শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০, ০৪:০২:০৯

ভারতের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম অধ্যুষিত লাক্ষাদ্বীপে নেই কোনো করোনা রোগী

ভারতের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম অধ্যুষিত লাক্ষাদ্বীপে নেই কোনো করোনা রোগী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাস সং'ক্রমণ মো'কাবিলায় এক বিরল নজির তৈরি করেছে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ। ৩৬টি দ্বীপকে নিয়ে গঠিত আরব সাগরের এই দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের একমাত্র অঞ্চল, যেখানে আজ পর্যন্ত একটিও পজিটিভ কেস শনা'ক্ত হয়নি।  লাক্ষাদ্বীপের প্রায় ৭০ হাজার জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশই মুসলিম। আর ওই অঞ্চলের একমাত্র এমপি  ‍মুহাম্মদ ফয়জল বলেছেন, দ্বীপে বহিরাগতদের প্রবেশ আ'টকেই তাদের এই সাফল্য! 

 বিবিসি বাংলার প্রতিবেদককে ফয়জল বলেন, ‘যখন জানুয়ারির শেষে কেরালায় প্রথম কোভিড রোগীর সন্ধান মেলে, আমরা প্রথমেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আসা বন্ধ করে দিই। এমন কী, এন্ট্রি পারমিট নিয়ে যারা এখানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে আসেন তাদের জন্যও লাক্ষাদ্বীপের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, পুলিশ এখানে কারফিউ বা ১৪৪ ধারাও খুব ক'ঠোরভাবে বলবৎ করেছে, লোকজনও অযথা বাড়ির বাইরে বেরোননি। যাদের জরুরি চিকিৎসা বা বিশেষ প্রয়োজনে মূল ভূখন্ডে যেতে হয়েছে তাদের জন্য কোচিতে আমরা দুটো কোয়ারেন্টিন সেন্টারও চালু করেছি। সেখান সাতদিন কোয়ারেন্টিনে থেকে টেস্টে নেগেটিভ হলে তবেই তারা ফেরত আসার অনুমতি পেয়েছেন।’

ফয়জল আরো বলেন, ‘আর দুবাই বা গাল্ফ কান্ট্রিগুলো থেকে লাক্ষাদ্বীপের যে স্থানীয়রা ফিরে এসেছেন তাদেরও কোচিতে দুসপ্তাহ ও দ্বীপে ফিরেও আরও দুসপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাকি দেশের তুলনায় অনেক আগে থেকে যাতায়াতে ক'ড়াকড়ি আরোপ করা-সহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার ফলেই প্রত্যন্ত লাক্ষাদ্বীপ ভাইরাস ঠেকানোয় এই বিরল সাফল্য পেয়েছে। সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসন সেখানে ফের স্কুল খোলার জন্যও কেন্দ্রের অনুমতি চেয়েছে, বাকি দেশ যে পদক্ষেপের কথা এখনও ভাবতেই পারছে না।

লাক্ষাদ্বীপ কীভাবে প্রায় গত ছ'মাস ধরে কোভিডমুক্ত থাকতে পারল তা নিয়ে বিস্তারিত স্টাডি করেছেন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দিল্লির সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ। তিনিও মনে করেন, আগেভাগে ব্যবস্থা নেওয়ারই সুফল পেয়েছে তারা। অবন্তিকা ঘোষ বিবিসিকে বলছিলেন, ‘লাক্ষাদ্বীপ আসলে খুব ভাল করেই নিজেদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন ছিল, আর সে কারণে অনেক আগে থেকে ভাইরাস ঠে'কাতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছিল তারা।’

তিনি বলেন, ‘তারা যখন থেকে ডোমেস্টিক স্ক্রিনিং শুরু করে, তখন কিন্তু বাকি দেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদেরই শুধু স্ক্রিন করছিল। অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের স্ক্রিন করার কথা তখনও কেউ ভাবেইনি। তা ছাড়া লাক্ষাদ্বীপের বাড়তি সুবিধা ছিল এটা একটা প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ। জনসংখ্যাও খুব কম। সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখার তেমন দরকার পড়েনি।’

অবন্তিকা বলেন, ‘ওখানে মোট ৩৬টা দ্বীপের মধ্যে মাত্র দশটায় লোকজন থাকে, আর আমরা জানিই 'ভাইরাস লাভস ক্রাউডস' - মানে এই ভাইরাসটা ভিড় ভালবাসে। যেহেতু লাক্ষাদ্বীপে সেই 'ক্রাউড' বা ভিড়ের অস্তিত্ত্ব নেই, ভাইরাস সং'ক্রমণ ঠেকাতে সেটাও ভীষণ সাহায্য করেছে।’

অবন্তিকা আরো বলেন, ‘আর একটা বিশেষত্ব হল, বাকি দেশে যখন কোয়ারেন্টিনে থাকার খরচ নিজেদেরই দিতে হচ্ছে। লাক্ষাদ্বীপের ক্ষেত্রে সরকারই সেটা দিচ্ছে। আর তাই লোকজনও কোয়ারেন্টিনে থাকতে কোনও আপত্তি করছেন না।’

দ্বীপের বাসিন্দাদের কোয়ারেন্টিন সেন্টার বা হোটেলে থাকার খরচ প্রশাসন বহন করলেও নানা ক'ড়াকড়ির কারণে পর্যটন-নির্ভর এই দ্বীপটির অর্থনীতি যে বিরাট ধা'ক্কা খেয়েছে এমপি মহম্মদ ফয়জল অবশ্য তা অস্বীকার করেননি।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘লাক্ষাদ্বীপের উপার্জনে অবশ্যই বিরাট টান পড়েছে। সেই মার্চ থেকে আমাদের পর্যটন ব্যবসাও পুরোপুরি বন্ধ। তবে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে আমরা এখন স্থানীয় শিল্পগুলোর ওপরেই জোর দিচ্ছি। এখানকার দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, নির্মাণ শিল্প বা মাছ ধরতে যাওয়া - এগুলোর ওপর আর কোনও নিষে'ধাজ্ঞা নেই।’

লাক্ষাদ্বীপের সঙ্গে বাকি দেশের সংযোগের সূত্র হল কোচি থেকে বিমান পরিষেবা আর মোট সাতটি যাত্রীবাহী জাহাজের সার্ভিস। সেই যোগাযোগে অনেক আগ থেকে বিপুল ক'ড়াকাড়ি আ'রোপ করেই লাক্ষাদ্বীপ আজ পর্যন্ত কোভিডমুক্ত। তবে এর জন্য অর্থনীতিতে চড়া দামও দিতে হচ্ছে তাদের। সূত্র : বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে