বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:২৫:০০

পবিত্র কাবা দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনেকেই কেঁদে ফেললেন

 পবিত্র কাবা দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনেকেই কেঁদে ফেললেন

ইসলাম ডেস্কঃ জেদ্দায় অবস্থানরত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সাদ সুলতান কিছুদিন আগে ওমরাহ পালন করেন। নিয়মিত ওমরাহ পালন করলেও করোনার কারণে তাঁকে বিরত থাকতে হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ ওমরাহর অনুমতি দেওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপেই ওমরাহ করেন তিনি। আবেগাপ্লুত হৃদয় নিয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফের সেই অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা জানান গণমাধ্যমকে। বিভিন্ন আরবি গণমাধ্যমে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্ত গদ্যরূপ দিয়েছেন শেখ আহমদ বিন মাসউদ।

আমি প্রথম ওমরাহ করি ২০১৮ সালের ১৭ রমজান। অদম্য এক স্পৃহা নিয়ে আল্লাহর ঘরে এসেছিলাম, তবে আল্লাহর কাছে ঠিক কী চাইতে হয় তা জানতাম না। বরাবরের মতো সে রমজানেও মসজিদুল হারামে উপচে পড়া ভিড় ছিল। মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। হৃদয়ের গভীরে আল্লাহ ও তাঁর ঘরের প্রতি উষ্ণ ভালোবাসার আবেশ অনুভব করেছিলাম। আল-হামদুলিল্লাহ! এরপর আমি ১২ বারের বেশি ওমরাহ করেছি। কভিডের আগে আমি শেষবার ওমরাহ করি ১০ মাস আগে। তখনো আমার অনুভূতি ছিল প্রথমবারের মতো। ভালোবাসার উষ্ণ আবেশ ছিল হৃদয়জুড়ে। তবে আবেগ ও অনুভূতি প্রচণ্ড রকম ঝাঁকুনি দিতে পারেনি তখনো। কারণ আমি জানতাম না কী ঘটতে যাচ্ছে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই মক্কা দ্রুত ‘সংক্রমিত’ এলাকায় পরিণত হয়। ফলে জনসমাগমের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হয়। তখন মনের ভেতর মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। মসজিদুল হারাম ইবাদত ও প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রিয় জায়গাও। আমি চাইলেই মক্কায় যেতে পারব না বা আমাকে যেতে দেওয়া হবে না—ভাবতেই মনটা বিষণ্নতায় ছেয়ে যেত। তখন অনুভব করলাম আমি বায়তুল্লাহর ভালোবাসায় নিমজ্জিত। বায়তুল্লাহ জিয়ারতের তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হলো। আশা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

অবশেষে ওমরাহর অনুমতি প্রদানের ঘোষণা এলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দেরি না করে বায়তুল্লাহ জিয়ারতের জন্য আবেদন করলাম। আল-হামদুলিল্লাহ! অনুমতি পেয়েও গেলাম। আমাদের বলা হয়েছিল, নির্ধারিত প্রবেশপথে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে রিপোর্ট করতে। আমরা ‘ই-পারমিট’ জমা দিলাম এবং বাস আমাদের নিয়ে হারামের উদ্দেশে রওনা হলো।

মক্কা ক্লক টাওয়ারের সামনের কিং আবদুল আজিজ গেট দিয়ে আমাদের নিয়ে আসা হলো। যেখানে আল্লাহর ঘর কাবা তার সব ঐশ্বর্য নিয়ে অবস্থান করছে। পবিত্র কাবা দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনেকেই কেঁদে ফেললেন। আবেগ, অশ্রু ও ভালোবাসার মিশেলে সবাই উচ্চৈঃস্বরে ‘তালবিয়া’ পাঠ করতে লাগল। আগের ওমরাহগুলোর চেয়ে এবারের ওমরাহ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমবারের অনুভব হলো, আমার মুখের ‘তালবিয়া’ হৃদয়ের খুব গভীরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমি মসজিদুল হারামের উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে অভ্যস্ত। তাই কাবার শূন্য প্রাঙ্গণ আমাকে কষ্ট দিচ্ছিল। আবার আল্লাহর অনুগ্রহের কথা ভেবে অন্তর কৃতজ্ঞতায় সিজদাবনত হয়ে যাচ্ছিল। দুই হাত উঁচু করে বললাম, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি মহান, আপনি মহীয়ান। আপনি আমাদের এই ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করুন। 

উদ্বেগ নিয়ে শুরু করলেও এবারের ওমরাহ ছিল খুবই নিরাপদ এবং মানসিক তৃপ্তিদায়ক। এর কারণ সম্ভবত করোনাকালে ওমরাহ পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যা আমাদের ভেতর আল্লাহর ঘর কাবার প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করেছিল বা তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল। অন্যদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষের সব আয়োজন ছিল ইসলামের বিধান ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে রেখে। আমি ওমরাহ করেছি দ্বিতীয় ধাপে। যখন প্রতিদিন ১৫ শ মুসল্লি ওমরাহর অনুমতি পেতেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য ওমরাহর সময় মুসল্লিদের কী কী কাজ করতে হবে—অফিশিয়াল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে জানানো হয়, হারামে পৌঁছানোর পর স্বেচ্ছাসেবীরা আমাদের মেঝের ‘লাল দাগ’ অনুসরণ করে চলতে বলে, তাওয়াফের সময়ও তারা মুসল্লিদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল, প্রতি আড়াই ঘণ্টা পর পর মসজিদুল হারাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছিল। সব মিলিয়ে ওমরাহ ব্যবস্থাপনা দেখে আমি স্বস্তি ও নিরাপদ বোধ করেছি এবং ওমরাহ পালনের পর পেয়েছি অবর্ণনীয় মানসিক তৃপ্তি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে