সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০, ০৭:৫৯:২৪

প্রণব মুখার্জী আর নেই, ফিরে দেখা ৫ দশকের রাজনৈতিক জীবন

প্রণব মুখার্জী আর নেই, ফিরে দেখা ৫ দশকের রাজনৈতিক জীবন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আর নেই। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দিল্লির বাসভবনে পড়ে মাথায় চো'ট পান তিনি। যার জে'রে ম'স্তি'ষ্কে র'ক্ত জমা'ট বাঁধে। অ'স্ত্রো'প'চার প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসকরা। অ'স্ত্রো'প'চারের আগে জানা যায় তিনি করোনা আ'ক্রা'ন্ত। 

তারপরও অ'স্ত্রপ'চারের সিদ্ধান্ত নেন দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অ'স্ত্রো'প'চারের পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ছিল স'ঙ্ক'টজনক। ভে'ন্টিলে'শনে রাখা হয় তাকে। কিন্তু ক্র'ম'শই তার শারীরিক অবস্থার অ'বন'তি হচ্ছিল। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হা'র মানলেন ভারতের বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবীদ।

১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের বীরভূম জেলার মিরাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রণব মুখার্জি। বাবা কামদাকিঙ্কর ছিলেন স'ক্রি'য় স্বাধীনতা সং'গ্রা'মী। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হন তিনি। শিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হন তিনি। এর পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে কলকাতায় ডাক বিভাগের কারণিক পদে যোগ দেন তিনি। 

১৯৬৩ সালে বিদ্যাসাগর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে কাজ শুরু করেন। 'দেশের ডাক' নামে একটি সংবাদপত্রে কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন তিনি। রাজনীতিতে প্রণববাবুর উত্থান হয়েছিল কার্যত তরতরিয়ে। ১৯৬৯ সালে মেদিনীপুর উপ-নির্বাচনে তার র'ণনীতিতে জয়লাভ করেন নির্দল প্রার্থী। এতেই ইন্দিরা গান্ধীর ন'জরে পড়েন তিনি। প্রণববাবুকে দলে যোগদান করান ইন্দিরা। সেই বছরই রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। 

এরপরও ৪ বার রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন তিনি। সংসদীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়েই ইন্দিরা গান্ধীর বি'শ্ব'স্ত সৈনিকে পরিণত হন প্রণব। যার ফলে ১৯৭৩ সালে মন্ত্রিসভায় জায়গা পান তিনি। তাকে শিল্পোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী করা হয়। জ'রু'রি অবস্থাতেও ইন্দিরার পাশে ছিলেন প্রণব। ১৯৮২ সালে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষ'মতায় ফিরলে অর্থমন্ত্রী হন প্রণববাবু। ১৯৮০ সালে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হন প্রণববাবু।

১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীর হ'ত্যার পর কংগ্রেসে ফের স'ক্রি'য় হন প্রণব। তাকে প্ল্যানিং কমি'শনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও। পরে তার মন্ত্রিসভায় যোগ দেব প্রণব। নরসিংহ রায়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলান তিনি। ১৯৮৫ সালে প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন প্রণববাবু। ২০০০ সালে তাকে ফের এই পদ গ্রহণ করতে হয়। 

২০১০ সাল পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনি। যদিও কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে রাজ্যের রাজনীতিতে উৎসাহ ছিল না প্রণববাবুর। তার মন পড়ে থাকত দিল্লিতে। ২০০৪ সালে মুর্শিদাবাদের জ'ঙ্গিপুর আসন থেকে জিতে প্রথমবার লোকসভায় যান প্রণববাবু। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হবেন না বলে ঘোষণা করলে প্রণববাবুর নাম নিয়ে জো'র জ'ল্প'না শুরু হয়। 

যদিও শেষ মুহূর্তে মনমোহন সিংয়ের নাম ঘোষণা করেন সোনিয়া। ইন্দিরা গান্ধীর হ'ত্যার পর রাজীবের সঙ্গে ম'তানৈ'ক্যের পর তাল কা'টে। কংগ্রেস থেকে ব'হি'ষ্কার করা হয় প্রণবকে। সেই সময় রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। তবে তা তেমন সাফল্যের মুখ দেখেনি। ১৯৮৯ সালে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। কংগ্রেসের সঙ্গে বিলয় ঘ'টা'ন তার দলের।

২০০৭ সাল একই ভাবে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে জো'র আলোচনা হয়। কিন্তু তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অ'ব্যহ'তি দিতে রাজি ছিলেন না মনমোহন সিং। ফলে সে যাত্রায় রাষ্ট্রপতি হওয়া হয়নি তার। মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন প্রণববাবু। অর্থ, প্রতির'ক্ষা ও বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। 

২০১২ সালে স'ক্রি'য় রাজনীতি থেকে অ'বস'র ঘোষণা করেন প্রণব। এর পর কংগ্রেসের তরফে রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার নাম প্রস্তাব করা হয়। ২০১২ সালের ২৫ জুলাই প্রথম বাঙালি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন প্রণববাবু। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৯ সালে তাকে ভারতরত্নে ভূষিত করে ভারত সরকার। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ক্ষ'মতার শীর্ষে থেকেও কখনো দু'র্নী'তি স্প'র্শ করেনি প্রণববাবুকে। 

স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ সময় দিল্লিতে বাঙালির অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। তবে জননেতা হিসাবে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। সংসদীয় রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকলেও প্রথমবার জনগণের ভোটে জিতে সংসদে যাওয়ার স্বাদ তিনি পান ২০০৪ সালে। মাত্র ২ বার জনগণের ভোটে জিতে সংসদে গিয়েছেন তিনি। নি'ন্দু'কে বলে, তার সেই জয়ের পিছনেও অধীর চৌধুরীর ভুমিকা অপরিসীম। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে