রবিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪০:১৬

ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করলে কী হতে পারে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করলে কী হতে পারে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৪৬ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। বাইডেন পেয়েছেন ২৮৪টি। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ তথ্য জানিয়েছে। ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির ইঙ্গিত দিয়েছে, তাদের প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করবেন না। 

মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবর ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পরাজয় স্বীকার করবেন না, এবং ''ভোটযুদ্ধের অনেক কিছুই এখনো বাকি আছে''। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করলে কী ঘটতে পারে?

যুক্তরাষ্ট্রের আইন সম্পর্কে যারা জানেন সেই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট যদি নির্বাচনে পরাজিত হন এবং সেই ফলাফল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে, তাহলে তিনি পরাজয় স্বীকার করলেন কি করলেন না - তাতে কিছু এসে যায় না।

নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী পরাজয় স্বীকার করেন জয়ী প্রার্থীকে একটা ফোন করে এবং সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতার মাধ্যমে। নিকট অতীতে হিলারি ক্লিনটন, জন ম্যাককেইন, এ্যাল গোর, জর্জ এইচ বুশ - সবাই তাই করেছেন। অবশ্য হিলারি ক্লিনটন নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে হারার পর তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্টকে প্রথম দিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ফলাফল খুব অল্প ব্যবধানের হলে পরাজয় স্বীকার না করে ঘটনা কোন দিকে যায় তা দেখতে।

তবে এই পরাজয় স্বীকার করা একটা আনুষ্ঠানিকতা বা রাজনৈতিক সৌজন্য মাত্র - এর কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। লিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২১ সালের ২০ শে জানুয়ারি দুপুর ১২টায়। "এর পর তিনি আর প্রেসিডেন্ট থাকবেন না, যদি না তিনি দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে জয়লাভ করেন।"

তিনি বলছেন, আগামী ২০শে জানুয়ারি ট্রাম্পের বর্তমান ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হবে এবং সেসময়ই ২০২০-এর নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী শপথ নেবেন এবং শপথ নেবার সাথে সাথে তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সাধারণত: কংগ্রেস ভবনের সামনে হয়ে থাকে, কিন্তু আইনগতভাবে এরও কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

অধ্যাপক ড. রীয়াজ বলছেন, আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিতে পারেন। পরাজিত প্রার্থী নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকেন, যেমনটা ট্রাম্পের শপথের দিন ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তবে জো বাইডেন যদি জিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে ট্রাম্প জো বাইডেনের শপথে উপস্থিত থাকবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প ভোটের ফলাফলে হেরে গেলেও হয়তো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে আইনি লড়াই চালানোর চেষ্টা করতে পারেন, তবে সেসব মামলায় তেমন কোন কাজ হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যাই করুন - আগামী ২০শে জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগ সহ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নতুন প্রেসিডেন্টের হাতেই চলে আসবে।

বাইডেন নতুন প্রেসিডেন্ট হলে তিনি চাইলে ট্রাম্পকে তখন হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেবার নির্দেশ দিতে পারবেন। উল্লেখ্য, জো বাইডেন নিজেই একবার বলেছিলেন যে তিনি নিশ্চিত করছেন যে ট্রাম্প হেরে যাবার পর হোয়াইট হাউস ছাড়তে না চাইলে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যাবে।

অবশ্য সিক্রেট সার্ভিস ঠিক কী করবে তা এখনো স্পষ্ট নয় তবে তারা এখনই জো বাইডেনকে নিরা'পত্তা দিতে শুরু করেছে। তাহলে কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন নির্বাচনের ফল না মানা এবং এর বিরুদ্ধে যে আইনি লড়াইয়ের কথা বলছেন- সেগুলো কি সবই ফাঁকা বুলি? তার হাতে কি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কোন পথই নেই? বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু জটিল আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে এখনও একটা সংকট তৈরি হবার সম্ভাবনা আছে।

সবশেষ ভোট গণনার খবর অনুযায়ী - ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন জো বাইডেন। তবে সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনের খবর জানানো আর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা এক কথা নয়। তাহলে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে বিজয়ী হলেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হবে কখন ও কীভাবে?

এটা আসলে বেশ দীর্ঘ একটা প্রক্রিয়া। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, "এখন পপুলার ভোটগুলো গোণা হচ্ছে। এই গোণা যখন শেষ হবে তখন তা দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সার্টিফাই করতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা করে থাকেন অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নর বা সেক্রেটারি অব স্টেট।" এরপর ১৪ই ডিসেম্বর পপুলার ভোটের ভিত্তিতে রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা সমবেত হয়ে তাদের ভোটগুলো দেবেন। 

সাধারণত নিয়ম হলো - একেকটি রাজ্যে পপুলার ভোটে যে প্রার্থী বিজয়ী হন তিনিই ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যান। সেকারণেই পপুলার ভোটের ফল জানার সাথে সাথেই সবাই ধরে নেন যে ইলেকটোরাল ভোটের ফল কী হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কি এমন কিছু ঘটতে পারে যাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গিয়েও ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে পারেন?

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলছেন, এ ক্ষেত্রে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে দু দিকে সমস্যা হতে পারে। তিনি বলছেন, এমন হতে পারে যে ভোটগণনায় যে ফল পাওয়া গেল - তা অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষ সার্টিফাই করলেন না। তবে এর সম্ভাবনা কম, এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে রাজ্যগুলোর ফল নিয়ে আপত্তি করছেন - সেগুলোও হয়তো অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ সার্টিফাই করবেন।

দ্বিতীয় সমস্যাটি হতে পারে ইলেকটোরাল কলেজ নিয়ে। অধ্যাপক রীয়াজ বলছেন, ইলেকটোরাল কলেজের সদস্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব হচ্ছে অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনসভার। আইনসভাগুলো চাইলে জো বাইডেনের সমর্থক প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দমত ইলেকটোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে ইলেকটোরাল ভোটের দুটো স্লেট হতে পারে একটা হচ্ছে যা আসলেই পপুলার ভোটের রায় প্রতিফলিত করবে - আরেকটি রাজ্যের আইনসভাগুলোর আলাদা করে পাঠানো রায়।

তারা যে ভোট দেবেন তা আবার গোণা হবে জানুয়ারির ৬ তারিখ কংগ্রেসে। কংগ্রেসের সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি যদি ইলেকটোরাল কলেজের ভোটগুলোর দুটি স্লেটের একটা রেখে অন্যটা ফেলে দেন বা দুটোর কোনটাই গ্রহণ না করেন - তাহলে একটা সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে। সংকটটা হলো- ভাইস প্রেসিডেন্ট দুটো স্লেটই প্রত্যাখ্যান করলে কোন প্রার্থীরই ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট হবে না। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারণ করবে কংগ্রেস।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে