বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০, ১১:৫৯:২৩

ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরবের গো'পন আঁ'তাতের মূল তিন কারণ

 ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরবের গো'পন আঁ'তাতের মূল তিন কারণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্র'মবর্ধ'মান প্রভা'ব ও শক্তি মো'কাবে'লায় ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরব এক ধ'রনের সখ্যতা গড়ে তুলেছে। এই সম্পর্ক ধী'রে ধী'রে গড়ে উঠছে, তবে এটি খুবই স্প'র্শকা'তর সম্পর্ক। বিবিসির কূ'টনী'তি ও প্র'তির'ক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস লিখেছেন, তলে তলে এই দুটো দেশের মধ্যে কি হচ্ছে প্রায়শই তার কিছু ই'ঙ্গি'ত পাওয়া যায়।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল গাদি আইজেনকট যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একটি সৌদি সংবাদপত্র এলাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইরানকে মো'কাবে'লায় তার দেশ সৌদি আরবের সাথে গো'য়ে'ন্দা ত'থ্য বিনিময়ের জন্যেও প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, "আমাদের মধ্যে স্বার্থের মিল রয়েছে ইরানি চ'ক্র মো'কাবে'লার ব্যা'পারে আর এ ব্যা'পারে আমরা সৌদি আরবের সাথেই আছি।"  

এর কিছু দিন পর, প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনের পর, সৌদি আরবের সাবেক এক বিচার-মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল করিম ইসা, যিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনি'ষ্ঠ বলে পরিচিত, তিনি ইসরায়েলি একটি সংবাদপত্র দ্যা মারিভকে বলেছেন, "ইসলামের নামে কোন স'হিং'সতা বা স'ন্ত্রা'সের কোথাও কোন যৌ'ক্তিকতা নেই, এমনকি ইসরায়েলেও।"

আরব বিশ্বের ভেতর থেকে ইসরায়েলের বি'রু'দ্ধে হা'মলার এরকম প্রকা'শ্য নি'ন্দা খুব একটা দেখা যায় না। ইসরায়েলি সা'মরিক বাহি'নীর সাবেক একজন ঊ'র্ধ্ব'তন কর্মকর্তাও শী'র্ষস্থানীয় সৌদি রাজকুমারদের সাথে সাম্প্রতিক দুটো বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই বৈঠকে সৌদি রাজকুমাররা তাকে বলেছেন, "আপনারা তো আর আমাদের শ'ত্রু নন।"

জনাথন মার্কাস লিখেছেন, এধ'রনের বার্তা তো আর দু'র্ঘ'টনাব'শ'ত দেওয়া হয় না। এসব বার্তা দেওয়া হয় খুবই স'ত'র্কভাবে। এসবের লক্ষ্য থাকে ইরানকে স'ত'র্ক করা। এবং ইসরায়েলের সাথে গড়ে উঠা সম্পর্কের ব্যা'পারে সৌদি আরবের লোকজনকে অ'বহি'ত করা।

ইরানের হু'মকি : কোনো এক পর্যায়ে এটি ''পরি'স্থিতির কারণে সৃষ্ট জোট।'' ইরাকে ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের শা'সন ধ্বং'স হওয়ার পর দেশটিতে ''সুন্নি আরব'' কৌ'শলের পরিবর্তে 'শিয়া ইরান' কৌশল গুরুত্ব পেতে শুরু করে। এর ফলে নতুন ইরাকে শিয়া রাজনৈতিক নেতৃত্ব আ'ধিপ'ত্য বিস্তার করতে থাকে। ঘনি'ষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে ইরানের সাথে। ফলে ইরাকি শিয়া মিলিশিয়ারা সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারের পক্ষ হয়ে ল'ড়া'ই করছে।

সিরিয়ার গৃহযু'দ্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয় ইরান, তার সাথে ছিলো রাশিয়ার সা'মরি'ক সহযোগিতা- এর ফলে পরি'স্থিতি প্রেসিডেন্ট আসাদের অনুকূলে চলে আসে। এর ফলে তেহরান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা পর্যন্ত একটি ইরানি করিডোর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। অনেক সুন্নি নেতাই এটিকে দেখছেন আরব মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি পারস্য দেশের অনুপ্রবেশ হিসেবে।

একারণে ইরান ও সৌদি আরবের শ'ত্রু'তা শুধু কৌ'শলগত কারণেই নয়, ধর্মীয় কারণেও। বর্তমানে সিরিয়ার যে পরি'স্থিতি তাতে দেখা যাচ্ছে যে ইরান এবং লেবাননের হিযবুল্লাহ গ্রু'পের মতো তার মিত্ররাই যু'দ্ধে জয়লাভ করছে বলে মনে হচ্ছে। এই প্রে'ক্ষাপ'টে সৌদি আরব ও ইসরায়েল এই দুটো দেশই নিজেদের সম্পর্ক আরো জো'রালো করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

দু'টো দেশেরই চেষ্টা হচ্ছে - ইরান যাতে কখনো পরমাণু শ'ক্তিধ'র রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি প্র'তিরো'ধে যে আন্তর্জাতিক চু'ক্তি হয়েছে তার ব্যাপারেও এই দুটো দেশ খুব একটা সন্তু'ষ্ট নয়। এছাড়াও উভয়েই মনে করে লেবাননের প্রশিক্ষিত ও সুস'জ্জিত হিযবুল্লাহ গ্রু'প মধ্যপ্রাচ্যে অস্থি'তিশী'লতার কারণ হয়ে উঠেছে।

ট্রাম্প ফ্যা'ক্টর : তবে সেখানে আরো অনেক কিছুই ঘ'টছে। এটা যে শুধু ইরানের উ'ত্থা'ন তা নয়। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও এখানে আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন যে প্রশা'সন তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি। তার সাথে আছে আরব স্প্রিং এবং সিরিয়ার ভ'য়াব'হ যু'দ্ধের মতো বিষয়ও।

প্রথমত ওয়াশিংটনের নতুন প্র'শা'সন নিয়ে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের কোন অ'ভিযো'গ নেই। এ দুটো দেশই সফর করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং সেসময় তিনি ওই দুটো দেশের কৌ'শলগত পরিক'ল্পনাকে স্বাগতও জানিয়েছেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তার এই সফরের সময় ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে তেহরানের সাথে শ'ক্তিধ'র দেশগুলোর যে চু'ক্তি হয়েছে তারও ক'ড়া স'মালো'চনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটন তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের কাছে প্রচুর অ'স্ত্রশ'স্ত্রও বিক্রি করছে।

বিবিসির জনাথন মার্কাস লিখছেন, তবে সহানুভূতি জানানো আর বাস্তবিক কৌ'শল সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ইসরায়েল এবং সৌদি আরব দুটো দেশই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ঠিকই কিন্তু দুটো দেশের সরকারই ভালো করে জানে যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি তাদের কাছ থেকে স'রে যাচ্ছে। এই পরি'স্থিতিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সিদ্ধা'ন্ত নিয়েছেন যে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভা'ব বিস্তারে তার দেশকে আরো স'ক্রি'য় হতে হবে। একই সাথে এটাও স্পষ্ট মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষী'য়মা'ণ মার্কিন নীতি ও রাশিয়ার ফিরে আসার সাথে নতুন করে সামঞ্জস্য তৈরিতে কাজ করছে সৌদি আরব ও ইরান- এই দুটো দেশই।

ইসরায়েলি ভী'তি : এখানে আরো কিছু মৌলিক বিষয়ও কাজ করছে। যুবরাজ মোহাম্মদ একদিকে যেমন ইরানি শ'ক্তির বি'রু'দ্ধে ল'ড়া'ই করছেন, তেমনি অন্যদিকে তিনি তার দেশকে আরো আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়েও নতুন এক কৌ'শল গ্রহণ করেছেন। শেষের উদ্যোগটি এসেছে 'আরব বসন্ত' এবং 'ইসলামপ'ন্থী স'হিং'সতার' হু'মকির কারণে।

যুবরাজ মোহাম্মদ মনে করেন, ভবিষ্যৎ নি'শ্চিত করার জন্যে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘ'টাতে হবে নিজের ঘরেই। তিনি মনে করছেন, ইরানকে মো'কাবে'লা করার মতো সৌদি আরবের সংস্কারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসির সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস আরো লিখেছেন, সৌদি আরবের বহু মানুষের সাথে তার ব্যক্তিগত আলোচনায় মনে হয়েছে, যুবরাজ মোহাম্মদের এই স'ক্রি'য় হয়ে উঠার একটা ঝুঁ'কিও আছে, ইসরায়েলও সেরকম মনে করে।

সিরিয়ার যু'দ্ধের ভ'য়াব'হতা তারা একটু দূর থেকে দেখেছে। কোনো কোনো ইসরায়েলি মনে করে রাসায়নিক অ'স্ত্রের ব্যবহার যেন স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েল সিরিয়াকে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতে বিষয়ে একটি 'ল্যাবরেটরি' বা পরীক্ষাগার হিসেবে। আর একারণে তারা যুবরাজ মোহাম্মদ যা কিছু করার চেষ্টা করছেন সেটাকে তারা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের এই মিত্রতা কতো দূর পর্যন্ত যেতে পারে? এটাও নির্ভর করছে বহু কিছুর উপর। সৌদি আরবে সংস্কারের যেসব উদ্যোগ যুবরাজ নিয়েছেন সেগুলো কি সফল হবে? তিনি কি মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রভা'ব ব'ল'য় আরো বাড়াতে পারবেন? এই দুটো দেশের সম্পর্ককে যদি আরো উজ্জ্বল করতে হয় তাহলে তাকে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তাদেরকে কিছু অ'গ্রগ'তি ঘ'টাতে হবে।

সৌদি আরব বহু দিন ধ'রেই বলে আসছে, রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরবকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ইসরায়েলকে কিছু একটা করতে হবে। সেখানে অর্থপূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠার আগে, যেখানে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা, সেরকম কিছু না হলে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক একটা ছায়ার নিচেই থেকে যাবে। সূত্র : বিবিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে