ডা. মোহাম্মাদ আরিফ হোসেন : শিরোনাম দেখে চ'মকে উঠলেন? জি আপনি যা পড়ছেন জাপানে সেটাই ঘ'টতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। তারচেয়েও বড় চ'মক হল জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্র'খ্যা'ত অধ্যাপক তাকাহিরু কুসাকাবে যে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন সেটা ইনজেকশনই নয় বরং মুখেও গ্রহণ করা যাবে।
বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের কভিড-১৯ ভাইরাসের গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধা'রণা থাকতে হবে। আপনারা জানেন, কভিড-১৯ হল একধ'রনের আরএনএ ভাইরাস। এই ভাইরাস সং'ক্র'মণ ও বি'স্তারের জন্য যে মৌলিক উপাদান (আর এন এ) সেটা থাকে তার শ'ক্ত খো'লসের ভেতরে। আর এই খো'লসটিকেই আমরা দেখি কদম ফুলের মতো, যার নাম স্পাইক প্রোটিন।
স্পাইক প্রোটিনই মানুষের দেহে করোনা ভাইরাসকে ঢোকার পথ করে দেয়। করোনার চরিত্র বদ'লাতে হলে, স্পাইক প্রোটিনের গঠনে এমন কিছু ঘ'টতে হবে যেন তা আর মানুষের শরীরে ঢুকতে না পারে। এর অর্থ করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করতে হলে স্পাইক প্রোটিনের বি'রু'দ্ধে করতে হবে। ভ্যাকসিন দিয়ে যদি স্পাইক প্রোটিনকে অচল করে দেওয়া যায়, তাহলে মানুষ রক্ষা পেতে পারে।
অনেক ভ্যাকসিন আসলে সেভাবে তৈরি করারই চেষ্টা চলছে। অতি সম্প্রতি রাশিয়া যে ভ্যাকসিন বাজারজাত করেছে সেটা এই স্পাইক প্রোটিনকেই টা'র্গে'ট করে। আর সেজন্যই হয়ত রাশিয়ান বিজ্ঞানীরা এতটা আত্মবিশ্বাসী তাদের ভ্যাকসিনের সফলতার ব্যাপারে।
যেভাবে রেশমি পোকা থেকে তৈরি হবে করোনা ভ্যাকসিন : পশ্চিম জাপানের ফুকুওকাতে অবস্থিত কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়। তারই নিকটবর্তী ফার্মে আছে ৫০০ প্রজাতির প্রায় আড়াই লাখ রেশমি পোকা। তাদের শরীরেই তৈরি হবে এই ভ্যাকসিন। অধ্যাপক তাকাহিরু কুসাকাবে যিনি দী'র্ঘদিন রেশমি পোকা নিয়ে কাজ করছেন, যিনি ইতিপূর্বে ও রেশমি পোকাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রো'গ যেমন Alpha1-Anti Trypsin Deficiency এর জীবন বৃত্তান্ত এবং প্র'তিষে'ধক আবিষ্কার করেছেন।
গত মে মাস থেকে তিনি এবং তার টীম রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই ভ্যাকসিনের অগ্রগতির জন্য। জাপানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র নিক্কেইকে অধ্যাপক তাকাহিরু বলেন, যে জিন থেকে কভিড-১৯ এর স্পাইক প্রোটিন তৈরি হয়, তারা সেই জিনকে রেশমি পোকার শরীরে প্রবেশ করান। অভাবনীয়ভাবে মাত্র চারদিনে রেশমি পোকার শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্পাইক প্রোটিন তৈরি হয়।
এই স্পাইক প্রোটিন রেশমি পোকার শরীর থেকে আলাদা করে মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হবে। রেশমি পোকাকে সরাসরি খাদ্য হিসেবে ও গ্রহণ করা যাবে, সেক্ষেত্রে রেশমি পোকা থেকে ভ্যাকসিন আলাদা করার ব্যয়ভার ও কমানো সম্ভব হবে এবং শরীরে প্রোটিনের চাহিদা অনেকখানি পূরণ করবে।
কবে আসছে এই ভ্যাকসিন : অধ্যাপক তাকাহিরু বলেন জাপানের ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই প্রক্রিয়াটি স্বল্পব্যায়ী এবং অত্যন্ত দ্রুত। জিন রেশমি পোকার শরীরে প্রবেশ করান থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদন পর্যন্ত সময় লাগে মাত্র ৪০ দিন। এবং খুব শীঘ্রই তারা এই ভ্যাকসিনকে প্রাণীর দেহে প্রবেশ করাচ্ছেন। তারা আরও আশা করছেন ২০২১ সালের শুরুর দিকেই মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রবেশ করানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশও যেভাবে লাভবান হতে পারে : বাংলাদেশে রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় রেশমি চাষের ব্যা'পক প্রচলন আছে। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ যৌথ কোলাবরেশনের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে অতি সহজেই এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারে। তাছাড়া এই ভ্যাকসিন যেহেতু মুখেও গ্রহণ করা যাবে, এর নিরা'পত্তা ও কার্যকরিতাও নি'শ্চিত করা সহজ হবে। লেখক: ডা. মোহাম্মাদ আরিফ হোসেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী, টোকিও, জাপান