শুক্রবার, ০২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১:৪৩

'লড়ো নয়তো জেল' হু'মকি দিয়ে আজারবাইজানে সিরিয়ানদের যু'দ্ধ করতে পাঠাচ্ছে!

'লড়ো নয়তো জেল' হু'মকি দিয়ে আজারবাইজানে সিরিয়ানদের যু'দ্ধ করতে পাঠাচ্ছে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ''আমি জানতাম না আমরা যু'দ্ধ করতে যাচ্ছি'' মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে বিবিসিকে বলছিলেন আবদুল্লা (তার আসল নাম নয়)। তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল ছাড়া ছাড়াভাবে এবং আবদুল্লা খুবই আ'ড়'ষ্ট ছিলেন। তিনি ভ'য় পাচ্ছিলেন একজন সাংবাদিকের সাথে মেসেজ চালাচালি করতে গিয়ে তিনি যদি ধ'রা পড়ে যান।

তিনি বলেন "আমাকে ওরা বলেছিল আজারবাইজানে যেতে হবে এবং সীমান্তের চৌকি পাহারা দিতে হবে। আমি দু'হাজার ডলার পাবো। তখন কোন যুদ্ধ চলছিল না, আমরা কোন সামরিক প্রশিক্ষণও পাইনি।'' এই সিরীয় তরুণ জানতেন না এর এক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে যু'দ্ধে ল'ড়া'ই করতে হবে, যে যু'দ্ধ স'ম্ব'ন্ধে তার কোন ধা'রণা নেই এবং যে দেশে সে কখনও যায়নি।

প্রশিক্ষণ নেই, যু'দ্ধ নেই : উত্তর সিরিয়ার অধিকাংশ বাসিন্দার মতো আবদুল্লার পরিবারও দরিদ্র এবং যু'দ্ধ-ক্লান্ত। সম্প্রতি চালানো এক জরিপে ওই অঞ্চলের উত্তরদাতাদের ৮১% বলেছে তাদের ৫০ ডলারের কম মাসিক বেতনে জীবন চালাতে হয়। কাজেই আবদুল্লাকে গত সপ্তাহে যখন তার ৪০ গুণ বেশি বেতনের প্রস্তাব দিয়ে বলা হলো এর বিনিময়ে তাকে আজারবাইজান সীমান্তে গিয়ে "সেনা চৌকি পাহারা দিতে", সে তা লুফে নিয়েছিল।

"তখন তো কোন যু'দ্ধ চলছিল না। আমাদের উত্তর সিরিয়া থেকে হউর কেলস নামে এক গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে বিরো'ধী সিরিয়ান ন্যাশানাল আর্মি আমাদের সব জিনিসপত্র নিয়ে নিলো, অর্থ, ফোন, জামাকাপড় সব। যাতে আমাদের পরিচয় কেউ ধ'রতে না পারে।" আবদুল্লা কিছু সময় পরে তার ফোনটা উ'দ্ধার করতে পেরেছিলেন।

"এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো দক্ষিণ তুরস্কে এন্টেপ বিমানবন্দরে। সেখান থেকে এক ঘন্টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে আমরা পৌঁছলাম ইস্তানবুল বিমানবন্দরে, সেখান থেকে আজেরি এয়ারলাইন্সের বিমানে আজারবাইজানে পৌঁছে আমাদের সীমান্তে একটা সেনা চৌকিতে নিয়ে যাওয়া হলো। আমাদের কিন্তু কোনরকম সাম'রিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।"

আবদুল্লাকে নিয়ে যাওয়া হলো নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকায়, যে বিত'র্কিত এলাকায় কয়েক দশক ধ'রে সং'ঘা'ত চলছে। পাহাড়ি ছিটমহলটা আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত, কিন্তু এলাকাটা নিয়'ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনীয়রা। দুই দেশ ১৯৮০-এর দশকের শেষে এবং ৯০ দশকের গোড়ায় এই এলাকার দ'খ'ল নিয়ে র'ক্তক্ষ'য়ী যু'দ্ধ করেছে। হাজার হাজার মানুষ সংঘর্ষে প্রা'ণ হা'রিয়েছে, প্রায় দশ লাখ মানুষ গৃহহী'ন হয়েছে।

দুই পক্ষ যদিও একটা যু'দ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তারা কখনই একটা শান্তি চু'ক্তিতে একমত হয়নি। ফলে এলাকায় থেকে থেকেই উত্তে'জনা মাথা চা'ড়া দিয়ে উঠেছে। রোববার, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, আবদুল্লা তখন শিবিরে আছে এক সপ্তাহের মত। তার মত আরও সিরিয়ান ওই শিবিরে ছিল, সবাই সেখানে গেছে অর্থের লোভে, যু'দ্ধ করতে নয়।

হঠাৎ তাদের বলা হলো তাদের খুব দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে হবে। আবদুল্লা খুবই অ'বা'ক হয়েছিলেন। "ওরা আমাদের তুলল সৈন্য বহন করার ট্রাকে। আমরা আজারবাইজানী ইউনিফর্ম পরেছিলাম, আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কালাশনিকফ রাইফেল ছিল।" তখন নাগোর্নো-কারাবাখে আবার তুমুল ল'ড়া'ই শুরু হয়ে গেছে।

"গাড়ি থামল যেখানে, অবাক হয়ে দেখলাম সেটা সম্মুখ র'ণা'ঙ্গ'ন। আমরা যু'দ্ধক্ষেত্রে। কিন্তু আমরা এমনকী জানতাম না শ'ত্রু কোথায়। এমন সময় বো'মাব'র্ষ'ণ শুরু হলো, সবাই ভ'য়ে কাঁ'দতে শুরু করল, বাড়ি ফিরে যেতে চাইল। আমাদের ঠিক পাশেই একটা গো'লা এসে পড়ল। চারজন সিরীয় মা'রা গেল আর তিনজন আহ'ত হলো।"

আবদুল্লা বললেন, ''পরের কয়েকদিনে তিনি দশজন সিরীয়র লা'শ দেখেছেন। উত্তর সিরিয়ার স্থানীয় সূ'ত্রগুলো বিবিসিকে বলেছে যে, আজারবাইজানে সিরীয়দের মা'রা যাবার খবর দেশে তাদের পরিবারের কাছ থেকে প্রথম বাইরে আসতে শুরু করে। "আরও ৭০জন সিরীয় আ'হ'ত হয়," বলেন আবদুল্লা, "এবং তাদের কোনরকম চিকিৎসা সেবাও দেয়া হয়নি।"

বিদেশী যোদ্ধা: আর্মেনিয়া অ'ভিযো'গ করছে চার হাজারের মত সিরীয়কে আজারবাইজানে ল'ড়া'ই করতে পাঠানো হয়েছে। তবে তুরস্ক এই দা'বি জো'রের সাথে প্র'ত্যা'খা'ন করেছে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট, ইলহাম আলিয়েভ, বলেছেন যে আর্মেনিয়ার সাথে তাদের ল'ড়া'ইয়ে তুরস্ক জড়িত নেই। তুরস্ক শুধু তাদের নৈতিক সমর্থন দিচ্ছে।

তুরস্ক আর আজারবাইজানের মধ্যে ঘ'নি'ষ্ঠ রাজনৈতিক, জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে তুরস্কের মধ্যে দিয়ে ও তাদের সহযোগিতায় সিরীয় যো'দ্ধাদের যে এই প্রথমবারের মত তাদের স্বদেশভূমির বাইরে ল'ড়া'ই করতে পাঠানো হয়েছে, তা কিন্তু নয়। গত মে মাসে জাতিসংঘের প্রকা'শিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, উত্তর সিরিয়া থেকে তুরস্কের মধ্যে দিয়ে সিরীয়দের লিবিয়া পাঠানো হয়েছে দেশটির গৃ'হযু'দ্ধে ল'ড়া'ই করার জন্য।

ত্রিপলিতে সিরীয় যো'দ্ধাদের ভিডিও ব্যা'প'ক ক্ষো'ভের জন্ম দেয় এবং তুরস্কের বি'রু'দ্ধে লিবিয়ার গৃহযু'দ্ধে উ'স্কা'নি দেবার অ'ভিযো'গ আনা হয়। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউমান রাইটস নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার পরিচালক রামি আবদুল রহমান বলছেন, আজারবাইজানে যো'দ্ধা পাঠানো নিয়ে সিরিয়ার স'শ'স্ত্র বিরো'ধীদের মধ্যে বিভ'ক্তি তৈরি হয়েছে।

তুর্কমেনী শিকড় আছে এমন কিছু উপদল তুরস্কের অনুরোধে যো'দ্ধা পাঠানোর ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু হমস্ এবং ঘওটাসহ অন্য উপদলগুলো এই সং'ঘা'তে জড়াতে চায় না। তারা এই সং'ঘা'তকে দেখে শিয়া মুসলিম প্রধান আজারবাইজানী ও আর্মেনীয় খ্রিস্টানদের মধ্যকার দ্ব'ন্দ্ব হিসাবে। সিরিয়ার বি'রো'ধী বাহি'নীর যো'দ্ধারা প্রধানত সুন্নি মুসলিম।

সবশেষ যে কথা আবদুল্লা বলেছিলেন সেটা ছিল এর থেকে যেন দ্রুত মুক্তি মেলে তার জন্য দোয়া করতে। "যু'দ্ধ শুরু হবার পর থেকে এখানে বসদের আমরা বলার চেষ্টা করেছি যে, আমরা সিরিয়াতে আমাদের ঘরে ফিরে যেতে চাই। ওরা বলেছেন - না। ওরা আমাদের হু'ম'কি দিয়ে বলেছেন যু'দ্ধক্ষে'ত্রে গিয়ে যু'দ্ধ যদি না করি, দীর্ঘ সময়ের জন্য আমাদের জেলে ভ'রে দেয়া হবে। আমরা সেই অর্থে এখন নির্বা'সিত হয়ে গেছি।"

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে