শুক্রবার, ০২ অক্টোবর, ২০২০, ০৭:২৬:৫৩

এরদোয়ান কেন বারবার নানা মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলছেন?

এরদোয়ান কেন বারবার নানা মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলছেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এরদোয়ান জাতিসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশনে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে ভারতের স'মালো'চনা করার পর দিল্লি ক'ঠো'র ভাষায় তুরস্ককে পা'ল্টা আ'ক্র'মণ করেছে। এরদোয়ান তার ভাষণে বলেছিলেন, "জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবের কাঠামোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে, কিন্তু কাশ্মীরে দিল্লির সিদ্ধান্তই পরি'স্থিতিকে জ'টিল করে তুলেছে।"

জবাবে ভারত বলেছে, এই মন্তব্য ভারতের অভ্য'ন্তরী'ণ বিষয়ে হ'স্তক্ষে'পের সামিল এবং তা 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য'। বছর তিনেক আগে ভারত সফরে আসার ঠিক আগে কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান দিল্লিকে চ'র'ম অস্ব'স্তিতে ফেলেছিলেন। এরপরেও তিনি বারবার কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন, কিন্তু এর মাধ্যমে তুরস্ক ঠিক কী লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছে?

বস্তুত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত বেশ কয়েক বছর ধ'রে যেভাবে বার বার কাশ্মীর প্রশ্নে প্রকাশ্যে ভারতকে আ'ক্র'মণ করছেন ও ভারতের চি'রপ্র'তিদ্ব'ন্দ্বী পাকিস্তানের সুরে সুর মেলাচ্ছেন, তা দিল্লির জন্য হজম করা ক্র'ম'শ ক'ঠি'ন হয়ে পড়ছে। ২০১৭র মে মাসে ভারত সফরে আসার ঠিক আগে তিনি ভারতেরই একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছিলেন, কাশ্মীরে র'ক্তপা'ত ব'ন্ধ করতে 'বহুপাক্ষিক আলোচনা' দরকার আর তুরস্ক সেখানে সামিল হতেও রাজি।

এরপর অতিথির প্রতি কূ'টনৈ'তিক শি'ষ্টাচার দেখিয়ে ভারত বলেছিল, সিমলা চু'ক্তি অনুযায়ী কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি 'দ্বিপাক্ষিক বিষয়'। তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পর পর দুবছর জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলার পর ভারত এবার রীতিমতো ক'ড়া প্রতি'ক্রি'য়া দেখিয়েছে।

জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি ইউ এন তিরুমূর্তি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করে বলেছেন, "অন্য দেশের সার্বভৌ'মত্বকে মর্যাদা দেওয়া তুরস্ককে শিখতে হবে, গভীরভাবে ভাবতে হবে নিজেদের নীতিগুলো নিয়েও!" তবে প্রশ্ন হল, তুরস্ক থেকে বহু দূরের কাশ্মীর নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এভাবে বারবার কেন মুখ খুলছেন?

ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সিনিয়র পলিসি ফেলো আসলি আয়দিনতাসবাস ইস্তাম্বুল থেকে বলছিলেন, "আসলে তুরস্ক একটি গ্লো'বাল ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের উন্নীত করতে চায়। একটি মাঝারি মাপের উদীয়মান শক্তি থেকে একুশ শতকের সবচেয়ে ক্ষ'মতাশালী দেশগুলোর কাতারে তুরস্ককে যাতে নিয়ে যাওয়া যায়, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার লিগ্যাসিকে সেভাবেই রেখে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এবং এখানে তিনি কাশ্মীরকে একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন।"

আয়দিনতাসবাস বলেন, "মধ্যপ্রাচ্য ও সিরিয়ার উত্তেজনা এবং দেশের ভেতরে মানবাধিকার রেকর্ডের কারণে তুরস্কের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত, এখন কাশ্মীরকে আঁকড়ে ধরে তুরস্ক বিশ্বের পাওয়ার পলিটিকে একটি মধ্য'পন্থী শক্তি হিসেবে উঠে আসতে চাইছে।" এ বছরের গোড়ায় ঘ'নি'ষ্ঠ মিত্র দেশ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়েও কাশ্মীরের প্রতি নি:শ'র্ত সমর্থন জানিয়েছিলেন এরদোয়ান।

এমন কী, প্রথম বিশ্বযু'দ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে মিত্রশ'ক্তির যে গ্যালিপোলির যু'দ্ধ হয়েছিল, কাশ্মীরের তুলনা করেছিলেন তার সঙ্গেও। এ কারণেই ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও তুরস্কে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত কানওয়াল সিব্বাল মনে করছেন, বারবার কাশ্মীর ইস্যু উত্থা'পনের মধ্যে এরদোয়ানের 'ইসলা'মিক ও পাকিস্তানপ'ন্থী এজে'ন্ডা'ই আসলে স্পষ্ট।

সিব্বাল বিবিসিকে বলছিলেন, "প্রথমত তিনি এখানে বন্ধু ইমরান খানের অনুরোধে সাড়া দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, মুসলিম উম্মা বা ভ্রাতৃত্বের প্রতি তার অঙ্গীকারও এখানে কাজ করছে। পাকিস্তানে এসে তিনি শুধু কাশ্মীরের মুসলিমদের সম্বোধন করে ভাষণ দিয়েছিলেন, যা থেকে বোঝা যায় অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি তার দরদ কতটা। তা ছাড়া, বিভিন্ন দেশের অভ্য'ন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলা'নো তার অভ্যা'সে পরিণত - ইরাক, সিরিয়া, কাতার, লিবিয়ার মতো অজস্র দেশে সেনাও পাঠিয়েছেন।"

"এটা পুরোটাই তার বৃহত্তর এক পরিক'ল্পনার অংশ - যেখানে তিনি নিজেকে ইসলামী বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে দেখতে চান।" আসলি আয়দিনতাসবাস আবার এ প্রসঙ্গে যোগ করছেন, "নিজের নেইবারহুড বা প্রতিবেশেই তুরস্ক আসলে বি'চ্ছি'ন্ন হয়ে পড়েছে - যে কারণে তারা ভারত ও পাকিস্তানের দিকে হাত বাড়িয়ে কাশ্মীর স'ঙ্ক'টের সমা'ধান করতে চায়।"

"তুরস্ক বিশ্বাস করে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বি'রু'দ্ধে একটি অক্ষ গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে উপসাগরীয় দেশগুলো, সৌদি ও ইসরায়েল। আর যেহেতু আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কও ওয়াশিংটনের বিরাট সমর্থন পাচ্ছে, তাই অন্যান্য মুসলিম দেশের সঙ্গে তারা এখন সম্পর্ক ঘনি'ষ্ঠ করতে আগ্রহী। ফলে এই যে নিজেদের অঞ্চলে প্রান্তিক ও কো'ণঠা'সা হয়ে পড়া, সেটা থেকে বেরোনোর পথ খুঁ'জতেই দক্ষিণ এশিয়ার দিকে ঝুঁ'কছে তারা।"

তুরস্ক ও পাকিস্তান চিরাচরিত মিত্র দেশ হলেও নব্বইয়ের দশকে প্রেসিডেন্ট টুরগুট ওজালের আমল থেকেই তুরস্ক ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছিল। তবে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ থেকে সরে এসে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যেভাবে ইসলামী রাজনীতির দিকে ঝুঁ'কছেন, তাতে এখন আর সেই উদ্যোগের বিশেষ ভবিষ্যৎ দেখছে না ভারত। আর দিল্লি ও আঙ্কারার কূ'টনৈ'তিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের এই ক্র'মাবন'তিতেই ই'ন্ধ'ন জোগাচ্ছে কাশ্মীর। সূত্র : বিবিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে