়ার সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয় বলে গেল বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাময়িকভাবে গাম্বিয়ায় অর্থসাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে। ইয়াহিয়া জাম্মে ২১ বছর ধরে দেশটির প্রেসিডেন্টের হিসেবে ক্ষমতায় রয়েছেন।
সাহিত্যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকের নোবেল জয়:
সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বেলারুশের লেখক, অনুসন্ধানী সাংবাদিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ, যার ‘বহুস্বরের’ গদ্যকে সুইডিশ অ্যাকাডেমি অভিহিত করেছে ‘সমকালীন যাতনা আর সাহসিকতার সৌধ’ হিসেবে। তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১২তম লেখক। ৬৭ বছর বয়সী সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ হলেন চতুর্দশ নারী, যিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন। প্রায় অর্ধশতক পর সুইডিশ অ্যাকাডেমি এমন একজন সাহিত্যিককে নোবেল দিল, যিনি মূলত ‘নন-ফিকশন’ লেখক। আলেক্সিয়েভিচের হাত দিয়ে এসেছে ছোটগল্প, প্রবন্ধ আর সংবাদ প্রতিবেদনের সঙ্কলন। তার সবচেয়ে আলোচিত বইগুলোর একটি ‘চেরনোবিলের কণ্ঠ’, যাকে বলা হচ্ছে ভয়ঙ্কর সেই পারমাণবিক বিপর্যয়ের ‘এক মৌখিক ইতিহাস’। একইভাবে ‘জিংকি বয়েজ’ বইটিতে সঙ্কলিত হয়েছে এমন কিছু মানুষের জবানবন্দি, যারা আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধের চাক্ষুষ সাক্ষী। ১৯৪৮ সালের ৩১ মে ইউক্রেইনের ছোট্ট এক শহরে সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচের জন্ম। তার মা ছিলেন ইউক্রিইনিয়ান; বাবা বেলারুশের।
কানাডায় স্বেচ্ছামৃত্যুতে বৈধতা:
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট স্বেচ্ছা মৃত্যুকে বৈধ বলে আদেশ জারি করে। ওই আদেশ অনুযায়ী,দেশটিতে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এখন থেকে চাইলে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করতে পারবেন। ইউরোপের কয়েকটি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ।
লি কুয়ানের মৃত্যু :
চলতি বছরের ২৩ মার্চ ৯১ বছর বয়সে মারা যান আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট একটি বন্দর শহর থেকে সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করেন তিনি। তিনি সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার নেতৃত্বেই ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথপিছু আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে ৫৫ লাখ মানুষের দেশ সিঙ্গাপুর। সূত্র: বিডিনিউজ
২৯ ডিসেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস
�