বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০, ১১:০০:৩৬

আমি যদি না ম'রি ইসরাইলি আমাকে হ'ত্যা করবে : আ'ত্মহ'ত্যার আগে বলেন জামাল ওয়াদি

আমি যদি না ম'রি ইসরাইলি আমাকে হ'ত্যা করবে : আ'ত্মহ'ত্যার আগে বলেন জামাল ওয়াদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরাইলি কারাগার থেকে মু'ক্তি পাওয়ার ২৩ বছর পরও সেই দুর্বি'ষহ অভি'জ্ঞতার সঙ্গে ল'ড়া'ই করতে হয়েছে জামাল ওয়াদিকে। প্রায় তিন দশক মা'নসি'ক আ'ঘা'ত এবং মা'ন'সিক রোগে ভু'গে ২১ জুন ৫৪ বছর বয়সে আ'ত্মহ'ত্যা করে চির'বিদায় নেন তিনি।

গেলো ১৪ বছর ধ'রে ইসরাইলের আ'রো'প করা ভ'য়াব'হ অ'বরু'দ্ধ পরি'স্থি'তির মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনের গা'জার বাসিন্দারা। বর্তমানে ওই অঞ্চলে আ'ত্মহ'ত্যার হার ব্যা'পকভাবে বে'ড়েছে। গা'জা ভিত্তিক আল মিজান সেন্টার ফর হিউ'ম্যান রাই'টস জানায়, গেলো ৬ মাসে গা'জার অন্তত ১৬ জন বাসিন্দা আ'ত্মহ'ত্যা করেছে। আ'ত্মহ'ত্যার চে'ষ্টা করেছে শতা'ধিক ব্যক্তি।

মা'রা'ত্মক আর্থিক সং'ক'ট, দ'খ'লদার বা'হি'নী কর্তৃক মান'সি'ক অ'ত্যা'চার, জে'ল-জু'লুম'সহ নানা কারণে এ হা'র বাড়ছে। যাতে উ'দ্বে'গ জানিয়েছে মানবা'ধিকার সং'স্থাগুলো। ২০০৭ সালের পর গা'জায় তিনটি যু'দ্ধ হয়েছে। মা'রা গেছে বহু মানুষ। প'ঙ্গু'ত্ব বরণ করেছে অনেকে। বি'ধ্ব'স্ত গা'জায় নানা রকম নি'র্ম'ম-নি'র্যা'তন অ'ব্যাহ'ত রয়েছে। ২০১২ সালে জাতিসংঘ স'ত'র্ক করে বলেছে, ২০২০ সালের মধ্যে বসবাসের অ'নুপোযো'গী হয়ে যাবে অ'ব'রু'দ্ধ গা'জা।

বছরের মাঝামাঝিতে দুঃ'খজন'কভাবে আ'ত্মহ'ত্যার প্র'বণতা বে'ড়ে যাওয়ায় অনেকের কাছে সেই স'ত'র্কতা আরেকটি ক'রু'ণ পরি'স্থি'তি তৈরি করছে। ওয়াদির স্ত্রী মেরভাত বলেন, ১৯৯০ সালে আমাদের বিয়ে হয়। তার কয়েকদিন পরই ওয়াদিকে আ'টক করে ইসরাইলি বা'হি'নী। বিয়ে এবং আ'টকের আগ পর্যন্ত আমি তাকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেখেছি। এরপর বাকি পুরোটা সময় তার মধ্যে কোনো আ'বে'গ, মা'ন'সি'ক স্থি'তি দেখিনি।

''আমি মনে করেছিলাম, হয়তো কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ তাকে আ'টকে রাখা হবে। কিন্তু না, তাকে ৭ বছর কা'রাব'ন্দী করে রাখা হয়।'' বলেন মেলভাত। জেলে প্রতি দু'সপ্তাহ অন্তর অন্তর ওয়াদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন মেলভাত। তখন তিনি তার মা'নসি'ক পরিব'র্তন বুঝতে পারেন। 'কিন্তু তা যে এতো নি'র্ম'ম মান'সি'ক আ'ঘা'ত হবে-যা আমাদের সারাজীবন পা'ল্টে দেবে তা দুঃ'স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।''
 
''যখনই আমি সাক্ষাৎ করতে গিয়েছি অধিকাংশ সময় দেখেছি তার শরীরে আ'ঘা'তের চি'হ্ন। মাঝে মাঝে তারা তাকে নি'র্জ'ন কারাগারে একা'কী ব'ন্দী করে রাখতো। আমি দেখতাম তিনি আর আগের সেই মানুষটি নেই। ব'ন্দী হওয়ার কয়েক মাস আগে যাকে আমি বিয়ে করেছিলাম।''

১৯৯৭ সালে মু'ক্তি পান ওয়াদি। তার মা'নসি'ক অ'বন'তিকে তখন সাধারণ আ'ঘা'ত মনে করেছিলেন তারা। নানা ধরনের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের দৌ'ড়াতে হয়। পরে জানতে পারেন, ওয়াদি দী'র্ঘমে'য়াদি মা'ন'সি'ক এবং শারিরীক রো'গে ভু'গছেন। যার মধ্যে সি'জো'ফ্রে'নিয়া, গ্র্যা'ন্ড ম্যা'ল সে'লফ্রে'স এবং ট্র'মাজ'নিত পরবর্তী স্ট্রে'স ডি'সঅ'র্ডার রয়েছে।

ওয়াদির ছোট ভাই সামি বলেন, ''তিনি সবসময় আবারো জে'লে যাওয়ার ভ'য়ে আ'ত'ঙ্কিত থাকতেন। তার একটা ধা'রণা ছিল, ইসরাইলি বা'হি'নী ঘর ভে'ঙ্গে তাকে যেকোনো সময় নিয়ে যেতে পারে। আমরা যতোই বুঝাতাম এমন কিছু আর হবে না। তিনি আমাদের কখনোই বিশ্বাস করতেন না। তিনি সব সময় ভী'ত থাকতেন আর বলতেন, আমি যদি না ম'রি তাহলে তারা আমাকে হ'ত্যা করবে।''

''আমরা কখনোই চাইনি এভাবে তিনি আমাদের ছে'ড়ে চলে যান।'' ওয়াদির এক আত্মীয় বলেন, ''তিনি মনে করেছেন এটাই একমাত্র উপায়। তাকে আর কখনো জে'লে যেতে হবে না। আমরা খুবই ম'র্মাহ'ত। এমনটা কখনোই আমরা আশা করিনি।'' সামি বলেন, ''ওয়াদি একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি এমন মা'ন'সি'ক অসু'স্থতার মধ্য দিয়ে গেছেন। এমন অনেক মু'ক্ত ব'ন্দীকে দেখেছি তারা আ'ত্মহ'ত্যার চেষ্টা করেছে।''

ব'ন্দীদের অধি'কার নিয়ে কাজ করা মান'বাধিকার সংগঠন আদামিরের ত'থ্য অ'নু'যায়ী, ''ইসরাইলের কারাগারে ৪ হাজার ৭শ' ব'ন্দী আছে। যাদের মধ্যে ২৬৭ জন গা'জার বাসিন্দা।'' আ'ত্মহ'ত্যা বা আ'ত্মহ'ত্যার জন্য যে হ'তা'শা কাজ করে তার পে'ছনে আরো অনেক কারণের সঙ্গে রয়েছে গা'জার ভ'য়াব'হ মান'বি'ক পরি'স্থি'তি এবং বি'ধ্ব'স্ত আর্থিক অব'স্থা।

ইসরাইলের নাম না নিয়ে ওয়াদির ভাই সামি বলন, ''অ'বরু'দ্ধ গা'জায় এসব নিরব হ'ত্যার জন্য আর কেউ দা'য়ী নয়।'' ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, ''অ'বরো'ধ, চ'লমা'ন স'হিং'সতা কারণে গা'জা উপ'ত্যকার আর্থিক অবস্থা ভে'ঙ্গে পড়েছে। সেখানে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাস করে।'' তাদের ৮০ শতাংশ ত্রা'ণের উপর নির্ভর করে চ'ল বলেও জানানো হয়।

ইউ'রো মে'ডিটে'রিয়ান হিউ'ম্যান রাই'টস মনি'টর জানায়, ''গা'জায় সাড়ে তিন হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। ২০০৭ সালে অ'বরো'ধের পর থেকে তা ক'মতে শুরু করে। বর্তমানে এ সংখ্যা আড়াইশ'তে নে'মে গেছে।'' দরি'দ্রতার নিচে বাস করেন গা'জার ৫৪ শতাংশ বাসিন্দা।

করোন ভাইরাস রো'ধে আ'রো'প করা নি'ষে'ধা'জ্ঞা অঞ্চলটির আর্থিক পরি'স্থি'তিকে আরো খা'রা'প করছে। করোনার কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২৬ হাজার ৫শ' মানুষ তাদের চাকরি হা'রিয়েছে। ফিলিস্তিনের সে'ন্ট্রা'ল ব্যু'রো অব ই'নভে'স্টিগে'শনের ত'থ্যা'নুসা'রে, ''২০২০ সালের প্রথম চার মাসে ফিলিস্তিনে বে'কার'ত্বের হা'র বে'ড়ে দাঁ'ড়িয়েছে ৪৬ শতাংশে। ২০১৯ সালের শেষ চার মাসে এ হা'র যা ছিল ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ।''

'আ'ত্মহ'ত্যা বা আ'ত্মহ'ত্যার চে'ষ্টা প্রমাণ করে কী তী'ব্র মা'নসি'ক হ'তা'শায় ভু'গছেন গা'জার বাসিন্দারা।'' আল মিজান মা'নবা'ধিকার সং'স্থার আইন বিষয়ক পরিচালক নুরিয়া ওসওয়া'ল্ড এ ম'ন্ত'ব্য করেন। বলেন, ''গা'জায় এককালের সমৃ'দ্ধিশা'লী মৎস শি'কার, কৃষিক্ষেত্র এখন ইসরাইলের স'হিং'তা, হু'ম'কিতে বিপ'র্য'স্ত। অ'বরো'ধের কারণে ভ'য়াব'হভাবে ক্ষ'তিগ্র'স্ত হচ্ছে এখানকার মানুষের জীবন।''

৩৭ বছর বয়সী হাইমাত আরফাত। চার সন্তানের জনক তিনি। তী'ব্র আর্থিক সং'ক'টের সঙ্গে ঋ'ণের ভারে দি'শেহা'রা এখন। ''ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ থেকে আমি মাসে একটা ভাতা পাই। কিন্তু ঋণ শো'ধ করতে গিয়ে আমার বা বাচ্ছাদের জন্য কিছুই থাকে না। রোজগারের আরেকটি পথের স'ন্ধা'নে বহু চে'ষ্টা করেছি। আমার পায়ে একটা সম'স্যা আছে। ভারী জিনিস তু'লতে পারিনি। কী হয়েছে, এখানকার চিকি'ৎসকরা বলেত পারেননি।''

''অ'সহা'য়ত্বে আমি হ'তা'শ। বাচ্চারা সারাক্ষ'ণ ক্ষু'ধা'র্ত থাকে। আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারি না। কা'ন্না দেখা ছা'ড়া।'' ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা গা'জার ক'রু'ণ পরি'স্থি'তির জন্য অঞ্চলটির শা'সক দল হামাসকে দা'য়ী করে আসছে। কিন্তু ওয়াদির পরিবারসহ অধিকাংশ ফিলিস্তিনি তাদের সে অ'ভিযো'গ প্রত্যা'খ্যান করেছেন।

সামি বলেন, ''অ'বরো'ধ সবকিছুর জন্য দা'য়ী। অন্য কারো কোনো দো'ষ নেই। গা'জায় অ'বরো'ধ আ'রো'প করে রাখা এখানকার মানুষের নি'র'ব মৃ'ত্যের জন্য দা'য়ী। আমার ভাইসহ যারা আ'ত্মহ'ত্যা করেছে, হ'ত্যা চে'ষ্টা করেছে, তাদের সবাই একসময় জীবনকে ভালোবাসতো। কিন্তু এ অবরো'ধে তারা হাঁ'পি'য়ে উ'ঠেছেন। স'হ্য করতে না পেয়ে নিজের জীবন নিজে নিয়েছেন।''

১৯৮২ সালের সাবরা এবং শাতিলা গ'ণহ'ত্যার সময় আরাফাত শিশু ছিলেন। প্রাণে বেঁ'চে গেলেও সে সময় হা'রান পরিবারের সবাইকে। বলেন, বতর্মান আর্থিক সং'ক'টে আবারো একা হয়ে পড়েছি। গা'জার মানুষের মা'নসি'ক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং আ'ত্মহ'ত্যার প্রব'ণতা ক'মানোর জন্য কাজ করছে কমি'উনি'টি মেন্টাল হেল'থ প্রো'গ্রাম। 

তারপরও সেখানে আ'ত্মহ'ত্যার প্র'ব'ণতা বাড়ছে। ডা. ইউসুফ আওয়াদাল্লাহ বলেন, ''গাজায় ২০১৯ সালে ২২ জনের আ'ত্মহ'ত্যা ন'থিভু'ক্ত হয়। সেখানে ২০ লাখ মানুষ বসবাস করছে। সত্য হচ্ছে গা'জার আর্থিক সং'ক'ট আ'ত্মহ'ত্যার প্র'বণ'তাকে বা'ড়িয়ে দিচ্ছে।''

আওয়াদাল্লাহ বলেন, ''আ'ত্মহ'ত্যার কারো একদিনের সিদ্ধা'ন্ত নয়। দীর্ঘদিন ধ'রে হ'তা'শায় থাকতে থাকতে একসময় গিয়ে তারা তা করেন। যখন মনে করেন যে আ'ত্মহ'ত্যাই জীবন থেকে মু'ক্তি পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। তবে আ'ত্মহ'ত্যা কোনো সমা'ধান। জীবনে ল'ড়া'ইটাই মু'খ্য বিষয়। ল'ড়া'ই করে বেঁ'চে থাকা জীবনের সফলতা। এ বা'র্তা'টা আমরা সবার মাঝে ছ'ড়িয়ে দিতে চাই।''

আরাফাত বলেন, ''যদি অ'বরো'ধ না থাকতো তাহলে কে নিজের জীবন নিতো। স্বা'ধীনভাবে সফল জীবন পরিচালনার ক্ষ'মতা আমাদের আছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে গ'লা টিপে হ'ত্যা করা হচ্ছে।'' ১৯৬৭ সালে ত'থাক'থিত আরব যু'দ্ধে গা'জা দ'খলে নেয় ইসরাইল। পরে আং'শিক নিয়'ন্ত্রণ ফিলিস্তিনিদের ফি'রিয়ে দিলেও নি'রা'পত্তা, অ'ভিযা'নের ক্ষ'মতা থেকে ইসরাইলের হাতে। সেই সঙ্গে অ'ব্যাহ'ত রয়েছে গাজার উপর স'র্বা'ত্মক অ'বরো'ধ। তাই গা'জাকে উ'ন্মু'ক্ত কা'রা'গার বলে আ'খ্যা দেয় জাতিসংঘ। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে