আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই ইসলামী সঙ্গীতের মতো রমজান সবার জন্য বয়ে আনে শান্তি। আনন্দে ভাসে মুসলিমবিশ্ব। তবে আনন্দের পাশাপাশি রমজান রহমত বয়ে আনে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর জন্য। কারণ সারা বছর যেখানে সংগ্রাম করে সংসার চালাতে হয়। সেখানে রমজান মাসে বেকাররাও আয়ের সুযোগ পায়। ইফতারের সুস্বাদু খাবারগুলো পসরা সাজিয়ে বসে তারা। মজার সে খাবারগুলো বিক্রিও হয় প্রচুর। ফলে পকেটভর্তি খুশি নিয়ে পুরো রমজান মাসে হাসি মুখে বাড়ি ফিরে গাজার বাসিন্দারা।
ছয় বছর আগে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন ফারাজ ওদেহ। কিন্তু এখনো কোনো চাকরি পাননি ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ। রমজান মাস এলেই তিনি এক ধরণের মিষ্টি জাতীয় খাবার বানিয়ে বিক্রি করেন। আরব দেশগুলোতে এ ডেজার্টটি খুব বিখ্যাত। নাম ‘কাতায়েফ’। সাধারণত রমজান মাসেই এ খাবারটি খাওয়া হয়। দেখতে পুলি পিঠার মত। অর্ধচন্দ্রাকৃতির এই খাবারের ভেতরে ক্রিম আর বাদাম দেয়া থাকে। তবে সময় একই আকারের বানানো হয় না। কখনো কখনো গোলও বানানো হয়। এই যেমন- প্যান কেকের মত। ফারাজ বলেন, ‘এই বিশেষ খাবারটি বিক্রি করে রমজান মাসে ভালো আয় করি।’
খাবারটি দাম হাতের নাগালে হওয়ায় বিক্রি হয় প্রচুর। সব ধরণের মানুষই এটি ইফতারে খেয়ে থাকে। এক কথায় বলা যায়, রমজানের আর্দশ খাবার। প্রতি কিলো কাতায়েফের দাম পড়ে আড়াই মার্কিন ডলার করে।
ছয় সন্তানের বাবা মোহাম্মদ আল-সোসি (৪৫)। ফারাজের মতো তিনিও রমজানে বিশেষ একটি পানীয় বিক্রি করেন। খারোব জুস নামে সেটি পরিচিত। যেটি খেতে কোল্ড চকলেটের মতো। তবে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ভালো। ইফতারের আগে বাজারে বোতলে করে এই পানীয় নিয়ে আসেন তিনি। সুস্বাদু এই পানীয় দ্রুতই বিক্রি হয়ে যায়। ইফতারের আগে খালি বোতলগুলো নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরেন তিনি।
এই বিক্রেতা বলেন, এই মাসে খারোব জুস বিক্রি করেই সংসার চালাই আমি। কারণ রমজান মাসে এই পানীয়টির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকা অথবা ইউরোপের কোনো দেশ যাওয়ার জন্য সমুদ্র পাড়ি দেয়ার চেয়ে এখানে খারোব জুস বিক্রি করে সংসার চালানো অনেক ভালো। এই পানীয় বিক্রি করে দিনে তার আর প্রায় ২০ ডলার। আটজনের সংসার চালানোর জন্য এই অর্থ যথেষ্ট বলেই মনে করেন তিনি।
মোহাম্মদ আল-সোসি বলেন, ‘রমজান মাসে গাজার বেকার মানুষগুলো কিছু আয় করার সুযোগ পায়। পুরো রমজানে তারা খাবার, পানীয়, খেলনা অথবা লণ্ঠন বিক্রি করেন।’ আবু মোহাম্মদ আল-বারকোনি। শিশুদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি বিক্রি করেন এই দোকানি। তার দোকানে সাজানো নানা রঙের, আকারের লণ্ঠন।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে আছে শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর জিনিস। তবে সব শিশুদের মুখে আমি হাসি ফোটাতে পারি না। কারণ অনেক মা-বাবা সন্তানকে নিয়ে দোকানে এলেও লণ্ঠন কিনে দিতে পারেন না। কারণ দাম তাদের সাধ্যের বাইরে থাকে।’ আকার ভেদে লণ্ঠনের মূল্য দাঁড়ায় ২.৮৪ ডলার থেকে ৫.৬৯ ডলার। আর ছোটগুলোর দাম আরো কম।
তিনি বলেন, ‘লণ্ঠনের দাম অত বেশি নয়। কিন্তু গাজার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয় বলে বেশিরভাগ বাসিন্দারা তা কিনতে পারেন না।’ বারকোনি জানান, খুব বেশি বিক্রি না হলেও সংসার চালানোর মতো অর্থ তিনি প্রতিদিন ঠিকই লণ্ঠন বিক্রি করে তুলে আনতে পারেন।
খাবার আর পানীয়র পর আরব বাসিন্দারা ইফতারে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি হলো আচার। অন্য যা কিছুই থাকুক, আচার ছাড়া তাদের ইফতার সম্পূর্ণই হবে না। তাই গাজাবাসী পুরো রমজান মাসজুড়েই বিক্রি করেন হরেক রকম আচার।
মাহমুদ আবু হামিদ, একজন আচার বিক্রেতা। ২৪ বছর ধরে আচার বিক্রি করে যাচ্ছেন তিনি। বলেন, ‘রমজান শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই আমরা আচার বানিয়ে থাকি। শসা, বেগুন, গাজর, লেবু, জলপাইয়ের আচার বানিয়ে মুখবন্ধ বোতলে রেখে অনেকদিন রেখে দেই। রমজানের প্রথম দিনই সেগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে শুরু করি।’ সূত্র : আরব নিউজ