শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০, ০৮:৪৮:৫৮

লিফটে ঢুকেই ফাহিমকে বিভ্রান্ত করতে একটুখানি অভিনয়ও করেছিল হ'ত্যাকারী।

লিফটে ঢুকেই ফাহিমকে বিভ্রান্ত করতে একটুখানি অভিনয়ও করেছিল হ'ত্যাকারী।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লিফটে ঢু'কেই ফাহিমকে বিভ্রা'ন্ত করতে একটুখানি অভিনয়ও করেছিল হ'ত্যাকারী। এছাড়া হ'ত্যাকা'ণ্ডের সব আলা'মত নিশ্চি'হ্ন করতে চেয়েছিল সে। আর তাই মৃ'তদে'হ কে'টে টু'করো টু'করো করে ফে'লা হয়। এরপর কা'টা অংশগুলো গার্বে'জ ব্যাগে ভরার উদ্দেশ্য ছিল। 

সপ্তম তলা থেকেই সেগুলো ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট সুড়'ঙ্গে ফে'লে দেয়ার সিদ্ধান্তও ছিল। কিন্তু তার আগেই ‘কেউ একজন এসে পড়েছে’ এমন আশ'ঙ্কায় মিশন শেষ না করেই পেছনের দরজা ও সিড়ি ব্যবহার করে পা'লিয়ে যায় পেশাদার খু'নি। তদ'ন্ত প্রক্রিয়ার বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) একজন কর্মকর্তা এই ত'থ্য জানিয়েছেন।

এদিকে তদ'ন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ফাহিম সালেহ’র সঙ্গে ব্যবসায়ীক স্বার্থ-সংশ্লি'ষ্টতা ছিল এমন এক ব্যক্তিকে নিজেদের হেফা'জতে নিয়েছে এনওয়াইপিডি।

যদিও এই হ'ত্যাকা'ণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃ'ক্ততার বিষয়ে পুলিশ এখনো নিশ্চি'ত কোনো ত'থ্য পায়নি। সে কারণে তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছেনা। তবে নানাভাবে তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত ফাহিমের পরিবার এই ভ'য়ঙ্কর ঘ'টনায় এতটাই ভে'ঙে পড়েছে যে, তার বাবা, মা কিংবা বোন কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। পরিবারের পক্ষ থেকে শুধু এইটুকু বলা হয়েছে যে, খু'নিকে ধ'রে বিচারের মু'খোমু'খি করা হলেই কেবল তারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন এবং এই কঠিনতম মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি কিছু তাদের বলার নেই।

তরুণ বাংলাদেশি-আমেরিকান উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ’র নৃশং'স খু'নের মামলাটি নিউ ইয়র্ক পুলিশের কাছে এই মুহূর্তে টপ প্রায়ো'রিটি। একইভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে এই মর্মা'ন্তিক ঘ'টনা। ফাহিমের পৈ'শাচি'ক হ'ত্যাকা'ণ্ড এবং সেটার তদ'ন্তের নানাদিক নিয়ে যেমন রিপোর্ট হচ্ছে, তেমনি তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং নেতৃত্ব নিয়েও প্রকা'শ করা হচ্ছে নিবন্ধ। দুনিয়ার অন্যতম শীর্ষ সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস এ সং'ক্রা'ন্ত সংবাদ কভারেজের জন্য তাদের অন্তত তিনজন সাংবাদিক এবং দু’জন গবেষককে নিয়োজিত করেছে। এরমধ্যে উইলিয়াম কে রাশবাম নামে মেট্রো ডেস্কের একজন সিনিয়র রিপোর্টারও রয়েছেন যিনি ২০০৯ সালে ব্রেকিং নিউজ ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী টিমের সদস্য ছিলেন।

ফাহিম হ'ত্যাকা'ণ্ডের তদ'ন্তের অগ্রগতি বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তেমন কিছু বলা হচ্ছে না। তবে এনওয়াইপিডি’র বিভিন্ন সূ'ত্র থেকে মি'লছে কিছু ত'থ্য। তেমনই একটি সূ'ত্র জানায়, ফাহিমের কন্ডোমেনিয়াম ভবনের লিফটে কেউ নির্দিষ্ট কোনো ফ্লোরে আরোহণ করতে চাইলে তাকে ডিজিটাল “কী ফোব” ব্যবহার করে লিফটের বোতাম চা'পতে হয়। কালো পোশাক ও কালো মাস্কে আবৃ'ত খু'নি লিফটে ঢু'কেই ফাহিমকে বিভ্রা'ন্ত করার জন্য এমন অভিনয় করেছিল যেন সে “কী ফোব” ব্যবহার করেছে। কিন্তু বাস্তবে সে তা করেনি। কারণ, তার কাছে ওই ভবনের ‘কী ফোব’ থাকার কোনো কারণ নেই। বরং সপ্তম তলায় লিফটের দরজা খোলার পর ফাহিমের সঙ্গেই সে লিফট থেকে নেমে যায়। লিফটের একেবারে মু'খোমু'খি দরজাটিই ফাহিমের এপার্টমেন্টের দরজা। সেই দরজার চাবি ফাহিমের হাতেই ছিল। লিফট থেকে বে'রিয়ে খুব দ্রু'তই সে এপার্টমেন্টের দরজা খো'লে। ঠিক ওই মুহূর্তটিতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাদের মধ্যে কিছু একটা কথাবার্তা হওয়ার দৃ'শ্য লিফটের ভিতরে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটে'জে দেখা গেছে। ফাহিম এপার্টমেন্টের দরজা খোলামাত্রই খু'নি তাকে সজো'রে ধা'ক্কা দিয়ে ভিতরে ঢু'কিয়ে ফেলে। ততক্ষণে লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর কোনো দৃ'শ্যের ফু'টেজ মেলেনি।

তবে মঙ্গলবার বিকেলে ফাহিমের খ'ণ্ড-বিখ'ণ্ড মৃ'তদে'হ উদ্ধা'রের পর পুলিশ সেখান থেকে আরো যেসব আলা'মত সংগ্রহ করেছে তা থেকেই পরিষ্কার হচ্ছে অনেক কিছু। এনওয়াইপিডি সূ'ত্র বলছে, ফাহিমকে কা'বু করতে শুরুতেই খু'নি ব্যবহার করেছে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল স্টা'ন-গা'ন। এটার আ'ঘা'ত অনেকটা বৈদ্যুতিক শ'ক এর মতো এবং কোনো শব্দ হয় না। এরপর দেহের বিভিন্ন অংশ বি'চ্ছি'ন্ন করার আগে ঠিক কিভাবে ফাহিমকে খু'ন করা হয়েছে সে ব্যাপারে তদ'ন্তকারীরা এখনও সং'শয়ে। 

তবে হ'ত্যকারী যে খু'নের সব আলামত নিশ্চি'হ্ন করতে চেয়েছিল এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চি'ত। কারণ, মৃ'তদে'হকে টু'করো টু'করো করার সময় সেখানে স্বাভাবিকভাবেই অনেক র'ক্তপা'ত হয়েছে। কিন্তু খু'নি অত্য'ন্ত সত'র্কতার সঙ্গে সব র'ক্ত মু'ছে ফে'লে। এ কাজের জন্য সে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রও সেখানে নিয়ে যায়। এছাড়া ইলে'ক্ট্রিক ক'রাত দিয়ে কে'টে বি'চ্ছি'ন্ন করা শরীরের বিভিন্ন অংশ গার্বেজ ব্যাগে ভরে রাখাও তার আরেকটি প্রমাণ। সে চেয়েছিল গার্বেজ ব্যাগে ভ'রা টুকরোগুলো সপ্তম তলা থেকেই ময়লা ফেলবার নির্দিষ্ট সুড়'ঙ্গ দিয়ে নিচে ফে'লে দিতে। কিন্তু তার আগেই ‘কেউ একজন এসে পড়া’য় মি'শন শেষ না করেই পা'লিয়ে যায় খুনি। সে কারণেই ইলে'ক্ট্রিক ক'রাতটি যেমন বৈদ্যুতিক আউটলেটে প্লা'গইন অবস্থায় ছিল তেমনি খ'ণ্ড-বিখ'ণ্ড শরীরের টু'করোগুলোও রয়ে যায় সেখানে। 

পুলিশ ধারণা করছে যে, ফাহিমকে খুঁ'জতে আসা তার খালাতো বোন মীরান চৌধুরীর উপস্থিতি টে'র পেয়েই খু'নি তার মিশন অসমাপ্ত রেখে পেছনের দরজা দিয়ে বে'রিয়ে সিড়ি ব্যবহার করে পালিয়ে যায়। এ জন্য সিড়িপথে তাকে বিশেষ চাবি ব্যবহার করতে হয়েছে এবং সেই প্রস্তুতিও তার ছিল। সবমিলিয়ে হ'ত্যাকারী যে একজন পেশা'দার খু'নি এবং পুরো মি'শনে সে যে সর্বো'চ্চ সত'র্ক ছিল এ ব্যাপারে তদ'ন্তকারীরা নিশ্চি'ত।

উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ এপার্টমেন্ট ভবনে এমন ব্যবস্থা সংযোজিত থাকে যাতে ভবনের বাসিন্দারা যেকোনো ফ্লোর থেকে ময়লাভর্তি গার্বেজ ব্যাগ নির্দিষ্ট সুড়'ঙ্গে ফে'লে দিতে পারেন। ওই সুড়'ঙ্গের মাধ্যমে ময়লার ব্যাগ স্ব'য়ংক্রি'য়ভাবে বেজমে'ন্টে র'ক্ষি'ত পোর্টেবল গার্বেজ কন্টেইনার বা স্থানান্তরযোগ্য ময়লার ভা'গা'ড়ে গিয়ে পড়ে।

এদিকে ফাহিমের সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থ-সংশ্লি'ষ্টতা থাকা যে ব্যক্তিকে পুলিশ বৃহস্পতিবার তাদের হেফা'জতে নিয়েছে তার ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো ত'থ্য দেয়া হয়নি। শুধু এইটুকু বলা হয়েছে যে, তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তার পরিচয় সম্পর্কেও কোনো ত'থ্য দেয়া হচ্ছেনা। এর কারণ সম্পর্কে এনওয়াইপিডি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা এখনো নিশ্চি'ত নয় যে, এই হ'ত্যাকা'ণ্ডে তার আদৌ কোনো সংশ্লি'ষ্টতা রয়েছে কি-না। যদি শেষ পর্যন্ত তার কোনো সম্পৃ'ক্ততা না পাওয়া যায় তাহলে তো তাকে ছে'ড়ে দেয়া হবে। কিন্তু এর আগেই যদি তার পরিচয় প্রকাশ করা কিংবা তার সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য গণমাধ্যমকে দেয়া হয় তাহলে সেটা হবে তার প্রতি অবিচার। এমন দৃষ্টিভ'ঙ্গি থেকেই এনওয়াইপিডি সাধারণত কোনো ব্যক্তির অপ'রাধ-সংশ্লি'ষ্টতা সম্পর্কে নিশ্চি'ত না হয়ে তাকে ‘পাবলিকলি এ'ক্সপো'জড’ করে না।

অন্য একটি সূ'ত্র জানিয়েছে, ফাহিম নাইজেরিয়ায় গোকাডা নামে যে মোটারসাইকেল-ট্যাক্সি সার্ভিস পরিচালনা করছিলেন এই ব্যবসার জন্য তিনি নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনভিত্তিক ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড হতে ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল নিয়েছিলেন গত বছর। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নাইজেরিয়া সরকারের নতুন বিধিনিষেধের কারণে তাদের সেই ব্যবসা বিপ'র্য'য়ের মু'খে পড়ে। আর সে কারণে কোম্পানিটি বড় রকমের আর্থি'ক চা'পে পড়ে যায়।মানবজমিন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে