বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০, ০৫:৩৫:৪০

করোনাকালে টিকে থাকার জন্য স্কুল যখন মুরগির খামার

করোনাকালে টিকে থাকার জন্য স্কুল যখন মুরগির খামার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনার কারণে কেনিয়ায় আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর ফলে বেসরকারি অনেক স্কুলের টি'কে থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।মুয়ে ব্রেথ্রেন স্কুলের ক্লাসরুমগুলো এক সময় শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দে গমগম করলেও এখন সেখানে শুধু মুরগীর ডাক ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।

ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্ক করার পরিবর্তে লিখে রাখা হয়েছে টিকা দেয়ার সময়সূচী।জোসেফ মাইনা যিনি কিনা সেন্ট্রাল কেনিয়ান স্কুলের মালিক, তিনি তার স্কুলের আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটিকে মুরগীর খামারে পরিণত করতে বাধ্য হয়েছেন।

টিকে থাকার জন্য জরুরি: মার্চে যখন সব স্কুল বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ আসলো ঠিক তখন থেকে তাকে ক'ঠিন সময়ে মু'খে পড়তে হয়েছে। তিনি তখন একটি ঋণ শোধ করছিলেন এবং এর কারণে ব্যাংকের সাথে তাকে পুনরায় সমঝোতা করতে হয়।প্রথমে মনে হয়েছিল যে সব কিছু হা'রিয়ে গেছে, কিন্তু "পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে টি'কে থাকার জন্য আমাদের কিছু করতে হবে," মাইনা বিবিসিকে বলেন।

বেসরকারি স্কুলগুলো যা কেনিয়ার প্রায় এক পঞ্চমাংশ শিশুদের শিক্ষা দিয়ে থাকে তাদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বেতন। এসব ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে তারা কর্মকর্তাদের বেতন দিতে পারবে না এবং মা'রাত্ম'ক ধরণের অর্থনৈতিক সং'ক'টে পড়বে।অনলাইন শিক্ষণের মাধ্যমে হাতে গো'না কয়েকটি স্কুল তাদের কার্য'ক্রম চা'লিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতে তারা যে আয় করছে তা শিক্ষকদের মৌলিক চাহিদা পূরণেও পর্যাপ্ত নয়, একথা জানায় কেনিয়ার প্রাইভেট স্কুল অ্যাসোসিয়েশন-কেপিএসএ।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী পিটার নডরো বলেন, তিন লাখের মতো স্কুলের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ স্কুলের শিক্ষকদেরকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর সাথে ১৩৩টি স্কুল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

'এতো খা'রাপ অবস্থা কখনো হয়নি'
খা'রাপ অবস্থা থেকে বাঁ'চতে রোকা প্রিপারেটরি নামে মধ্য কেনিয়ার একটি বেসরকারি স্কুল নিজেদের খেলার মাঠকে খামারে পরিণত করেছে।"এর আগে কখনো এতো খা'রাপ অবস্থা তৈরি হয়নি," জেমস কুংগু বিবিসিকে বলেন। যিনি ২৩ বছর আগে ওই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আগে যেখানে খেলার মাঠ ছিল সেখানে এখন সবজি বড় হচ্ছে। তিনি মুরগীও পালছেন।"আমার অবস্থা অন্য স্কুলগুলোর মতোই। আমার গাড়িতে জ্বালানি ভরার মতো সামর্থ্য নেই। এখানে এখন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউ-ই নেই। মা'নসি'কভাবে আমরা অনেক ভে'ঙ্গে পড়েছি," মি. কুংগু বলেন।

মুয়ে ব্রেথ্রেন এবং রোকা- উভয় স্কুলেই মাত্র দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন যারা এখন খামারের কাজে সাহায্য করেন।"এটা ধনীদের জন্য নয়। তবে আমরা মা'নিয়ে নিয়েছি... অন্তত আপনি বির'ক্ত হবেন না, আপনি ব্যস্ত থাকবেন আর এটাই থে'রা'পি হিসেবে কাজ করে," মি. কুংগু বলেন।

শিক্ষকদের করার মতো কিছু নেই
দুটি স্কুল যেখানে আয়ের বিকল্প পথ খুঁ'জে নিয়েছে সেখানে মালিকরা শ'ঙ্কা'য় রয়েছেন তাদের শিক্ষকদের নিয়ে যারা ৫ মাসের বিনা বেতনে ছুটিতে গেছেন।সরকারি স্কুলের কর্মকর্তাদের তু'লনায় এই পরিস্থি'তি ভিন্ন, কারণ তারা বেতন পায়।মাইনা বলেন তাকে তার স্কুলের অনেক শিক্ষক ফোন করে জানতে চেয়েছেন যে তারা কোন কাজে আসতে পারেন কিনা। "কিন্তু দুঃ'খের বিষয় হচ্ছে আমাদের নিজেদের খাওয়ার মতোই পর্যা'প্ত খাবার নেই," তিনি বলেন।

এর কারণে অনেকেই বিক'ল্প পেশা খুঁ'জে নিয়েছেন।
ম্যাকরিন ওটিয়েনো যিনি নাইরোবিতে একটি বেসরকারি স্কুলে ছয় বছর ধ'রে শিক্ষকতা করেছেন, বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় তাকে বাড়ি থেকে উ'চ্ছে'দ করা হয়েছে।আশ্রয় এবং খাবারের জন্য তিনি একটি বাড়িতে শিশু লা'লন-পালনের চাকরি নিয়েছেন।"যখন থেকে কেনিয়াতে প্রথম করোনাভাইরাস শ'না'ক্ত হয়, স্কুলগুলো ব'ন্ধ হয়ে যায়, তখন থেকে আমার করার মতো কিছু ছিল না।"

"আমি আমার সন্তানদের জন্য কিছু একটা করার অনেক চে'ষ্টা করেছি কিন্তু এটা সহজ ছিল না," তিনি বলেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে