আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে ব্যবসার কাজে সুদূর কাশ্মীর থেকে তারা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে আসেন। মরশুম শেষে ফিরেও যান। কিন্তু এবার লকডাউনে আ'টকে পড়েছেন। রমজান মাসও শুরু হয়ে গিয়েছে। ঘরে ফেরার জন্য মন আকুল। ফেরার উপায় নেই দেখে বাড়ি থেকে বহু দূরে বর্ধমানেই রোজা রাখেন কাশ্মীরি যুবক মঞ্জুর আহমেদ ও ফায়াজ আহমেদ। কিন্তু তাদের জন্য মসিহার মতো এগিয়ে এলেন এক হিন্দু পরিবার।
নিজের বাড়িতেই মঞ্জুরদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করলেন হিন্দু পরিবার। কাশ্মীরি যুবকদের সেহেরি ও ইফতারও করালেন রাইমণি দাস ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। করোনা আবহেও দেশে সাম্প্রদায়িকতার বি'ষ ছড়াচ্ছেন অনেকেই। সেই পরিস্থিতিতে সম্প্রীতির নজির গড়লেন বর্ধমান শহরের ওই মহিলা। জানা গিয়েছে, কাশ্মীরের শ্রীনগরের হজরতবল এলাকার বাসিন্দা ফায়াজ ও মঞ্জুরের। তারা শালসহ শীতের পোশাক বিক্রির জন্য প্রতি বছর বর্ধমানে আসেন।
থাকেন শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাতছালা এলাকায় রাইমণি দাসের বাড়িতেই। ভাড়ায় থাকেন। আবার মরশুম শেষে তারা শ্রীনগরে ফিরে যান। কিন্তু এবার আর বাড়ি ফিরতে পারেননি তারা। শনিবার থেকে পবিত্র রমজান পাসের রোজা রাখা শুরু করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। ফায়াজ, মঞ্জুরও রোজা রাখেন। কিন্তু মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া সম্ভব নয় লকডাউনের কারণে। তাই রাইমণি দাস নিজের বাড়িতেই নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেন দেন।
রাইমণি বলেন, ''কাশ্মীর থেকে এলেও আমার কাছে ওরা দুইজন আমার ছেলের মতোই। মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারবে লকডাউন চলছে বলে। তাই আমার বাড়িতেই ওদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছি। বাইরে থেকে এসেছেন ওরা। লকডাউনে নিজেদের বাড়ি ফিরতে পারেননি। আমাদের বাড়িতেই রমজান মাসে যা যা নিয়ম ওরা পালন করেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেহেরি, ইফতারেরও ব্যবস্থা করি আমরা।''
কাশ্মীরি যুবকদেরও কল্পনায় ছিল না এমন সুযোগ পাবেন কোনও হিন্দু পরিবারের কাছে। ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে তারা বললেন, ''ধর্ম নিজের নিজের বিষয়। কিন্তু সবার উপরে মানুষ, মনুষ্যত্ব। রাস্তায় হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সেবা সবার আগে করতে হয়। তার ধর্ম পরিচয় ছাড়াই। এটাই মানবিকতা। আর ধর্ম তো আমরা নিজেরা সৃষ্টি করেছি। মনুষ্যত্ব সবার আগে। আর পরিবার আমাদের ধর্ম পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন। অশেষ ধন্যবাদ তাদের।'' সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন