রবিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২০, ০৮:৩৬:১৩

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের সামনে যে বড় ৫ চ্যালেঞ্জ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের সামনে যে বড় ৫ চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। এমন এক সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেন যখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি। তবে, শত শত প্রশ্ন ও পরিকল্পনার মধ্যে বাইডেনের সামনে সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫টি প্রশ্ন, এমনটাই বলছে বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

মার্কিন অর্থনীতিকে সুরক্ষা : গত কয়েক মাস ধরেই দেশটির অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মহামারি মোকাবিলায় বারবার ওয়াশিংটনকে আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানোর আবেদন করে আসছেন। তবে তা আলোর মুখ দেখছে না। নব নির্বাচিত বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাট থেকেও বড় অংকের সহযোগিতার দাবি তোলা হয়েছে তবে এক মতে আসতে পারেননি বর্তমান ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ট্রাম্প।

ভোটের আগে জনসংযোগে বাইডেন বলেছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফ করবেন, সামাজিক সুরক্ষার বলয়ে পেনশন পাওয়াদের অর্থের পরিমাণ বাড়াবেন, ছোট ছোট ব্যবসাতেও অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চান তিনি। আরও কয়েকটি উচ্চাভিলাসী পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণাও রয়েছে তার। যেমন, দূষণমুক্ত পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, অবকাঠামো ও গণ যোগাযোগে ২ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন তিনি। তবে, এসব ব্যয়-বিনিয়োগের পথে শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়ানোর পূর্ব ঘোষণাও রয়েছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের। 

অসমতায় কিভাবে কাজ করবেন: মার্কিন অর্থনীতি গত ৫০ বছরের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বড় ধরনের আয় বৈষম্যের কবলে পড়ে রয়েছে। এর একটা বড় কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৭ সালে করপোরেট করহার কমিয়ে ধনী বা বিত্তশালীদের সুবিধা বাড়িয়ে দেন। তবে, বাইডেন চান এই করহার ২১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৮ শতাংশ করতে। এমন ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। 

এটা হলে আগামী এক দশকে মার্কিন অর্থনীতি ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়তি পাবে। করোনা রোধে বাড়তি ঋণের চাপে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা ইতিবাচক হবে বলে বলা হচ্ছে। তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাও তার জন্য সহজ হবে না, কারণ তার দলের সমর্থকসহ বিরোধী দল রিপাবলিকান ও ব্যবসায়ীরা দাবি করে আসছে উচ্চ করপোরেট করহার অবশ্যই মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু : প্রথম দিকে চালানো নির্বাচনী প্রচারণায় জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাইডেন বেশ হতাশ করেছিলেন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা কর্মীদের। তবে, এই ইস্যুতে ধীরে ধীরে তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে আসতে বর্তমানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় উচ্চাভিলাসী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন। 

নবায়ণযোগ্য জ্বালানি নিয়ে গবেষণা করতে তিনি ব্যয় করতে চান ৪শ' বিলিয়ন ডলার, গাড়ির দূষণ দূর করতেও কঠোর হতে চান, বাণিজ্যিক কল-কারখানার দূষণ থেকেও পরিবেশকে সুরক্ষা দিতে বদ্ধ পরিকর তিনি ২০৩৫ সালের মধ্যে কার্বণ নি:সরণ শেষ করতে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ৫ লাখ চার্জার স্টেশন স্থাপন করতে চান। এখানেও রিপাবলিকানদের পর্যবেক্ষণ, এতে করে পুড়ে যাবে মার্কিন অর্থনীতি। 

ট্রাম্প যে সব কাজ করেছে সেখান থেকে সরে ছোট সংস্করণে এসব কাজ করতে গেলেও তার ওপর কড়া নজর রাখার স্পষ্ট ঈঙ্গিত রয়েছে রিপাবলিকানদের। যেমন, ট্রাম্পের আমলে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে তেল উত্তোলনকে সমর্থন করা হত, এমনকি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তি ঘোষণার তিন বছর পর বিশ্বের প্রথম কোনো দেশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। গেল বুধবার (৪ নভেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৭ সালে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা কার্যকর হয়। তাই অপেক্ষাই করতে হবে দক্ষতা ও কর্ম কৌশলে কোন দিকে যান বাইডেন তা দেখার জন্য।

বাণিজ্য যুদ্ধ : ক্ষমতায় আসার পরপরই বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে বৈরিতা, অর্থ বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সমালোচনা এবং আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা মার্কিন অর্থনীতিকেই একটা আলাদা রূপ দিয়েছিল। বাইডেন বিশ্ব মঞ্চে মিত্র ও নেতা হিসাবে আমেরিকার ভূমিকা পুনরায় জোর দিয়ে পুনর্স্থাপনের বিষয়ে কাজ করবেন এতে তেমন কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু দেখার বিষয় ট্রাম্প আমলের থেকে তিনি কতটা পার্থক্য তৈরি করতে পারেন। 

চীনের প্রসঙ্গে তিনি 'আক্রমণাত্মক' পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। তবে, অনেকেই আশা করেন যে তার বাণিজ্য যুদ্ধ কৌশলে ট্রাম্পের সময় চীনা পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল তা তিনি অপসারণ করবেন। তবে, চীন কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছেই কোন সুবিধা প্রত্যাশা করে না বলে বলা হচ্ছে। বাইডেন, জলবায়ু ও পরিবেশগত বাধ্যবাধকতা পূরণ করে না এমন দেশের ওপর চার্জ (ফি) আরোপে পরিকল্পনার রূপরেখাও তৈরি করেছেন। 

ট্রাম্পের মতো তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে উত্পাদন ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প কানাডা, ইউরোপসহ অনেক মিত্রকেই শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছেন। এক্ষেত্রে অনেক বৈরিতা নিরসনে বেশ সময় লাগবে বলে ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যে কোন চুক্তি করা বেশি কঠিন হবে। এক্ষেত্রে, দ্বাপাক্ষিক বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ে বাইডেনেরও কোন পরিষ্কার ছক কষা নেই। ব্রেক্সিট পরবর্তী বাইডেনের নীতি-কৌশলও তেমন পরিষ্কার নয়। 

টেক জায়ান্ট : মার্কিন টেক জায়ান্টরা বরাবরই দেশে ও বিদেশে বিশেষ সুবিবেচনা পেয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতা ও ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা সুরক্ষায় কঠোর হওয়ার পক্ষে। বাইডেনও মার্কিন টেক জায়ান্টদের এই শক্ত প্লাটফর্মকে ভাঙতে চান। এরই মধ্যে পুলিশকে পর্যাপ্ত তথ্য দিয়ে সহায়তা না করার অভিযোগ তুলে তিনি ফেসবুক এবং অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেছেন। 

বাইডেন আগেই জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন সেই আইনটিকে প্রত্যাহারে সমর্থন করেন যা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত রেখেছে। তবে, বাইডেন ও তার সহ-সভাপতি কমলা হ্যারিস সিলিকন ভ্যালিতে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। এবং তারা এই বিষয়ে অস্বাভাবিকভাবে চুপচাপ ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তারা প্রচারণকালে এমন কোন পদক্ষেপের কথা জানানি। 

হোয়াইট হাউস প্রতিযোগিতামূলক তদন্ত পরিচালনা, গোপনীয়তা এবং অন্যান্য বিধিবিধান প্রয়োগে নিজস্ব শক্তি প্রয়োগ করে এবং যুক্তরাজ্যসহ অন্য দেশের প্রযুক্তি পণ্যভিত্তিক সংস্থা থেকে আরও বেশি কর আদায়ের চেষ্টা চালানোর বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বাইডেন। সুতরাং, কংগ্রেসে রিপাবলিকান উপস্থিতির কারণে ডেমোক্র্যাটদের উদার ঘাঁটিতে পৌঁছে দেয়ার চাপ থাকায়, বাইডেন কি প্রযুক্তি খাতের নিয়ন্ত্রণ করবেন নাকি বিষয়টিতে পিছনে আসন নেবেন তিনি? এটাই এখন দেখার বিষয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে